বাসস বিদেশ-৫ : আইএস মুক্ত মসুলে জীবন ধারণের ভিন্ন লড়াই এক নারীর

161

বাসস বিদেশ-৫
ইরাক-শিশু
আইএস মুক্ত মসুলে জীবন ধারণের ভিন্ন লড়াই এক নারীর
মসুল (ইরাক), ২৬ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : মসুল নগরী এক বছর আগেই ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কবল থেকে মুক্ত হয়েছে। কিন্তু তাদের চালানো অত্যাচার উৎপীড়নের শিকার হওয়া পরিবারগুলোকে এখনও প্রবলভাবে তার জের টানতে হচ্ছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
সানা ইব্রাহীম তেমনই একজন নারী। বয়স তার ৬১ বছর। কিন্তু তাকে ২২ নাতি নাতনীর মুখের আহার যোগাড়ের জন্য প্রতিদিনই কঠোর সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
শহরটি জিহাদিদের দখলে থাকাকালে এই নারী তার পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হারিয়েছেন। কিন্তু কখনোই হার মানেননি। পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন।
কাল লম্বা পোশাক পরা এই নারীকে ঘিরে রয়েছে ছোট ছোট শিশুরা। মেয়েদের চুল সুন্দর বাঁধা আর ছেলেরা রঙিন টিশার্ট পরা। সবচে ছোটটির বয়স মাত্র দুই বছর।
এদিকে তার স্বামী মোয়াফাক হামিদের (৭১) প্রতিও তাকে লক্ষ্য রাখতে হয়। এর বাইরে বাড়ির ৩২ সদস্যের সকলের জন্য আহার যোগাড় তার জন্যে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ।
মসুল তিন বছর ধরে জিহাদিদের দখলে ছিল। এ সময়ে তার দুই ছেলে ফারেস ও গাজওয়ান ও মেয়ের জামাই মাসুদকে অপহরণ করে আইএস।
এরা সকলেই একটি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। আইএস এই বাহিনীকে বিরোধী মনে করে।
সানা বলেন, আইএস সম্ভবত তার প্রিয়জনদের হত্যা করেছে। তিনি তাদের লাশ পাবার অপেক্ষায় আছেন।
আইএস এর দখলদারিত্বের সময়ে তারা কয়েকশ সরকারি সৈন্য ও পুলিশ সদস্যদের ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। এরপর তাদের লাশ নগরীর উত্তরাঞ্চলে গণকবরে চাপা দিয়েছে।
২০১৬ সালে ইরাকী বাহিনী মসুল পুনরুদ্ধারে কয়েকমাস ধরে জিহাদীদের সঙ্গে লড়াই করে। এরপর ২০১৭ সালের জুলাই মাসে সরকারি বাহিনী নগরী থেকে জিহাদিদের উৎখাতে সমর্থ হয়।
সানার অপর দুই সন্তান যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তার ২০ বছর বয়সী ছেলে ইউসেফ ও তার মেয়ে নূর (১৮) যুদ্ধে নিহত হয়েছে। ওল্ড সিটি থেকে পালানোর সময় তারা প্রাণ হারায়।
মসুলের ঐতিহাসিক পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা যুদ্ধে প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে।
সানার বাড়ি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর তাকে ও তার পরিবারকে টিকে থাকার জন্য অন্যত্র চলে যেতে হয়েছে।
তারা তখন নগরীর পূর্ব পাশে চলে আসে। মাসিক পাঁচ লাখ দিনার ভাড়ায় তারা ১৫০ বর্গমিটারের একটি বাসায় ওঠে।
বেঁচে থাকা সানার অপর চার সন্তান বেকার। তাই এই বাসা ভাড়া যোগাড় করতে সানাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা মসুলে দুর্গতদের জন্য সহায়তা দানকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই দাতাদের সাহায্য ছাড়া আমাদের ক্ষুধা ও অসুখে মারা যেতে হতো।’
এমন একজন দাতা এএফপি’র প্রতিনিধির নজরে পড়েন। তিনি একটি দাতব্য সংস্থায় খাবার ও পোশাক ভর্তি ব্যাগ নিয়ে আসেন।
এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ওই নারী তার ছেলের বেতনের একটি অংশ সানার পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় দান করেন।
ছোট রান্নাঘরে সানা ও তার ছোট ছেলের স্ত্রী শিশুদের জন্য রান্না করছিলেন।
ব্যস্ততার মধ্যেও সানা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন।
তিনি তার নাতি নাতনীদের উচ্চ শিক্ষিত হয়ে ভাল চাকরী পাবার আশা করেন।
বাসস/কেএআর/১৩৪৫/জুনা