বাসস দেশ-২৪ : দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে সারাদেশে অভিযান জোরদার করবে বন বিভাগ

105

বাসস দেশ-২৪
উদ্যোগ দশ-বনভূমি-উদ্ধার
দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে সারাদেশে অভিযান জোরদার করবে বন বিভাগ
।। রফিকুল ইসলাম ।।
ঢাকা, ১ এপ্রিল, ২০২১ (বাসস) : বন বিভাগ দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারের জন্য সারাদেশে উচ্ছেদ অভিযান আরো জোরদার করবে। সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক আরিফুল হক বেলাল জানান, ‘বনভূমি উদ্ধারে গাজীপুরে এখন ক্রাশ প্রোগ্রাম চালাচ্ছি। জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতায় দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে সারাদেশে শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।’
তিনি জানান, স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সিলেট ও অন্যান্য জেলায় বনভূমি উদ্ধারে অভিযান চালানো হবে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি দখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহন করতে এবং প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা স্থাপনে যে বনভুমি অবৈধভাবে দখল করা হয়েছে সেগুলো উদ্ধারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে সুপারিশ করে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, বনবিভাগের উদ্যোগে বেদখলকৃত জায়গা ও দখলদারদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা মতে, ৮৮,২১৫ জন দখলদার সারাদেশে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬১৪ একর সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে রেখেছে। এছাড়া, ৭২ হাজার ৩৫১ জন দখলদার প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৫ একর অন্যান্য বনভূমি দখল করেছে।
বেলাল বলেন, বনভূমি উদ্ধারে আমাদের অবশ্যই একটি কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। কিন্তু, তা করতে আমাদের একটু সময় লাগবে।
কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগসমুহে বন বিভাগকে নিয়ে কাজ করতে হবে। স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে সম্বন্বয় করে কাজটি করতে হবে, তিনি জানান।
রেইনফরেষ্ট ফাউন্ডেশন নরওয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৭ বছরে বাংলাদেশের ৬৬ বর্গ কিলোমিটার ট্রপিকাল রেইনফরেষ্ট ধ্বংস হয়েছে। গত ২০০২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রতি বছর চার বর্গ কিলোমিটার রেইনফরেষ্ট ধ্বংস অথবা নষ্ট হয়েছে। ২০০১ সালে বাংলাদেশে রেইনফরেষ্ট ছিল ৯৬৬ বর্গ কিলোমিটার যা কমে ২০১৯ হয় ৯০০ বর্গ কিলোমিটার।
গত ২১ মার্চ আন্তর্জাতিক বন দিবসের অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, যেকোনো মূল্যেই দেশের বনভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, বন দখলকারী এবং দখলে সহায়তাকারী উভয়ের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বন বিভাগের যে সকল কর্মী বন রক্ষায় আহত হবেন তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে অন্যদিকে বন দখলে সহায়তা করার অভিযোগে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা হবে। সংশ্লিষ্ট সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতায় বনভূমি পুনরুদ্ধারে সফল হবে সরকার।
সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, বন দখলের অনেক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে কিছু বন প্রভাবশালীর ও আর কিছু বন ভূমিহীনদের দখলে। প্রভাবশালীরা নিজের জন্যও বন দখল করে আবার অন্যের জন্যও দখল করে। যাতে তাঁরা বনের ভিতর বিভিন্ন শিল্প কারখানা স্থাপন করতে পারে।
তিনি বলেন, টাঙ্গাইলের মধুপুর বনে আদিবাসীরা কৃষি কাজের জন্য বন দখল করে। পরে প্রভাবশালীরা তাদের কিছু টাকা দিয়ে নিজেরা দখল কিনে নেয়।
বন উদ্ধারের ব্যাপারে তিনি জনান, প্রথমে একটি জরিপ করে দখলদারদেরও একটি তালিকা তৈরি করা দরকার। আমাদের সংরক্ষিত বনের কোন সীমানা নেই। বনের চেয়ারাই বদলে গেছে। বনের ভিতরে এখন হাট-বাজার ও মাদরাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গেজেট অনুযায়ী সংরক্ষিত বনের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।
ইশতিয়াক বলেন, এ কাজটি বন বিভাগ একক ভাবে পারবে না। ভূমি জরিপ অধিদপ্তরকে এ কাজটির সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের সহায়তায় সংরক্ষিত বনের সীমানা চিহ্নিত করা গেলে জানা যাবে কার অধীনে কতটুকু বন দখলে রয়েছে।
তিনি বলেন, এরপর একটি কৌশল ঠিক করতে হবে কিভাবে বন উদ্ধার করা যায়। যেখানে বাজার ঘাট, মসজিদ মাদ্রাসা হয়ে গেছে সেখানে তা কিভাবে উদ্ধার হবে এবং সেই সাথে বন উদ্ধারে কর্ম পরিকল্পনা ও কার্যক্রম নিতে হবে।
‘এ কাজটা শুরু করতে হবে। কোন ভাবেই ছাড় দেওয়া উচিত হবে না’- ইশতিয়াক বলেন।
বাসস/এমআরআই/১৭২৫/আরজি