দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ : মেহেরপুরে কৃষকদের সূর্যমুখি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে

336

ঢাকা, ২১ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : হলুদ রঙের নান্দনিক একটি ফুল সূর্যমুখী। দেখতে সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তাই ফুলকে সূর্যমুখী বলে। সূর্যমুখী থেকে তৈরি তেলও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ। বিশ্বেজুড়েই সূর্যমুখী তেলের চাহিদা এখন ব্যাপক। আমাদের দেশেও ক্রমশ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এই তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বাসস জেলা প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখী চাষের চিত্রটুকু তুলে ধরার প্রয়াসে ‘দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে মেহেরপুর জেলায় সূর্যমুখী চাষের চিত্র-
সুর্যমূখি চাষে উৎপাদন খরচ কম, পুষ্টি সমৃদ্ধ তেল, জ¦ালানী হিসেবে খড়ি ও জৈব সার হিসেবে খৈল পাওয়ার কারণে মেহেরপুরে সূর্যমূখি চাষ বাড়ছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বারাদি হর্ট্টিকালচার সেন্টার, আমঝুপি বীজ উৎপাদন খামার, চিৎলা পাটবীজ উৎপাদন খামার সূর্যমূখি চাষ করছে। জেলাতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সূর্যমুখি বীজের জন্য চাষ করছে ব্রাক। রাস্তার পাশের জমিতে সূর্যমুখি চাষ বড় অন্তরায়। কারণ ফুলেই পাওয়া যায় বীজ। আর সেই দৃষ্টিকাড়া ফুল মানুষ ছিড়ে নিয়ে যায়।
চলতি মৌসুমে মেহেরপুরে সূর্যমুখীর চাষের লক্ষমাত্রা ১৫ বিঘা জমিতে। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় বেশি লাভের আশা করছেন কৃষকরা। বলা হয়ে থাকে, সয়াবিনের চেয়ে সূর্যমুখীর তেল বেশি পুষ্টিগুন সম্পন্ন। সূর্যমুখির ফুলের আছে নজর কাড়া সৌন্দর্য। কম সময় আর স্বল্প খরচে ভালো লাভ পাওয়ায় চাষীরা চাষে আগ্রহী হচ্ছে। আর্থিকভাবে লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখি বীজের চাহিদা বাড়লেও বীজের ক্রেতা কম। মধ্যসত্বভোগিদের কাছে কৃষকদের বীজ বিক্রয় করতে হয়। ক্রেতা ও সঠিক দাম পেলে সূর্যমুখি চাষ বাড়বে।
কৃষকরা বলছেন, সূর্যমুখী চাষে এক বিঘা জমিতে খরচ হয় ১২-১৫ হাজার টাকা। সামান্য রাসায়নিক সার আর দুইবার সেচ দিতে হয়। নভেম্বরে বীজ বপনের পর ৮৪ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বীজ সংগ্রহ করা যায়। অন্য ফসলের চেয়ে কম খরচ কারণে এই চাষ করছেন অনেকেই। আগামীতে চাষের আগ্রহও প্রকাশ করছেন কেউ কেউ।
সূর্যমুখি চাষীএ জেড এম সামসুজ্জোহা জানান, ধান পাট চাষের চেয়ে সূর্যমুখি চাষে খরচ কম। তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা করছেন তিনি। সূর্যমুখী চাষ করলে বীজ থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধালিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি একরে ৯ মণ থেকে ১২ মণ বীজ উৎপাদন হয়।
জেলা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ স্বপন কুমার খাঁ জানান, কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সূর্যমুখি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এ বছর ২ হেক্টর জমিতে বারি সূর্যমুখি-২, বারি-৩ ও হাইসান জাতের সূর্যমুখী চাষ করা হচ্ছে। পাশাপাশি কয়েক বিঘা জমিতে প্রদর্শণী প্লট। তিনি আরও বলেন- তেল জাতীয় অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী বীজে তেলের পরিমাণ ৪২-৪৪ শতাংশ বেশি।