চট্টগ্রামে হেফাজতের মিছিল থেকে থানায় হামলা : গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪জন নিহত, অর্ধশতাধিক আহত

462

চট্টগ্রাম, ২৬ মার্চ ২০২১ (বাসস) : ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভে বাঁধা দেয়ায় থানায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায় হেফাজত কর্মীরা। এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে চারজন মারা গেছেন। এঘটনায় পুলিশসহ অর্ধ শতাধিক আহত হয়েছে। হেফাজত কর্মীরা হাটহাজারি থানা ছাড়াও ভুমি অফিসে হামলা চালিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুর ২টার দিকে হাটহাজারি উপজেলার দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসার সামনে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। বিকেল ৫টায় চারজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল হক ভূঁইয়া।
তিনি জানান, শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হাটহাজারী থেকে গুলিবিদ্ধ ছয় জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক চারজনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। তাদের মধ্যে তিন জন মাদরাসা ছাত্র। আরেকজন পেশায় দর্জি। মাদরাসার পাশে তার দোকান আছে বলে জানা গেছে। নিহতরা হলেন রবিউল ইসলাম (২৫), রিয়াজুল ইসলাম (২৩), আবদুল্লাহ (২৮) ও মেহরাজুল ইসলাম (২৫)। আহত রয়েছে অর্ধশতাধিক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। রক্তাক্ত অবস্থায় দুই পুলিশ সদস্য হেফাজতকর্মীদের কাছে আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ি খোরশেদ আলম জানান, জুমার নামাজের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন মাদরাসা ছাত্ররা। এসময় মাদরাসার মাইক থেকে তাদের ফেরত যেতে বলা হলেও তারা সামনে এগিয়ে যায়। পরে থানার সামনে গিয়ে থানা লক্ষ্য করে হঠাৎ ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ ও মাদরাসা ছাত্রদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে চার জনকে চমেক হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাদাত হোসেন বলেন, মিছিলে বাঁধা দেয়া হয়নি, হেফাজত কর্মীরা হঠাৎ থানায় হামলা করেছে। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংঘর্ষের জেরে হেফাজতের নেতারা হাটহাজারী থানা কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। ওই এলাকা পুরো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। হেফাজতের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ থানার সামনে অবস্থান করছে।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে মাদ্রাসার সামনে হেফাজতের নেতাকর্মীরা থানার সামনে এসপির নেতৃত্বে পুলিশ ও বাস স্ট্যান্ডে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। ত্রিমুখী অবস্থানের কারণে জুমার নামাজের পর থেকে হাটাহাজারী খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, থানায় হামলার পর হেফাজতের নেতা-কর্মীরা এখানকার ভূমি অফিসে ঢুকেও ভাঙচুর করেছে। তারা ভূমি অফিসের ফাইলপত্র-আসবাবপত্র সব জড়ো করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। ভূমি অফিসের একটি গাড়িতেও আগুন ধরিয়ে দেন তারা। শুধু ভূমি অফিস নয়, উপজেলার ডাকবাংলোতে ঢুকেও ব্যাপক ভাঙচুর করেছেন হেফাজতে ইসলামের অনুসারীরা।
এদিকে হাটহাজারী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, এখনও মাদরাসার সামনে পাঁচ পুলিশ সদস্য আটকা পড়ে আছেন ও দুই সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।