বাসস দেশ-৩ : চট্টগ্রামে করোনায় পাঁচ জনের মৃত্যু

99

বাসস দেশ-৩
চট্টগ্রাম-করোনা
চট্টগ্রামে করোনায় পাঁচ জনের মৃত্যু
চট্টগ্রাম, ১০ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাকালের সর্বোচ্চ ৫২৩ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এ সময়ে মারা গেছে ৫ করোনা রোগী। সংক্রমণের হার ১৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এদিন জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার নগরীর ছয়টি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের ২ হাজার ৭৯১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নতুন ৫২৩ ভাইরাসবাহকের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৪২৯ জন এবং বারো উপজেলার ৯৪ জন। ফলে জেলায় এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৪৪ হাজার ৯১ জনে পৌঁছালো। সংক্রমিদের মধ্যে শহরের ৩৫ হাজার ৩২৭ জন ও গ্রামের ৮ হাজার ৭৬৪ জন। উপজেলা পর্যায়ে গতকাল শনাক্ত ৯৪ জনের মধ্যে হাটহাজারীতে ২৪ ও পটিয়ায় ২৩ জন, সীতাকু- ও মিরসরাইয়ে ১১ জন করে, বোয়ালখালীতে ৯ জন, রাউজান ও ফটিকছড়িতে ৪ জন করে, চন্দনাইশে ৩ জন, বাঁশখালীতে ২ জন এবং রাঙ্গুনিয়া, সন্দ্বীপ ও আনোয়ারায় ১ জন করে রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় শহরের ৪ ও গ্রামের ১ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। ফলে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা এখন ৪১৪ জন। এর মধ্যে ৩০৩ জন শহরের ও ১১১ জন গ্রামের বাসিন্দা। সুস্থতার ছাড়পত্র দেয়া হয় ৮২ জনকে। মোট আরোগ্য লাভকারীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৭শ’ জনে উন্নীত হলো। এর মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৪ হাজার ৮২০ জন এবং বাসা থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হন ২৯ হাজার ৯৮০ জন। হোম আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে যুক্ত হন ৩০ জন ও ছাড়পত্র নেন ১০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১ হাজার ৩১৪ জন।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে করোনার প্রথম ভাইরাসবাহক শনাক্ত হয় গত বছরের ৩ এপ্রিল। সেই থেকে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত একদিনে শনাক্ত জীবাণুবাহকের সংখ্যা গতকালই সর্বোচ্চ। এর আগে ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে করোনাকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল ৫১৮ জনের নমুনায়। সংক্রমণ হার ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ সময়ে এক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। করোনার প্রথম প্রকোপের সময় গত বছর ৩০ জুন আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪৫ জন পর্যন্ত ওঠেছিল। গতকাল মৃতের সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ জন। এর আগে ৬ রোগীর মৃত্যু হয় ৭ এপ্রিল। চলতি মাসের প্রথম ৯ দিনে ২৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। ২ এপ্রিল ছাড়া প্রতিদিনই এক বা একাধিক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গেল ৯ দিনের সর্বনি¤œ সংক্রমণ ছিল ৩ এপ্রিল, ২৩২ জন। তবে এদিন করোনায় চার জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে, এবারও মাত্র তিনদিনে করোনা রোগী এক হাজার পূর্ণ হয়। এ নিয়ে পরপর চারবার তিনদিনে করোনা রোগীর হাজারপূর্ণ হলো। এর আগে ৪৩ হাজার অতিক্রম করে ৭ এপ্রিল ও ৪২ হাজার অতিক্রম করে ৫ এপ্রিল। ২ এপ্রিল ৪০ থেকে ৪১ হাজারে যেতেও সময় লাগে ৩ দিন। ফলে সর্বশেষ চারবার দ্রুততম সময়ে এক হাজার পূর্ণ হলো। অথচ ৪০ হাজার পূর্ণ হয়েছিল ৩১ মার্চ, পাঁচ দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে। ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছিল ২৬ মার্চ, তাও পাঁচ দিনে। এর আগে ৩৮ হাজার পূর্ণ হয় ২২ মার্চ, ছয় দিনে। ৩৭ হাজার পূর্ণ হয় ১৭ মার্চ, ৭ দিনে। ৩৬ হাজার পূর্ণ হয় ১০ মার্চ, ১০ দিন সময় নিয়ে। এর আগে ১ মার্চ ৩৫ হাজার পূর্ণ হয়। সে সময় এক হাজার পূর্ণ হতে ১৪ দিন লেগেছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩৪ হাজার অতিক্রম করার সময় ১ হাজার পূর্ণ হয় ১৫ দিনে। ৩১ জানুয়ারি ১৬ দিনে ১ হাজার পূর্ণ হয়ে ৩৩ হাজার অতিক্রম করে, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে হাজার পূর্ণ হওয়ার কাল। অথচ তার আগে ৯ দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৩২ হাজার অতিক্রম করে গত ১৫ জানুয়ারি। আট দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়ে যায় ৬ জানুয়ারি। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলায় মোট শনাক্ত রোগী ৩০ হাজার অতিক্রম করে। ২১ ডিসেম্বর মোট আক্রান্ত ২৯ হাজার অতিক্রম করে। জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায় ১৪ ডিসেম্বর।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৭৪৪ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এখানে গ্রামের ১৬ জনসহ ৬৬ জন জীবাণুবাহক চিহ্নিত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৫০৭ নমুনায় ২১ জনের রেজাল্ট পজিটিভ আসে। এরা সবাই শহরের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১৬৮টি নমুনার মধ্যে শহরের ২৯ ও গ্রামের ২৪ টিতে করোনার ভাইরাস পাওয়া যায়। ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ৩৩৬ জনের নমুনায় গ্রামের ৩৫ জনসহ ১৩৮ জন আক্রান্ত শনাক্ত হন।
বেসরকারি তিন ল্যাবরেটরির মধ্যে শেভরনে সবচেয়ে বেশি ৮১৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এখানে গ্রামের ১৪ জনসহ ১৬২ জনের নমুনায় ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়। ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ২১৬টি নমুনার মধ্যে গ্রামের ৫টিসহ ৮৩টিতে জীবাণুর অস্তিত্ব মিলে। চট্টগ্রামের ২টি নমুনা এদিন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হলে পরীক্ষায় দু’টিরই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।
নগরীর বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে এবং মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে কোনো নমুনা পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে বিআইটিআইডি’তে ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, চমেকে ৪ দশমিক ১৪, চবি’তে ৩১ দশমিক ৫৫, সিভাসু’তে ৪১ দশমিক ০৭, শেভরনে ১৯ দশমিক ৮০, ইম্পেরিয়ালে ৩৮ দশমিক ৪১ এবং কক্সবাজার মেডিকেলের সংক্রমণ হার শূন্য শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।
বাসস/জিই/কেএস/১২০০/-আসাচৌ