গ্রামীণ মানুষের রক্তচাপ বৃদ্ধি ঠেকানোর কার্যকর পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা আইসিডিডিআরবি’র

287

ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি সাশ্রয়ী রক্তচাপ ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে এই পদ্ধতিটি আরো বড় পরিসরে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে।
এ সম্পর্কিত একটি বহুদেশীয় গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি বিখ্যাত চিকিৎসা সাময়িকি ’দ্যা ল্যান্সেট গ্লোবাল হেলথ’ এ প্রকাশিত হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের ডিউক-এনইউএস মেডিকেল স্কুলের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার গবেষকদের পরিচালনায় কনট্রোল অব ব্লাড প্রেসার এন্ড রিস্ক এ্যাটনুয়েশন-বাংলাদেশ, পাকিস্তান এন্ড শ্রীলঙ্কা (কোবরা-বিপিএস) নামক এই গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছে বাংলাদেশের আইসিডিডিআর,বি, পাকিস্তানের আগা খান বিশ্ববিদ্যালয় এবং শ্রীলংঙ্কার কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
এই পরীক্ষামূলক গবেষণায় উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগের কার্যকারিতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। গবেষণাটি ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে তিনটি দেশের ৩০টি এলাকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিচালনা করা হয় ।
আজ আইসিডিডিআর,বি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে টাঙ্গাইল ও মুন্সিগঞ্জ জেলার ১০টি উপজেলায় ৮৯৫ জন উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির ওপর আইসিডিডিআর,বি এই গবেষণাটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর বিভাগের সহযোগিতায় পরিচালনা করে। এর মধ্যে ৫টি ্উপজেলার ৪৪৭ জন ব্যক্তিকে ’ইন্টারভেনশন’ দলে সংযুক্ত করা হয়। প্রতি ৩ মাস পরপর ১ জন সরকারী স্বাস্থ্যকর্মী যারা সাধারণত মা এবং শিশু স্বাস্থ্যসেবার জন্য বাড়ী পরিদর্শন করেন তারা রোগীর বাড়ীতে গিয়ে একটি ডিজিটাল রক্তচাপ পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে রক্তচাপ পরিমাপ করাসহ রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জীবনযাত্রা পরিবর্তনে স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রদান করেন।
যে সকল ব্যক্তিদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল তাদেরকে নির্ধারিত উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পাঠানো হয় যেখানে ডাক্তার উচ্চরক্তচাপের চিকিৎসা গাইডলাইন অনুসরণ করে রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করে এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহের ব্যবস্থা করে।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক ডিউক-ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুর, হেলথ সার্ভিস ও সিষ্টেম রিসার্চের অধ্যাপক তাজিন এইচ জাফর বলেন, ‘একটি ইন্টারভেনশনের খরচকৃত অর্থের মূল্য বোঝার জন্য ব্যয়ের কার্যকারিতার গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সূচকগুলো স্বাস্থ্য পরিকল্পনাকারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যখন তাদের বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি (ইন্টারভেনশন) থেকে একটি বেছে নিতে হয়।’
অধ্যাপক জাফর এবং তার দল ৩ বছরের প্রতিটিতে মোট খরচ হিসাব করেন। এর ওপর ভিত্তি করে তারা হিসাব করে দেখেন প্রতি অংশগ্রহণকারীর চিকিৎসার খরচ কত এবং প্রতিটি দেশের সাধারণ জনসংখ্যার (মাথাপিছু) প্রত্যেক সদস্যের খরচ কত। পরিশেষে, তারা হিসাব করেন যে, দেশব্যাপী এই কর্মসূচীকে বাস্তবায়ন করতে কত খরচ হবে এবং কত লোকের উচ্চরক্তচাপ চিহ্নিত ও ব্যবস্থাপনা করা যাবে।
‘গবেষণায় দেখা গেছে যে রক্তচাপ কমানোর মাধ্যমে করোনারি হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও অনেকাংশে কমিয়ে দেয় এবং এর মাধ্যমে বলা যায় এই সাশ্রয়ী পদ্ধতিটি প্রয়োগ উভয় ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল বয়ে আনবে’- এ মন্তব্য করেছেন ডিউক-এনইউএস-এর হেলথ সার্ভিস ও সিষ্টেম রিসার্চের অধ্যাপক এরিক ফিঙ্কেলস্টেইন যিনি এই গবেষণার সাথে যুক্ত এবং স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ।
বাংলাদেশে এই গবেষণার প্রধান গবেষক ও আইসিডিডিআর,বি-র হেলথ সিস্টেমস অ্যান্ড পপুলেশন স্টাডিস ডিভিশনের অসংক্রামক রোগ শাখার প্রধান ড. আলিয়া নাহিদ বলেন, ‘বাংলাদেশে অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপই হচ্ছে হার্ট অ্যটাক, স্ট্রোক ও কিডনী বিকল হওয়ার মূল কারণ এবং এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদী রোগগুলোর চিকিৎসা ব্যয়ও অনেক বেশী। কোবরা-বিপিএস গবেষণা পদ্ধতির মাধ্যমে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ খুবই কার্যকর এবং সাশ্রয়ী যা বাংলাদেশে প্রচলিত সরকারী স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে সহজে সম্প্রসারিত করা যেতে পারে।’
গবেষণা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচীর লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার অসংক্রামক রোগের সেবাকে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে প্রসারিত করতে বদ্ধ পরিকর। আমি খুবই আনন্দিত যে, উচ্চরক্তচাপ কমানোর জন্য আইসিডিডিআর,বি-র গবেষণা কোবরা-বিপিএস কর্মসূচীটিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেছে তা বাংলাদেশে গ্রামীন জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে কার্যকর ও সাশ্রয়ী প্রমাণিত হয়েছে।’