বাসস দেশ-২ : চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত

94

বাসস দেশ-২
চট্টগ্রাম-কোভিড
চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ করোনা রোগী শনাক্ত
চট্টগ্রাম, ২৭ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : চট্টগ্রামে গতকাল নয় মাসের সর্বোচ্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এটি চট্টগ্রামে পুরো করোনাকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যাও। তবে সংক্রমণের হার ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং এ সময়ে কোনো করোনা রোগীর মৃত্যু হয়নি। একইদিনে মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৩৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর সাতটি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে চট্টগ্রামের ২ হাজার ৯৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। নতুন শনাক্ত ৩৫৩ জনের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ২৯৪ জন এবং বারো উপজেলার ৫৯ জন। জেলায় মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা এখন ৩৯ হাজার ১০৮ জন। সংক্রমিতদের মধ্যে ৩১ হাজার ৩৯ জন শহরের বাসিন্দা ও ৮ হাজার ৬৯ জন গ্রামের। উপজেলায় আক্রান্তদের মাঝে সর্বোচ্চ হাটহাজারীতে ১৮ জন। এছাড়া, রাঙ্গুনিয়া ও রাউজানে ৭ জন করে, সীতাকু- ও পটিয়ায় ৬ জন করে, মিরসরাই ও বোয়ালখালীতে ৪ জন করে, চন্দনাইশ ও লোহাগাড়ায় ২ জন করে এবং সন্দ্বীপ, বাঁশখালী ও সাতকানিয়ায় ১ জন করে রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত কেউ মারা যাননি। জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা ৩৮৪ জনই রয়েছে। এর মধ্যে ২৮১ জন শহরের ও ১০৩ জন গ্রামের। সুস্থতার ছাড়পত্র দেয়া হয় ৫০ জনকে। ফলে মোট আরোগ্য লাভকারীর সংখ্যা ৩৩ হাজার ৭৭২ জনে উন্নীত হলো। এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ৪ হাজার ৫৮২ জন ও ঘরে চিকিৎসায় সুস্থ হন ২৯ হাজার ১৯০ জন। হোম আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইনে যুক্ত হন ৩৫ জন ও ছাড়পত্র নেন ১৫ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১ হাজার ১৩৯ জন।
উল্লেখ্য, গতকাল শনাক্ত জীবাণুবাহকের সংখ্যা বিগত নয় মাসে একদিনের সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ এর চেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ১ জুলাই, ৩৭২ জন। ২৯ জুন ৩৪৬ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে। চট্টগ্রামে করোনাকালের সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্ত হয় ৩০ জুন, ৪৪৫ জন। গতকাল সাড়ে তিনশ’র বেশি রোগী চিহ্নিত হলেও এর আগের টানা পাঁচদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুইশ অতিক্রম করে। এর মধ্যে, ২২ মার্চ চট্টগ্রামে সাড়ে তিন মাসের সর্বোচ্চ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়। এদিন ১ হাজার ৯৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৭২ জনের শরীরে করোনার জীবাণু পাওয়া যায়। সংক্রমণ হার ছিল ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। সংখ্যা ও হার দু’ক্ষেত্রেই এ সময়ের মধ্যে এটা ছিল একদিনের সর্বোচ্চ।
চট্টগ্রামে এবার সবচেয়ে কম সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পূর্ণ হয়। এবার সময় লাগে মাত্র ৫ দিন। এর আগে ৩৮ হাজার পূর্ণ হয় ২২ মার্চ, ছয় দিনে। ৩৭ হাজার পূর্ণ হয় ১৭ মার্চ, ৭ দিনে। ৩৬ হাজার পূর্ণ হয় ১০ মার্চ, ১০ দিন সময় নিয়ে। এর আগে ১ মার্চ ৩৫ হাজার পূর্ণ হয়। সে সময় এক হাজার পূর্ণ হতে ১৪ দিন লেগেছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩৪ হাজার অতিক্রম করার সময় ১ হাজার পূর্ণ হয় ১৫ দিনে। ৩১ জানুয়ারি ১৬ দিনে ১ হাজার পূর্ণ হয়ে ৩৩ হাজার অতিক্রম করে, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে হাজার পূর্ণ হওয়ার কাল। অথচ তার আগে ৯ দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ৩২ হাজার অতিক্রম করে গত ১৫ জানুয়ারি। আট দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩১ হাজার ছাড়িয়ে যায় ৬ জানুয়ারি। এর আগে ২৮ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলায় মোট শনাক্ত রোগী ৩০ হাজার অতিক্রম করে। ২১ ডিসেম্বর মোট আক্রান্ত ২৯ হাজার অতিক্রম করে। জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ হাজার ছাড়িয়ে যায় ১৪ ডিসেম্বর।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি আজ বাসস’কে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেক বেড়েছে। প্রবণতা দেখে মনে হচ্ছে, রোগীর সংখ্যা আরো বাড়বে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করে অথবা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা ছাড়া সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মানানো না গেলে মানুষকে ঘরবন্দী করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’
এদিকে, ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ১১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এখানে গ্রামের ৫ জনসহ ৮১ জন জীবাণুবাহক চিহ্নিত হন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৪৪৫ জনের নমুনায় ২৫ জন পজিটিভ শনাক্ত হন। এরা সবাই শহরের বাসিন্দা। ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ২৫৪ জনের নমুনায় গ্রামের ১১ জনসহ ৭৭ জন আক্রান্ত শনাক্ত হন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ১২৭টি নমুনার মধ্যে শহরের ১৩ ও গ্রামের ২০টিতে করোনারভাইরাস পাওয়া যায়।
নগরীর বেসরকারি তিন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরির মধ্যে শেভরনে ৮৪২ নমুনা পরীক্ষা করে গ্রামের ১৭ জনসহ ৭৫ জন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ১১৪ নমুনায় গ্রামের ৩ জনসহ ৫০ জন এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ২৩ নমুনায় গ্রামের ১ জনসহ ১০ জন করোনায় আক্রান্ত পাওয়া যায়।
এদিন চট্টগ্রামের ৩৮টি নমুনা কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় ২টি ছাড়া বাকী সবগুলোর নেগেটিভ রেজাল্ট আসে।
তবে, নগরীর বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে-আরটিআরএল কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্ট বিশ্লেষণে সংক্রমণ হার পাওয়া যায়, বিআইটিআইডি’তে ৭ দশমিক ২৮, চমেকে ৫ দশমিক ৬২, সিভাসু’তে ৩০ দশমিক ৩১, চবি’তে ২৫ দশমিক ৯৮, শেভরনে ৮ দশমিক ৯১, ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৪৩ দশমিক ৮৬, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ৪৩ দশমিক ৪৮ এবং কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ।
বাসস/জিই/কেএস/১১১০/-আসাচৌ