বাসস দেশ-৫ : চট্টগ্রামে করোনাকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত

133

বাসস দেশ-৫
চট্টগ্রাম-কোভিড
চট্টগ্রামে করোনাকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত
চট্টগ্রাম, ২ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : চট্টগ্রামে করোনাকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। করোনার প্রকোপ শুরুর পর গত বছর ৩০ জুন ৪৪৫ জন আক্রান্ত ধরা পড়েছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সব ছাপিয়ে ৫১৮ জনের নমুনায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি চিহ্নিত হয়। সংক্রমণ হার ২০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ সময়ে এক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে প্রথম করোনার ভাইরাসবাহক শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল। সেই থেকে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত একদিনে শনাক্ত জীবাণুবাহকের সংখ্যা গতকালই সর্বোচ্চ। এর আগে চট্টগ্রামে করোনাকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৩০ জুন ৪৪৫ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে বলা হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর সাতটি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের ২ হাজার ৫৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নতুন শনাক্ত ৫১৮ জনের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৪৩৬ জন এবং তেরো উপজেলার ৮২ জন। ফলে জেলায় এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৪০ হাজার ৮০১ জনে। সংক্রমিতদের মধ্যে শহরের ৩২ হাজার ৪৯৮ জন ও গ্রামের ৮ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলা পর্যায়ে গতকাল শনাক্ত ৮২ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ হাটহাজারীতে ২৯ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ১০ জন, রাউজানে ৯ জন, আনোয়ারায় ৮ জন, ফটিকছড়িতে ৭ জন, সাতকানিয়ায় ৫ জন, পটিয়া ও লোহাগাড়ায় ৩ জন করে, বোয়ালখালী, সীতাকু- ও মিরসরাইয়ে ২ জন করে এবং বাঁশখালী ও সন্দ্বীপে ১ জন করে রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজনের মৃত্যু হয়। ফলে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা এখন ৩৮৯ জন। এর মধ্যে ২৮৫ জন শহরের ও ১০৪ জন গ্রামের। সুস্থতার ছাড়পত্র দেয়া হয় ৫৮ জনকে। মোট আরোগ্যলাভকারীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ১৩৭ জনে উন্নীত হলো। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ৬২২ জন ও বাসায় আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসায় সুস্থ হন ২৮ হাজার ৫১৫ জন। হোম আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে যুক্ত হন ৪০ জন ও ছাড়পত্র নেন ৩০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১ হাজার ১৯৯ জন।
নগরীর বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. আবদুর রব আজ বাসস’কে বলেন, ‘গতকাল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। এটা আরো বাড়বে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে যেতে পারে। তাছাড়া, বর্তমানে ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়ে দ্রুত সংক্রমণশীল ও আগ্রাসী রূপ নিয়েছে। এখন এক পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে সবাই আক্রান্ত হচ্ছে। আগের প্রকোপের সময় আক্রান্ত ব্যক্তি আইসোলেশনে থাকলে পরিবারের অন্যরা রক্ষা পেয়েছেন। এমনকি, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বজনের এটেন্ডেন্টও আক্রান্ত না হওয়ার বহু নজির আছে।’
ডা. রব আরো বলেন, ‘এবার আরো আতঙ্কের তথ্য হলো, কম বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছে এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি নেয়ার মতো বেড থাকবে না। দ্রুত আসন বাড়ানোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।’
ডা. রব বলেন, ‘চলমান মহামারি নিয়ন্ত্রণের অধিকাংশ কৌশলই সাধারণ মানুষের হাতে। তারা যদি মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সংক্রমণ হার কমবে। সরকারের পক্ষ থেকে কড়াকড়ি আরোপের চেয়ে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত স্বাস্থ্যবিধি পালন অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে। করোনার বিস্তার ঠেকানোর ক্ষেত্রে সচেতনতার চেয়ে ভালো কোনো বিকল্প নেই।’
গতকালের ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ৮৪৬ জনের নমুনা পরীক্ষা হয় ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে। এখানে গ্রামের ৪ জনসহ ৭৭ জন জীবাণুবাহক চিহ্নিত হন। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ৫৬৫ জনের নমুনায় গ্রামের ১৭ জনসহ ১৩৫ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৪৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩০ জন জীবাণুবাহক চিহ্নিত হন। এরা সবাই শহরের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ২৪৯টি নমুনার মধ্যে শহরের ৫৭ ও গ্রামের ৪৮টিতে করোনার ভাইরাস পাওয়া যায়। নগরীর বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা হলে গ্রামের ১ জনসহ ৩০ জনের নমুনায় ভাইরাসের উপস্থিতি মিলে।
বেসরকারি তিন ল্যাবরেটরির মধ্যে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৩০৯ এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ইম্পেরিয়ালে গ্রামের ১১ জনসহ ১২৮ এবং মা ও শিশুতে গ্রামের ১ জনসহ ১৩ জনের শরীরে ভাইরাস থাকার প্রমাণ মিলে।
চট্টগ্রামের ১৮টি নমুনা এদিন কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় সবক’টিরই রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। অপর বেসরকারি ল্যাবরেটরি শেভরনে এদিন কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে বিআইটিআইডি’তে ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, সিভাসু’তে ২৩ দশমিক ৮৯, চমেকে ৬ দশমিক ৪১, চবি’তে ৪২ দশমিক ১৭,আরটিআরএলে ৬৯ দশমিক ৭৭, ইম্পেরিয়ালে ৪১ দশমিক ৪১, মা ও শিশুতে ৩৫ দশমিক ১৩ এবং কক্সবাজার মেডিকেলে শূন্য শতাংশ সংক্রমণ হার নির্ণিত হয়।
বাসস/জিই/কেএস/১৪৩০/-আসাচৌ