বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : শেখ হাসিনার অবদান দেশে নারী, শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন

177

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
নারী-ক্ষমতা
শেখ হাসিনার অবদান দেশে নারী, শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন
ঢাকা, ২৫ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে নেই নারীরাও। বর্তমান সরকারের আমলে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নের পাশাপাশি পারিবারিক সিদ্ধান্ত গ্রহণেও বেশ জোরালো ভূমিকা রেখে চলেছেন নারীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশের মোট জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ নারী ও শিশু। আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে। এ লক্ষ্যে নারী ও শিশুদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। যা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে।
সূত্র জানায়, নারী ও শিশুর সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়ন এবং সামগ্রিক উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্তকরণের জন্য সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১; জাতীয় শিশু নীতি ২০১১; শিশুর প্রারম্ভিক যতœ ও বিকাশের সমন্বিত নীতি ২০১৩; মনোসামাজিক কাউন্সেলিং নীতিমালা ২০১৬ (খসড়া); জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নকল্পে কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২০১৫; পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০; ডি-অক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) আইন, ২০১৪; পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা ২০১৩ এবং বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭।
সূত্রমতে, দুস্থ নারীদের জন্য রয়েছে সরকারের নিরাপত্তামূলক কিছু প্রকল্প। যাকে বলা হয়, ভিজিডি কার্যক্রম। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত ভিজিডি কর্মসূচির মাধ্যমে দু’বছর মেয়াদি চক্রে উপকারভোগী নারীদের মাসিক ৩০ কেজি হারে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি, চুক্তিবদ্ধ এনজিও-র মাধ্যমে তাদের উন্নয়ন প্যাকেজ সেবা দেওয়া হয়।
গত ১১ বছরে ভিজিডি সুবিধাভোগী নারীর সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি। এছাড়া, দরিদ্র মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করছে সরকার। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় পল্লী অঞ্চলের দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের অসহায়ত্বের কথা বিবেচনা করে তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে এবং শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
এ কার্যক্রমের আওতায় দরিদ্র গর্ভবতী মায়েদের ভাতা প্রদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। এ কার্যক্রমের আওতায় ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত উপকারভোগীর সংখ্যা ১৫ লাখেরও বেশি।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর জানায়, শহর অঞ্চলে নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মা ও তাদের শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি মান বৃদ্ধি করে আর্থ-সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার ‘কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল’ কর্মসূচি চালু করেছে। এ পর্যন্ত ২ লাখ ৪৫ হাজার ১২৫ জন কর্মজীবী মাকে সেবা দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১ লক্ষ ৮০ হাজার মাকে এই ভাতা প্রদান করা হয়।
বেকার নারীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ:
এদিকে, শিক্ষিত বেকার মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় মহিলা সংস্থার মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলার শিক্ষিত বেকার নারীদের কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে সরকার। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট ৪ হাজার ৩৯৩ জন শিক্ষিত বেকার নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এ কার্যক্রমের আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ৫ হাজার ৮৮২ জন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৬৩৫ জন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ২০ হাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার:
নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্পের আওতায় ২০১২ সালের ১৯ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই সেন্টারে টোল-ফ্রি হেল্পলাইন ১০৯ নম্বরে ফোন করে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু, তাদের পরিবার এবং সংশ্লিষ্ঠ সবার প্রয়োজনীয় তথ্য, পরামর্শসহ দেশে বিরাজমান সেবা এবং সহায়তা সম্পর্কে জানতে পারে। এ কার্যক্রমের আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে টোল ফ্রি (১০৯) সেন্টারে মোট ২ লাখ ২৬ হাজার ২৬৩টি ফোন গ্রহণ করা হয়।
কিশোর-কিশোরী ক্লাব:
কিশোর-কিশোরীদের ক্লাবে সংগঠিত করে তাদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য ২০১১ সাল থেকে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেশের ৭টি বিভাগের ৭টি জেলার প্রত্যেক উপজেলায় সকল ইউনিয়নে সর্বমোট ৩৭৯টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব পরিচালনা করা হচ্ছে। জেলাগুলো হচ্ছে-গোপালগঞ্জ, চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও, ঝালকাঠি, রাঙ্গামাটি, মৌলভীবাজার ও সিরাজগঞ্জ।
মৌলভীবাজারের জেলা মহিলা বিষয়ক অফিসের উপ-পরিচালক ভিকারুন নেছা বলেন, এ সব ক্লাবে কিশোর-কিশোরীরা মিলিত হয়ে বাল্য বিবাহ, যৌতুক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক বিষয়ে পারস্পরিক আলোচনা করে। এই ক্লাবগুলোর মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন শিখানো হয়।
নারী পোশাককর্মীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ:
কর্মজীবী নারীদের নিরাপত্তা ও আবাসন নিশ্চিত করার জন্য মহিলা হোস্টেল পরিচালনা করছে সরকার। ২০১৩ সালে সাভারের বড় আশুলিয়ায় ৪২ শতাংশ জমির উপর কর্মরত নারী পোশাক শ্রমিকদের জন্য ১২ তলা হোস্টেল নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী আয়শা খানম বলেন, নারীর উন্নয়ন হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তবে, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। অনেক ক্ষমতায়ন হয়েছে। কিন্তু ভিতটা দুর্বলই থেকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষে নেওয়া প্রয়োজন।
যোগাযোগ করা হলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বলেছেন, বাংলাদেশের সংবিধান নারী-পুরুষ সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করেছে। সরকার নারীর উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও দারিদ্র্য হ্রাসের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার ব্যাপক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য হারে নারী দারিদ্র্য হ্রাস করতে পেরেছে। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ অর্জনে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলেও মনে করেন তিনি।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/এমআএইচ/মহ/০৯১০/স্বব