বাসস দেশ-৯ : চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়ে গেল

89

বাসস দেশ-৯
চট্টগ্রাম-কোভিড
চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়ে গেল
চট্টগ্রাম, ৩ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ৪৬৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এটি এ যাবতকালে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংক্রমণ। সংক্রমণের হার ১৮ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত কারো মৃত্যু হয়নি। একইসাথে করোনায় এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৪১ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গতকাল শুক্রবার নগরীর সাতটি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ২ হাজার ৫২৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন শনাক্ত ৪৬৭ জনের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৩৮৫ জন এবং এগারো উপজেলার ৮২ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে হাটহাজারীতে ২৪ জন, রাউজানে ১৩ জন, ফটিকছড়িতে ৯ জন, পটিয়ায় ৮ জন, সীতাকু-ে ৭ জন, মিরসরাই ও বোয়ালখালীতে ৬ জন করে, সাতকানিয়ায় ৪ জন, বাঁশখালীতে ৩ জন এবং লোহাগাড়া ও আনোয়ারায় ১ জন করে রয়েছেন। জেলায় মোট সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ৪১ হাজার ২৬৮ জনে দাঁড়ালো। এর মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৩২ হাজার ৮৮৩ জন ও গ্রামের ৮ হাজার ৩৮৫ জন।
গতকাল চট্টগ্রামে করোনায় কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি। ফলে মৃতের সংখ্যা ৩৮৯ জনই রয়েছে। এতে শহরের বাসিন্দা ২৮৫ জন ও গ্রামের ১০৪ জন। সুস্থতার ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬৩ জন। মোট আরোগ্য লাভকারীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ২০০ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ৪ হাজার ৬৩৫ জন এবং হোম আইসোলেশেনে থেকে আরোগ্য লাভ করেন ২৯ হাজার ৫৬৫ জন। হোম আইসোলেশনে নতুন যুক্ত হন ৩০ জন ও ছাড়পত্র নেন ১০ জন। বর্তমানে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ১ হাজার ২১৯ জন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ শুরুর পর চট্টগ্রামে গতকাল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা একদিনের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। চট্টগ্রামে করোনাকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ১ এপ্রিল, এ দিন আক্রান্ত হয় ৫১৮ জন। সেদিন নমুনা পরীক্ষা করা হয় ২ হাজার ৫৩৫ জনের। সংক্রমণ হার ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ সময়ে এক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। এর আগে গত বছর ৩০ জুন ৪৪৫ জন আক্রান্ত ধরা পড়েছিল। চট্টগ্রামে প্রথম করোনার ভাইরাসবাহক শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল।
এদিকে, এবার মাত্র তিনদিনে করোনা রোগী এক হাজার পূর্ণ হয়। এটি ছিল দ্রুততম সময়ে এক হাজার পূর্ণ হওয়ার রেকর্ড। ৪০ হাজার পূর্ণ হয়েছিল ৩১ মার্চ। সেদিন ২৮৭ জনের সংক্রমণ শনাক্ত এবং ২ রোগীর মৃত্যু হয়। সেবার এক হাজার পূর্ণ হতে সময় লাগে পাঁচ দিন। ৩৯ হাজার ছাড়িয়েছিল ২৬ মার্চ। এর আগে ৩৮ হাজার পূর্ণ হয় ২২ মার্চ, ছয় দিনে। ৩৭ হাজার পূর্ণ হয় ১৭ মার্চ, ৭ দিনে। ৩৬ হাজার পূর্ণ হয় ১০ মার্চ, ১০ দিন সময় নিয়ে। এর আগে ১ মার্চ ৩৫ হাজার পূর্ণ হয়। সে সময় এক হাজার পূর্ণ হতে ১৪ দিন লেগেছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩৪ হাজার অতিক্রম করার সময় ১ হাজার পূর্ণ হয় ১৫ দিনে। ৩১ জানুয়ারি ১৬ দিনে ১ হাজার পূর্ণ হয়ে ৩৩ হাজার অতিক্রম করে, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে হাজার পূর্ণ হওয়ার কাল। অথচ তার আগে ৯ দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৩২ হাজার অতিক্রম করে গত ১৫ জানুয়ারি। আট দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়ে যায় ৬ জানুয়ারি। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলায় মোট শনাক্ত রোগী ৩০ হাজার অতিক্রম করে। ২১ ডিসেম্বর মোট আক্রান্ত ২৯ হাজার অতিক্রম করে। জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায় ১৪ ডিসেম্বর।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৬৭৬ টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে। এখানে গ্রামের ৭ টিসহ ৮৩ টির পজিটিভ রেজাল্ট আসে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ৫১৭ জনের নমুনায় ১৭ জনের দেহে করোনাভাইরাস থাকার প্রমাণ মেলে। এরা সবাই শহরের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ল্যাবে ১১৮ জনের মধ্যে শহরের ৩০ এবং গ্রামের ২৮ জন আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হন। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ২৯৭ টি নমুনার মধ্যে গ্রামের ১৭ টিসহ ৯৭ টিতে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
নগরীর বেসরকারি তিন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির মধ্যে শেভরনে ৬২৬ টি নমুনা পরীক্ষা করে গ্রামের ১৯ টিসহ ১১৩ টি, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ১৮২ টিতে গ্রামের ৬ টিসহ ৮২ টি এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ৩২ টি নমুনায় গ্রামের ৫ টিসহ ১৭ টিতে ভাইরাস থাকার প্রমাণ মেলে। এদিন চট্টগ্রামের ৭৫ টি নমুনা কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় সবগুলোরই রেজাল্ট নেগেটিভ আসে।
নগরীর একমাত্র বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে (আরটিআরএল) কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে বিআইটিআইডি’তে ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ, চমেকে ৩ দশমিক ২৯, চবি’তে ৪৯ দশমিক ১৫, সিভাসু’তে ৩২ দশমিক ৬৬, শেভরনে ১৮ দশমিক ০৫, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৪৫ দশমিক ০৫, মা ও শিশু হাসপাতালে ৫৩ দশমিক ১২ শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।
বাসস/জিই/কেএস/১২০৫/এমএবি