দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ : কুষ্টিয়ায় সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের

595

ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : হলুদ রঙের নান্দনিক একটি ফুল সূর্যমুখী। দেখতে সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তাই ফুলকে সূর্যমুখী বলে। সূর্যমুখী থেকে তৈরি তেলও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ। বিশ্বেজুড়েই সূর্যমুখী তেলের চাহিদা এখন ব্যাপক। আমাদের দেশেও ক্রমশ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এই তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বাসস জেলা প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখী চাষের চিত্রটুকু তুলে ধরার প্রয়াসে ‘দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে কুষ্টিয়া জেলায় সূর্যমুখী চাষের চিত্র-
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল এলাকার কৃষক জিয়ারত প্রামাণিক। তিনি একবিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। কৃষি অফিস বিভাগের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন তিনি। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে আনন্দের হাসি। সূর্যমুখীর ক্ষেত দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছে। কুষ্টিয়ার ৬টি উপজেলায় এবার বিস্তৃত পরিসরে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ৩৩ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। সুর্যমুখী তেলবীজ চাষ লাভজনক হওয়ায় পাশাপশি বিনামূল্যে বীজ-সার পাওয়ায় সুর্যমুখী ফুল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন অধিদফতরের আওতায় তেল জাতীয় ফসলের প্রযুক্তি বিস্তার ও দানা জাতীয় ফসলের প্রযুক্তি বিস্তার প্রদর্শনীর আওতায় আরডিএস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখী ফুলের আবাদ করেছেন। জেলায় ২০ হেক্টর জমিতে হাইসান-৩৩ জাতের সূর্যমুখী চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ৩৩ হেক্টর জমিতে। এসব জমির অধিকাংশতেই গাছে ফুল ধরেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শতভাগ জমিতেই ভালো বীজ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সূর্যমুখীর বাগানগুলো এখন প্রকৃতপ্রেমীদের উপভোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। দলে দলে তারা ছুটে চলছেন এসব বাগানে। ছবি তুলে পোস্ট করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। পড়ন্ত বিকালে সূর্যমুখীর বাগানগুলো প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড় থাকে বেশি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সূর্যমুখীর চাষের ৯০-১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। প্রতি বিঘা জমিতে ৭-৮ মণ বীজ পাওয়া যাবে। বিঘা প্রতি কৃষকরা ২০-২৫ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারেন। সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে সয়াবিন তেল পাওয়া যাবে তাতে কোনও ক্ষতিকর কোলেস্টোরল নেই। সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের বটতৈল গ্রামের কৃষক জিয়ারত প্রামাণিক জানান, তারা দুই ভাই প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ধানের পাশাপাশি সবজির আবাদ করেন। তবে এবারই প্রথম কৃষি অফিসারের পরামর্শে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। এক বিঘা জমির জন্য কৃষি অফিস থেকে তাদের বিনামূল্যে সূর্যমুখীর বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিনিয়ত পরামর্শ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে গাছে ফুল এসেছে। শহরের বাসিন্দা হাবিবুল আলম তার পরিবার পরিজন নিয়ে এই বাগানে এসেছিলেন। তিনি জানান, সূর্যমুখী ফুলের কথা শুনে পরিবার নিয়ে এসেছেন। মাঠ ভরা সূর্যমুখী ফুল দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় তাদের। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহারুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমার আওতাধীন প্রথমবারের মতো বৃহত্তর কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল কৃষি উন্নয়ন অধিদফতরের আওতায় তেল জাতীয় ফসলের প্রযুক্তি বিস্তার ও দানা জাতীয় ফসলের প্রযুক্তি বিস্তার প্রদর্শনীর আওতায় আরডিএস-২৭৫ জাতের সুর্যমুখী সূর্যমুখীর চাষ করা হয়েছে। চাষের তদারকি করা হচ্ছে নিয়মিত। আশা করছি কৃষকরা ভালো ফলন পাবেন।’ কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এবার ৩৩ হেক্টর জমিতে হাইসান-৩৩ জাত ও আরডিএস-২৭৫ জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হেক্টর। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত তদারকি ও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।