বাসস দেশ-৪২ : গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায় পররাষ্ট্রনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ করার আহ্বান

159

বাসস দেশ-৪২
আইসিএসএফ- গণহত্যা
গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায় পররাষ্ট্রনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ করার আহ্বান
ঢাকা, ২৭ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) একাত্তরে বাঙালি জনগোষ্ঠির ওপর পরিচালিত নির্মম গণহত্যার ব্যাপারে বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ে জোরালো ভূমিকা পালনের বিষয়টি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে আইসিএসএফ এবং অষ্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের যৌথ উদ্যোগে ‘১৯৭১-এর বাংলাদেশ গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক অনলাইন ভিত্তিক এক মতবিনিময় সভায় এ আহ্বান জানানো হয়।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) আন্তর্জাতিক অপরাধের ভিকটিমদের পক্ষে কর্মরত বিশেষজ্ঞ এবং কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত স্বাধীন বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, যা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে সংগঠিত জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্যক্তিবর্গ এবং সংগঠনগুলোর সাথে বৈশ্বিক যোগাযোগ এবং চিন্তা ও কার্যক্রমের পারস্পরিক আদান প্রদান ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ)-এর কাজের ধারার অন্যতম একটি দিক। আইসিএসএফ মনে করে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বাঙ্গালীরা ১৯৭১ এ ঘটে যাওয়া জেনোসাইডের বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
সম্প্রতি আইসিএসএফ এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং ১৯৭১ এর জেনোসাইডের ৫০ বছরকে সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেয়। এই কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ঘোষিত ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে অনুষ্ঠিত এসভায় বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশের ২৬টি শহর থেকে অনুষ্ঠানটিতে অনলাইনে সামিল হন দর্শকরা। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় ফেসবুক, ইউটিউব, এবং টুইটারে সরাসরি সম্প্রচারকৃত অনুষ্ঠানটি স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে সূচনা করেন ক্যানবেরা থেকে কলামিস্ট ড. এজাজ মামুন।
তিনি ১৯৭১ এ সংঘটিত জেনোসাইডের ইতিহাস এবং এর বৈশ্বিক স্বীকৃতির পটভূমি তুলে ধরেন। এর পর ১৯৭১ এর জেনোসাইড স্মরণে সভার প্লাটফর্মে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরপরই পরিবেশন করা হয় ১৯৭১-এর জেনোসাইডের ওপর আইসিএসএফ নির্মিত বহুল সমাদৃত তথ্যচিত্র ‘ক্রিড ফর জাস্টিস’। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমানের পরিচালনায় মূল আলোচনা শুরু হয়। পরে নির্ধারিত আলোচকবৃন্দ জেনোসাইডের বৈশ্বিক স্বীকৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে তাদের মতামত দেন।
আইসিএসএফ-এর ট্রাস্টি ড. রায়হান রশিদ, শিরিন আখতার এমপি, বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সদস্য ড. নমিতা হালদার, অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান, ম্যাককোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, আইসিএসএফ-এর আরেক ট্রাস্টি ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন এবং অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্য থেকে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন লাইলাক শহীদ, ড. কামাল উদ্দিন, ড. আবু তাহের মল্লিক এবং ইগনাতিয়াস রোজারিও। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ফেসবুক, জুম, এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে প্রশ্ন এবং মন্তব্য সংগ্রহ করে সভার আলোচকদের কাছে তুলে ধরেন সভার পরিচালক।
আলোচনার শুরুতেই বাংলাদেশ জেনোসাইডের বৈশ্বিক স্বীকৃতি প্রসঙ্গে আইসিএসএফ-এর দিক নির্দেশনামূলক অবস্থান তুলে ধরেন সংগঠনটির ট্রাস্টি ড. রায়হান রশিদ। আইসিএসএফ-এর অবস্থান থেকে সুপারিশ হিসেবে তিনটি বিষয়ে- একাত্তরের গনহত্যার বিষয়টি বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এর সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করা. জেনোসাইডের বৈশ্বিক স্বীকৃতির বিষয়টি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা এবং অতীতের জেনোসাইড থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনায় সে চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
শিরিন আখতার তার বক্তব্যে বলেন, ২০১৭ সালের গণহত্যা দিবস বিষয়ে গৃহীত সংসদীয় প্রস্তাবটি কার্যত আইনগত অর্থে বাধ্যবাধকতাহীন। তাই, ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিষয়টিকে বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার লক্ষ্যে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দেন। সেই সাথে, বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিশ্চিতের উদ্দেশ্যে সহকর্মী সাংসদদের সাথে নিয়ে কাজ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি।
ড. নমিতা হালদার বলেন, গণহত্যা হল সর্বোচ্চ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে সরকারকে গণহত্যার বৈশ্বিক স্বীকৃতির কর্মসূচীতে আরও সামিল হওয়ার অনুরোধ করবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান আইসিএসএফ-এর পক্ষ থেকে উত্থাপিত সুনির্দিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তরে বলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে জেনোসাইডের স্বীকৃতি বিষয়ে কাজ করে যাবে।
তিনি আরও বলেন, সকল কূটনৈতিক চ্যানেলে ও বাংলাদেশের বৈদেশিক মিশনগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তারা তাদের যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের জেনোসাইডের বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ে সচেষ্ট হতে পারে।
ম্যাককোয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম আইসিএসএফ-এর প্রস্তাবেরই প্রতিধ্বনি করে বলেন যে , জেনোসাইড এর স্বীকৃতি অর্জনের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রনীতির অংশ হয়ে ওঠাটা অত্যন্ত জরুরি। সেই সাথে বাংলাদেশের জেনোসাইড নিয়ে মানসম্মত একাডেমিক গবেষণার প্রয়োজনীয়তার ওপরও তিনি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।
আইসিএসএফ-এর আরেক ট্রাস্টি ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের জেনোসাইড নিয়ে আমাদেরই আলোচনা করতে হবে, গবেষণা করতে হবে, এবং এ নিয়ে বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। অন্য কেউ সেটা করে দেবে না।’
উল্লেখ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) আন্তর্জাতিক অপরাধের ভিকটিমদের পক্ষে কর্মরত বিশেষজ্ঞ এবং কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত স্বাধীন বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, যা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে সংগঠিত জেনোসাইডের স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে।
বাসস/সবি/কেসি/১৯৫০/-এইচএন