বাসস দেশ-১৮ : মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ : নড়াইলে ট্রেজারি ভেঙ্গে অস্ত্র নেয় মুক্তিযোদ্ধারা

83

বাসস দেশ-১৮
প্রথম-প্রতিরোধ-নড়াইল
মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ : নড়াইলে ট্রেজারি ভেঙ্গে অস্ত্র নেয় মুক্তিযোদ্ধারা
নড়াইল, ৫ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে স্বাধীনতার যে আহ্বান ছিল নড়াইলের মুক্তিপাগল জনতা তা থেকে পিছপা হয়নি। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে পাক বাহিনীকে মোকাবেলার চেষ্টা করে মুক্তিযোদ্ধরা গড়ে তোলেন প্রতিরোধ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান জিন্নাহ বলেন, ২৫শে মার্চ মধ্যরাত হতে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় থেকেই নড়াইলের আপামর জনসাধারণ স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে সংঘটিত হতে থাকে। ২৬ মার্চ ভোরে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এর সহযোগিতায় স্থানীয় ব্যক্তি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ এবং অন্যান্যদের সহায়তায় নড়াইল ট্রেজারি ভেঙ্গে অস্ত্র বের করা হয়। বিপুল উৎসাহ নিয়ে লে. অব. মতিউর রহমানের নেতৃত্বে বড়দিয়া এবং নলদীতে প্রশিক্ষণ শিবির খোলা হয়। ওই সময় নড়াইলের এসডিও’র বাসভবনকে স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধের হাই কমান্ডের সদর দপ্তর করা হয়। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে তৎকালীন নড়াইলের এসডিও কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, এমএনএ খন্দকার আব্দুল হাফিজ, এমপিএ শহীদ আলী খান, আওয়ামী লীগ নেতা এখলাছ উদ্দিন, বিএম মতিয়ার রহমান লোহাগড়া হাই স্কুলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও নড়াইলের সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধাদের এক করে বিশাল বাহিনী যশোর অভিমুখে পাঠিয়ে দেন। যশোর জেলার ঝুমঝুমপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে শহীদ হন হাবিলদার বছির আহমেদসহ অনেকে।
যশোর থেকে নড়াইলের একমাত্র প্রবেশ সড়ক পথে মুক্তিকামি মানুষেরা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। এসময় তারা নড়াইলের সিতারামপুর সেতু, তুলারামপুর সেতু এবং যশোরের দাইতলা এলাকায় প্রতিরোধের চেষ্টা চালান। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ভারি আগ্নেয়অস্ত্রের কাছে সহজেই প্রতিরোধ ভেঙ্গে নড়াইলে ঢুকে পড়ে পাক বাহিনী। ৪ এপ্রিল চারুবালা মজুমদার নামে একজনকে গুলি করে হত্যা করে পাক বাহিনী। ৬ এপ্রিল সকালে পাক হানাদার বাহিনী দু’টি জেট বিমান হতে নড়াইল শহরের ওপর ব্যাপকভাবে মেশিনগানের গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে প্রচুর ক্ষতি সাধন করলে নড়াইল শহর জনশুন্য হয়ে পড়ে। ১৩ এপ্রিল হানাদার বাহিনীর একটি দল নড়াইল-যশোর সড়কের প্রতিরোধ ভেঙ্গে নড়াইলে প্রবেশ করে ডাকবাংলায় অবস্থান করে। পাকবাহিনী তাদের স্থানীয় দোসরদের নিয়ে রাজাকার-আলবদর কমিটি গঠন করে।
এদিন তারা নড়াইল শহরের চৌরাস্তায় রেস্টুরেন্ট মালিক মন্টুকে গুলি করে আহত করে এবং হরিপদ সরদার, ভাটিয়া গ্রামের কালু বোস, সরসপুর গ্রামের প্রফুল্য মিত্রকে ধরে নিয়ে দাইতলা পুলের নিকট গুলি করে ফেলে রেখে চলে যায়। এর পর নড়াইলের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে বলেও জানান তিনি।
বাসস/এনডি/বি.প্র/সংবাদদাতা/১৬১৫/কেজিএ