মহিলা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণে স্বাবলম্বী হচ্ছে নারী

804

ঢাকা, ১৭ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : এক সময় সংসার চালাতেই হিমশম থেতে হতো জান্নাতুল ফাহিমার। স্বামীর আয় ছিল খুবই সীমিত। নিজের এবং পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়েই শঙ্কিত ছিল চট্টগ্রামের মেয়ে ফাহিমা। বাড়ি চট্টগ্রামে হলেও বিয়ের পর চলে আসে স্বামীর সাথে শ্বশুড় বাড়ী কুমিল্লাতে।
ফাহিমা বলেন, নতুন সংসারে আসার পর থেকেই দেখি অভাব আর অভাব। স্বামীর একার আয়ে পুরো সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। নুন আনতে, পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। আর তাই একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকেও কিছু একটা করতে হবে। তাহলে স্বামীর উপর থেকে কিছুটা চাপও কমবে। আবার সংসারেও সচ্ছলতা আসবে। আমার নিজেরও কিছু আয় হবে। পরে কুমিল্লার লাঙ্গলকোট এলাকায় টেইলরিং এর দোকান দিই। শুরু থেকেই বেচা-বিক্রি ভালো। এখন আরো একটি দোকান দিয়েছি। দুই দোকানে কর্মসংস্থান হয়েছে চারজন মেয়ের। ভাগ্য ভালো যে, আমি বিয়ের আগে চট্টগ্রাম জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর হতে সেলাইয়ের উপর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম, বলেন ফাহিমা।
জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গত পাঁচ বছরে নগরীর বিভিন্ন পোশাক কারখানায় ও বিউটি পার্লারে বিভিন্ন বয়সী অনেক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। এদের মধ্যে আবার কেউ কেউ হয়েছেন উদ্যোক্তা।
অধিদপ্তর সূত্র মতে প্রশিক্ষিত নারীদের মধ্যে পঁয়তাল্লিশ ভাগ নারীই হয়ে উঠেছেন উদ্যোক্তা। এসব নারীরা সমাজের অন্য নারীদের জন্য সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ।
২০১৩ সাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদ এলাকায় কার্যক্রম শুরু করে জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন অধিদপ্তরটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নারীদের জীবনের মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।
ফাহিমার মতই এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাবলম্বী হয়েছেন সাইমা আক্তার, নাদিয়া বেগম, শারমিন, রঞ্জণাসহ আরো অনেকে। বিভিন্ন কারখানায় যারা কাজ করছেন তাদের অনেকেই এখন ভালো বেতনে এবং ভালো পজিশনে কাজ করছেন।
চট্টগ্রামের এক পোশাক কারখানায় ফ্লোর ইনচার্জ হিসেবে কাজ করা সামিয়া বলেন, আমি শুরুতে কারখানার ফ্লোরে সাধারন একজন কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করি। চাকরীর ছয় মাসের মধ্যে আমার কাজে খুশি হয়ে ম্যানেজার আমাকে একটি প্রমোশন দেয়। তার আড়াই বছর পর থেকে আমি ফ্লোর ইনচার্জ হিসেবে কাজ করছি। আর এটা সম্ভব হয়েছে আমার প্রশিক্ষণের কারনে। আমি নিজে খুব চেষ্টা করে কাজ শিখেছি। এখানে মূলত আমার কাজের আগ্রহই বেশি কাজ করেছে। ম্যানেজার আমার কাজের আগ্রহ দেখেই আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, কাজের প্রতি যদি আগ্রহ এবং একাগ্রতা থাকে তবে কোন কিছুই আটকায় না। এখন আমার বেতন নিয়েও আমি সন্তুষ্ট।
নগরীর এক বিউটি পার্লারে কাজ করেন রাইমা আক্তার। শুরুতে বেতন ছিল খুবই অল্প। কিন্তু মাত্র আড়াই বছরের মাথায় পার্লারের মালিক পুরো দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন রাইমার উপর। তার অধীনে এখন কাজ করছেন আরো তিনটি মেয়ে।
রাইমা বলেন, প্রশিক্ষণ শেষ করেই এখানে কাজ শুরু করি। শুরুতে বেতন ছিল যৎসামান্য। তারপরও আমি কাজ করে গেছি। কারন আমি জানি আমাকে কাজ করেই এগিয়ে যেতে হবে। তাই শুরু থেকেই আমি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে থাকি। আবার অন্যরা কীভাবে কাজ করে তাও দেখি।
চট্টগ্রাম জেলা মহিলা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মাধবী বড়ুয়া বলেন, এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক নারীই আজ স্বাবলম্বী। অনেকেই চাকরী করছে। আবার কেউ কেউ হয়েছেন উদ্যোক্তা। সৃষ্টি করেছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ।
তিনি বলেন, এখন অনেক নারীই প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য আসছেন। কিন্তু পর্যাপ্ত আসন না থাকায় সবার সংকুলান হচ্ছে না। তাই আমরা চেষ্টা করছি আরো আসন বাড়ানোর।
বড়ুয়া বলেন, প্রতিটি কোর্সের মেয়াদ তিন মাস। আর প্রতিটি সিজনে দুই ব্যাচে পাঁচটি বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।