বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আভাস প্রধানমন্ত্রীর

159

বাসস প্রধানমন্ত্রী-২ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা- বিপিএটিসি ভাষণ
করোনাভাইরাস থেকে মানুষকে বাঁচাতে আরো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আভাস প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে একটানা ক্ষমতায় আছে বলেই দেশের উন্নয়ন কাজগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে এবং ১০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা এবং পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা ২০২১-২০৪১ মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় ’ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এর সুবিধা আজ শহর থেকে প্রান্তিক গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃৃত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা মোতাবেক তাঁর সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে আনতে সক্ষম হয়েছে। দারিদ্রের হার ৪১ ভাগ থেকে ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৫ ভাগে উন্নীত করেছে। তবে, দুর্ভাগ্য করোনাভাইরাস আজকে সারাবিশ^কেই তছনছ করে দিয়েছে। বিশ^ অর্থনীতি আজকে স্থবির হয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রেই একটা বাধা আসছে। এরমধ্যেও তার সরকার বাজেট প্রনয়ণ সহ নানা পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন অব্যাহত রেখেছে।
করোনার কারণে কিছুটা থমকে গেলেও তাঁর সরকার ’৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে এবং সে সময়ে তিনি জীবিত না থাকলেও বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যেতে পারে সেভাবেই সরকার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমার এখন যে বয়স তাতে অবশ্য ২০৪১ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনার বা বেঁচে থাকার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে, আজকে যারা নবীন কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালনে কাজে যোগদান করবেন সেই আপনাদের ওপরই এই দায়িত্ব পড়বে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ২০৪১ এর উন্নত বাংলাদেশ গড়বার সৈনিক হচ্ছে আজকের এই নতুন প্রজন্ম।’
তিনি বলেন,‘আত্মবিশ^াস নিয়ে সততার সঙ্গে নিষ্ঠার সঙ্গে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সবসময় একটা কথা মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি, আমরা বাঙালি এবং যুদ্ধ করে আমরা বিজয় অর্জন করেছি এবং বিশে^র বুকে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গেই আমরা চলবো। ’৭৫ এর পর যে সম্মান হারালেও ২০০৯ এর পর থেকে টানা ১২ বছর দেশ পরিচালনায় থেবে সে সম্মান আমরা আবার ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছি।’
প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও তাঁর সরকার যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ১ হাজার ১০৭.০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বিপিএটিসিতে ‘ভৌত অবকাঠামো পুনঃনির্মাণ ও আনুষাঙ্গিক সুবিধা স¤প্রসারণের মাধ্যমে বিপিএটিসি’র সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ’ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। কাজ সমাপ্ত হলে, সিভিল সার্ভিসের ২ হাজার সদস্যকে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ প্রদান করা যাবে এখানে।
জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই তাঁর সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার পর দেশকে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় জাতির পিতার কয়েকটি বিশেষ উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ১০ মাসের মধ্যে দেশকে একটি বিশ্বসেরা সংবিধান প্রদান, শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের জন্যে ড. কুদরাত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন ও ‘এ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ সার্ভিস রি-অর্গানাইজেশন কমিটি’ গঠনের মাধ্যমে প্রশাসনিক সংস্কারসহ আরও অনেক সাফল্য জাতির পিতা অর্জন করেন এবং ১৯৭৫ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ অতিক্রম করে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন একটি শোষণ-বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে তাঁকে পরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর থেমে যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ঘেরাটপে আটকা পড়ে যায়।
দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কল্যাণে এবং প্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপেরও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারি কর্মচারিদের তাঁর সরকার বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করে দিয়েছে, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাশাপাশি সরকারি সংস্থাগুলোর কাজের মান বাড়ানোর জন্যে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, শুদ্ধাচার কর্মকৌশল এবং উদ্ভাবনী শক্তি যাদের মধ্যে রয়েছে তাদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে কাজের মান বাড়ানোর জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ।
দেশের মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যপক কর্মসূচি তাঁর সরকার বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি মানুষও না খেয়ে থাকবে না, বিনা চিকিৎসায় মরবে না, প্রত্যেকটি মানুষের জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হবে। এজন্য স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এবং দেশের উন্নয়নটাকে একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
তিনি মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দেশের সকল গৃহহীনকে অন্তত একটি ঘর নির্মাণ করে ঠিকানা গড়ে দেওয়ার এবং দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করায় তাঁর সরকারের অঙ্গীকার পুণর্ব্যক্ত করেন।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৫৫০/-আরজি