চট্টগ্রামে কয়েকটি করোনা আইসোলেশন সেন্টার চালু

251

চট্টগ্রাম, ৬ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে নগরীতে বেসরকারি উদ্যোগে আবার চালু হয়েছে কয়েকটি আইসোলেশন সেন্টার। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আজ ৫০ শয্যার কেন্দ্র চালুর মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম বাসস’কে বলেন, ‘করোনাভাইরাসে সংক্রমিতদের চিকিৎসার জন্য লালদিঘী পাড়স্থ চসিক পাবলিক লাইব্রেরি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের দুইটি ফ্লোরে ৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। খাবার, ওষুধপত্র সবকিছু কর্পোরেশন থেকে সরবরাহ করা হবে। সিলিন্ডারের মাধ্যমে রোগীকে অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। একটি এম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হবে। কোনো রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে আরো উন্নত চিকিৎসার জন্যে।’
২০২০ সালে করোনার প্রথম প্রকোপের সময় শুরুর দিকের আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠার পর বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু আইসোলেশন সেন্টার ও ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে উঠেছিল। এবার তাদের কয়েকজন পুনরায় আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তুলবেন বলে জানিয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া গত বছর প্রথম সীতাকু- সলিমপুরে চালু করেছিলেন ফিল্ড হাসপাতাল। এবার বড় পরিসরে ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে না তুললেও করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে তিনি ইতিমধ্যে গঠন করেছেন হোম হসপিটাল টিম। পুরুষ ও মহিলা চিকিৎসক, নার্স-ব্রাদার ও স্বাস্থ্য সহকারীর সমন্বয়ে গড়ে তোলা এ টিমটি বাসায় গিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।
ডা. বিদ্যুৎ বড়–য়া বাসস’কে বলেন, ‘গত ১ ডিসেম্বর থেকে আমাদের হোম হসপিটাল টিমের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে আড়াইশ’র বেশি করোনা রোগীকে আমরা সেবা দিয়েছি। আসলে আইসিইউ সাপোর্টের আগ পর্যন্ত একজন কোভিড পেশেন্টের যা দরকার আমাদের টিমের সে চিকিৎসা সেবা দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কিছু বিত্তশালী মানুষ মৃদু উপসর্গ থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন। এতে তীব্র উপসর্গের মধ্যবিত্ত ও নি¤œ মধ্যবিত্তের হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ কমে আসছে।’ তিনি এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হোসেন আহম্মদের নেতৃত্বে পতেঙ্গায় একটি স্কুলে স্থাপিত হয় পতেঙ্গা-ইপিজেড ফিল্ড হাসপাতাল। ডা. হোসেন আহম্মদ এবারও করোনার চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র চালু করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গতবার আমরা বহু রোগীকে সেবা দিয়েছি। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে আবার ৫০ শয্যার ফিল্ড হসপিটাল চালু করব। ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে সকল প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত আছে। ৬ মাস চালানোর মতো ফান্ডও আছে। কারো কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে না।’
গত বছর হালিশহরে প্রিন্স অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টারে বেশ কয়েকজন তরুণ উদ্যোক্তা চালু করেছিলেন ১শ’ শয্যার করোনা আইসোলেশন সেন্টার। এবার এখনও তাদের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তবে সেন্টারটির মুখপাত্র জিনাত সোহানা চৌধুরী বাসস’কে বলেন, ‘সপ্তাহ-দশ দিনের মধ্যে আমরা আমাদের কেন্দ্র চালু করার চেষ্টা করছি। উপযুক্ত কোনো স্থান পাওয়া গেলে সুবিধা হবে। আমাদের হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম আছে। এছাড়া, স্বেচ্ছাসেবক টিমও প্রস্তুত আছে। হালিশহরস্থ প্রিন্স অব চিটাগং কমিউনিটি সেন্টার এবার পাওয়া যাচ্ছে না। প্রিন্স অব ডায়মন্ড কমিউনিটি সেন্টারে আইসোলেশন সেন্টার করার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু একটু দূরে হয়ে যাওয়ায় আমরা সেখানে করতে চাইছি না।’
তিনি বলেন, ‘১শ’ শয্যার হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল অব্যবহৃত অবস্থায় আছে। এখানে আমাদের কার্যক্রম শুরু করার সুযোগ দেয়া হলে আমরা খুব কম সময়ের মধ্যে চিকিৎসা সেবা চালু করতে পারবো।’
উল্লেখ্য, গত বছর আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে চসিকের উদ্যোগে ২৫০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার চালু করেছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। রেজাউল করিম চৌধুরী মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে গত বছর বাকলিয়া তুলাতলীর ওয়েডিং পার্ক কমিউনিটি সেন্টারে ৭০ শয্যার মুক্তি আইসোলেশন সেন্টার চালু করেন। পরে করোনার প্রকোপ কমে এলে কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয়া হয়। পতেঙ্গায় চালু হয়েছিল ৬০ শয্যার বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতাল।