বাসস দেশ-১৩ : করোনাকালীন স্বাস্থ্যসেবায় তৃণমূল জনগোষ্ঠীর স্বস্তির ঠিকানা কমিউনিটি ক্লিনিক

79

বাসস দেশ-১৩
দশ-উদ্যোগ-স্বাস্থ্য
করোনাকালীন স্বাস্থ্যসেবায় তৃণমূল জনগোষ্ঠীর স্বস্তির ঠিকানা কমিউনিটি ক্লিনিক
ঢাকা, ৭ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : কোভিড ১৯ মহামারীতেও তৃণমূল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। কোভিড ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষার জন্য যখন মানুষ নিজের ঘরে বন্দি থাকছেন, করোনা আক্রান্ত পরিজনদের পর্যন্ত দূরে ঠেলে দিচ্ছেন তখন অসহায় তৃণমূল জনগোষ্ঠীর স্বস্তির ঠিকানা হয়ে উঠেছে কমিউনিটি ক্লিনিক। বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে প্রায় ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অব্যাহত সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন এসব ক্লিনিকে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা।
বর্তমানে ক্লিনিকগুলোতে প্রায়ই এমন কিছু রোগী আসেন যাদের সমস্যার সাথে কোভিড সংক্রমণের উপসর্গের অনেকটা মিল থাকে। কমিউনিটি ক্লিনিকে কোভিড পরীক্ষার সুযোগ নেই। তাই বলে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী সন্দেহে সিএইচসিপিরা কাউকে ফিরিয়ে দেননা।
বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় যখন শহরের সরকারি- বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তীব্র চিকিৎসক সঙ্কট, তখন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে নির্দ্বিধায় চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। করোনা সচেতনতাসহ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামের লোকেরা পাচ্ছেন ত্রিশ ধরনের স্বাস্থ্যসেবা। সারাদেশে যখন লকডাউন তখন চিকিৎসার জন্য জনগণের নিকট বাড়ির কাছের কমিউনিটি ক্লিনিকই ভরসাস্থল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশে করোনা ভ্যাকসিন আসাতে সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। প্রথম দিকে মানুষ টিকা নিতে তেমন আগ্রহ না দেখালেও এখন দেশের মানুষ টিকা গ্রহণের ব্যাপারে অনেক বেশি আগ্রহী হয়েছেন। অনেকে না জেনে কমিউনিটি ক্লিনিকেও আসছেন টিকা নিতে।
সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার কুসম্বি কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার অমৃত প্রমাণিক বাসসকে বলেন, করোনা সংক্রমণের আশংকা সত্বেও শুরু থেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তৃণমূল জনসাধারণকে নিয়মিত সেবা প্রদান করছি। প্রতিদিন যেসব রোগী সেবা নিতে আসছেন তারা অধিকাংশই মৌসুমি জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যাথায় আক্রান্ত। করোনা সংক্রমণের উপসর্গের সাথে অনেকটা মিল থাকায় কোন করোনা আক্রান্ত রোগী হলেও তা নির্ধারণ করা কঠিন কাজ। ক্লিনিকে আগত রোগীদের কাছ থেকে তাদের শারীরিক সমস্যার তথ্য জেনে সিএমইডি এজেন্ট অ্যাপস ব্যাবহার করে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা আছে কিনা তা নির্ধারণ করে তাদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়ে থাকি।
তিনি জানান, সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে যতটা সম্ভব নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সেবা কাজ চালাচ্ছেন তারা। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রোগীও বেড়েছে। নিজেদের সুরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ থাকলেও দেশের সংকটময় মুহুর্তে মানুষের সেবা দিতে পেরে খুশি বলেও জানান তিনি।
কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা গৃহবধূ রেবেকা খাতুন বলেন, করোনার কারণে হাসপাতালে যেতে পারি না। ঠান্ডা গরমের জন্য জ্বর মাথা ব্যাথা নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে আসছি।এখানে ডাক্তার দেখালাম। প্রেশার মাপল, ওজন মাপল। পরে ওষুধ দিল, চলে আসলাম। গ্রামের অনেকেই ওখানে যায়।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, করোনাকালে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নিরাপত্তা সামগ্রী পিপিই, মাস্ক, স্যানিটাইজার, হ্যান্ড গ্লাভস দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশমতে সপ্তাহে ৫দিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন।
এছাড়া একজন স্বাস্থ্য সহকারী ও মাঠ পর্যায়ে কাজের জন্য নিযুক্ত ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার অ্যাসিসট্যান্ট সপ্তাহে ৩ দিন করে ক্লিনিকগুলোতে সেবা দিচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি শুরুর প্রথম দিকে রোগী কমলেও মে ২০২০ থেকে শুরু করে ফেব্রুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কারণ এখন সাধারণ রোগীরা সরকারি হাতপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছে। তাই সাধারণ কোন অসুখ হলে, তারা কমিউনিটি ক্লিনিকে এসে সেবা নিচ্ছেন।
কমিউনিটি বেইজ হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এর লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. সহদেব চন্দ্র রাজবংশী জানান, করোনা মহামারির শুরু থেকেই সাহসিকতার সঙ্গে সিএইচসিপিরা গ্রামীণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনাকালে ক্লিনিকগুলোতে রোগীর চাপও বেড়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ক্লিনিক কর্মীদের সেবা প্রদানের প্রক্রিয়ার গাইডলাইন করোনার শুরুতেই দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য কোভিড-১৯ সংক্রমিত প্রান্তিক জনগণের নমুনা সংগ্রহের জন্য তাদের এক দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ডিজিটাল স্ক্রিনিং পদ্ধতিতে সম্ভাব্য রোগী চিহ্নিতকরণ এবং ডাটা সংগ্রহের মাধ্যমেও সিএইচসিপি-রা করোনা মোকাবেলায় মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থানার কুসম্বি কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা আরতি সরকার বলেন, করোনার জন্য কোথাও যেতে পারিনা। কিন্তু স্বাভাবিক রোগ তো আর আমাদের মুক্তি দিচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে আসি। এখানে ডাক্তাররা আগের থেকে ভাল সেবা দিচ্ছে। বিনামূল্যে ওষুধ দিচ্ছে।
করোনার সময়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে বলা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে অনেক জায়গা থেকে রোগী আসে। কে কোথা থেকে আসবে, তার শরীরে করোনা ভাইরাস আছে কি না তাতো আর জানতে পারবো না। তাই বাড়ির কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকেই সেবা নিতে এসেছি।
বর্তমানে দেশে ১৩ হাজার ৮৬১টি কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও আরও ১ হাজার ২৯টি ক্লিনিক নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। এখানে ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পরিবার-পরিকল্পনা ও পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ দেয়া হয়। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার টঙ্গীপাড়া থানাধীন পাটগাঁতী ইউনিয়নের ঘিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে এই কার্যক্রমের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেখতে দেখতে ২২ বছরে পা রাখা এ ক্লিনিক বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেবার একটি অপরিহার্য্য অংশে পরিণত হয়েছে।
বাসস/বিকেডি/১৪১৫/এমজে