বাসস প্রধানমন্ত্রী-৪ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিশ^বাসীর প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

161

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৪ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-জন্মবার্ষিকীর-অনুষ্ঠান
টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিশ^বাসীর প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম বা সিভিএফ-এর বর্তমান সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব নেতৃত্বকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছে। গত বছর ঢাকায় গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যাডাপটেশন, বাংলাদেশ অফিস চালু করা হয়েছে। ঢাকা অফিস দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে।
তিনি নেপালের প্রেসিডেন্ট জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগদান করায় তাঁর নিজের এবং জনগণের পক্ষ থেকে তাঁকে এবং নেপালের জনগণকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
নেপাল আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন নেপাল সরকার এবং সেখানকার জনগণ নানাভাবে স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন।
তিনি বলেন, যেসব দেশ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশকে সর্বাগ্রে স্বীকৃতি দিয়েছিল, নেপাল তার অন্যতম। ১৯৭২ সালে জানুয়ারি মাসে নেপাল বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নেপালের জনগণের সে অবদানের কথা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি। স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা ২০১২ এবং ২০১৩ সালে নেপালের ১১ জন নাগরিককে ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’ সম্মাননায় ভূষিত করি।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ ও নেপাল এই দুই দেশের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের মধ্যে ভৌগোলিক নৈকট্য ছাড়াও আমাদের রয়েছে প্রায় একই ধরণের ইতিহাস। আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমাদের অবস্থান প্রায় এক এবং অভিন্ন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং নেপালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, সড়ক, রেল এবং বিমান যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি, বিশেষ করে পানি-বিদ্যুৎ খাত, পর্যটন এবং পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সহযোগিতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বিবিআইএন (বাংলাদেশ,ভূটান, ভারত, নেপাল) চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এরফলে এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে। নেপালকে আমরা আমাদের সৈয়দপুর আঞ্চলিক বিমানবন্দর এবং মংলা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সব সময়ই শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তিনি ছিলেন সোচ্চার। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে। সকলের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষার মত মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে যায়।
তিনি বলেন, বিগত ১২ বছরে আমরা জাতির পিতার দেখানো পথ ধরেই হাঁটছি। আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। গত মাসে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র নেপালও একইসঙ্গে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমি নেপালের সরকার এবং জনগণকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে দক্ষিণ এশিয়ার এক বিশাল সংখ্যক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে। বিপুল সংখ্যক মানুষ এখনও অর্ধাহারে বা না খেয়ে প্রতিরাতে ঘুমাতে যায়। অনেকে জীবন ধারণের ন্যুনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় যে প্রাকৃতিক সম্পদ আছে সেই সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহার করে এ অঞ্চলের মানুষের দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব।’
‘একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এ অঞ্চলকে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস আমরা অব্যাহত রাখব,’ যোগ করেন তিনি।
বাসস/এএসজি-এফএন/২০৩০/আরজি