দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ : কুমিল্লায় কৃষক পরিবারগুলোর মুখে সূর্যমুখীর হাসি

315

ঢাকা, ১৬ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : হলুদ রঙের নান্দনিক একটি ফুল সূর্যমুখী। দেখতে সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তাই ফুলকে সূর্যমুখী বলে। সূর্যমুখী থেকে তৈরি তেলও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ। বিশ্বেজুড়েই সূর্যমুখী তেলের চাহিদা এখন ব্যাপক। আমাদের দেশেও ক্রমশ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এই তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বাসস জেলা প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখী চাষের চিত্রটুকু তুলে ধরার প্রয়াসে ‘দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে কুমিল্লা জেলায় সূর্যমুখী চাষের চিত্র-
কুমিল্লায় সূর্যমুখী চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সূর্যমুখী চাষ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছে। এর মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিতে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অনেক কম পরিশ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করে গ্রামের কৃষক পরিবারগুলোর সূর্যমুখী চাষে ফুলের মতোই মুখে হাসি ফুটে উঠছে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এর চাষ।
কুমিল্লার বিএডিসির উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। সূর্যমুখী ফুল চাষে সবধরনের সহযোগিতা করার কথা জানালেন বিএডিসি’র কর্মকর্তা।
সূর্যমুখী চাষে কোন ঝুঁকি নেই। এটা খাদ্য শস্যভুক্ত। ভোজ্য তেল ও সব ধরনের সবজির সঙ্গে খাওয়া যায়। পুষ্টিমান অনেক অনেক গুণে বেশি। কোলেস্টেরলমুক্ত তেল। এই অঞ্চলের কৃষকের খাতায় লাভজনক কৃষি ফসল হিসেবে সূর্যমুখী চাষ ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। ফলে দিনদিন চাহিদা বাড়ছে সূর্যমুখীর। সূর্যমুখী ফুলের বীজ সংগ্রহ করার পর বিশাল বিশাল গাছগুলো জমিতে পঁচিয়ে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এতে জমির জৈবসারের ঘাটিত পূরণ হয়। অনেক কৃষক পরিবার তার দৈনন্দিন জীবনে রান্নার কাজের জ্বালানি হিসেবে (খড়ি) ব্যবহার করে থাকে। এতে করে জ্বালানি কাঠের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পায়।
জেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, নতুন লাভজনক ফসল চাষে কৃষককে প্রেরণা যোগাতে মাঠ পর্যায়ে কাজ চলছে। কিভাবে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে দু’ফসলি জমিতে কিভাবে বছরে ৩টি অর্থকরী কৃষি ফসল খাদ্য শষ্য চাষ করা যায়। তা নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। সফলতাও এসেছে। প্রচলিত ফসলের বাইরে গিয়ে বছরে দু’ ফসলি জমিতে ৩টি অর্থকরী কৃষি ফসল আবাদের অংশ হিসেবে জেলার কয়েকটি গ্রামে প্রায় ১২’শ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে। ফুল পেকে ফুলের ভেতরের দানা সংগ্রহ করা হচ্ছে। দানা সবজির সঙ্গে বেটে রান্না করে খাওয়া যায়। তাছাড়াও ভোজ্যতেল হিসেবে খাওয়া যায়।
জেলার চান্দিনা এলাকার চাষী গফুর মিয়া বাসসকে জানান, অন্য ফসলের তুলনায় খরচ কম, সে কারণে লাভ বেশি হওয়ার কারণে সূর্যমুখী চাষ করছেন তারা।
এদিকে, অর্থকরী ফসলের পাশাপাশি, সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য আগ্রহী করে তুলেছে দর্শনার্থীদেরও। ফুল ফোটার মৌসুমে অনেকেই আসছেন সময় কাটাতে। এমনকি, এখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে অনেকে নিজের বাড়ির ছাদে ও জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন। আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে চাষেরও আগ্রহ প্রকাশ করেন। জেলার দাউদকান্দির কৃষক আব্দুর রব বাসসকে বলেন, আমার ৩ শতক জমি আবাদ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। এই ৩ শতক জমিতে বীজ উৎপন্ন হবে ২০ মণ। এই ২০ মণ বীজ থেকে তেল হবে প্রায় ৪০০ লিটার। তেল বিক্রি করতে পারব ১ লাখ টাকা। তিনি আরো বলেন, আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা সূর্যমূখী চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুরজিত দত্ত বাসসকে জানান, সূর্যমুখী চাষে কৃষক পরিবারগুলো ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছে। সূর্যমুখী চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। কৃষক পরিবারগুলো ফুলচাষে লাভের মুখ দেখায় সূর্যমুখী ফুল চাষে ঝুঁকে পড়েছে। সূর্যমুখী চাষ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। কুমিল্লার খামার থেকে উৎপাদিত বীজ দিয়ে কুমিল্লার কমপক্ষে ১০০ চাষী সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছে। এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয় সূর্যমুখী চাষে। আর উৎপাদিত বীজ থেকে আয় হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানী হিসেবেও ব্যবহার করা যয়।