নতুন দু’টি ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ মডেলের এয়ারক্রাফট উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

1138

ঢাকা, ১৪ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিমান বহরে আরো দুটি নতুন এয়ারক্রাফট যোগ করা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেশের বিমানগুলোকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মানোন্নয়নের তাগিদ দিয়েছেন।
তিনি সরকারে আসার পর এ পর্যন্ত ১৬টি নতুন বিমান ক্রয় করে বিমান বহরে যোগ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সর্বমোট এখন ২১টি উড়োজাহাজ আছে এগুলো যেন সুরক্ষিত থাকে এবং যাত্রীসেবায় বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য আমি সকলের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।’
আজ সকালে নতুন ক্রয়কৃত ড্যাশ ৮-কিউ৪০০ মডেলের দুটি উড়োজাহাজ আকাশতরী এবং শে^তবলাকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, ‘বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যারা জড়িত সবাইকে আমি অনুরোধ করবো এটা আমাদের দেশ, লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ আমরা স্বাধীন করেছি। তাই এদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা সকলেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশটা যত উন্নত হবে বা অথনৈতিকভাবে আমরা যত বেশি স্বাবলম্বী হতে পারবো যাত্রী সেবা যত বেশি উন্নত করতে পারবো, তাতে দেশের লাভ হবে। দেশের মানুষের লাভ হবে এবং আমাদের দেশটাও তত বেশি সামনে এগিয়ে যাবে। কাজেই সেদিকে রক্ষ্য রেখে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন- সেটাই আমি চাই।’
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
আমাদের নতুন বিমানগুলোয় ওয়াইফাই প্রযুক্তি সংযোজন করা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিমানে যারা যাতায়াত করেন তাদের বেকার বসে থাকা লাগবেনা, সেখানে বসেই ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজটাও চালাতে পারবেন, সে সুযোগ আমরা তৈরী করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যখন সারা বিশ্বে ঘোরে, বিদেশে যখন যায় তখন বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করে। সেজন্য সব সময় আমাদের প্রচেষ্টা ছিল যে এই বিমান যেন ভালোভাবে, সুন্দরভাবে আমরা গড়তে পারি।
বিমানের সক্ষমতা বাড়ানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, হজযাত্রীরা যখন যান, আগে বাইরে থেকে প্লেন নিয়ে আসতে হতো। এখন আমরা আমাদের নিজস্ব প্লেনেই হাজিদের খুব ভালোভাবে পাঠাতে পারি এবং ফেরত আনতে পারি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন অত্যাধুনিক টার্মিনালের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হযরত শাহজালালে অত্যন্ত আধুনিক টার্মিনাল আমরা নির্মাণ করে দিচ্ছি। যাতে প্লেনসেবাটা আরও উন্নত মানের হয়।
আকাশপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে আসার পর রাজশাহী বিমানবন্দর, বরিশাল বিমানবন্দর, সৈয়দপুর বিমানবন্দর সবই প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল। আমরা ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আবার সেগুলো চালু করি। সরকার সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উন্নতি করছে, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী, বরিশাল সবগুলো বিমানবন্দর যেমন চালু করা হয়েছে পাশাপাশি কক্সবাজার বিমানবন্দরকে উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল এয়াররুটে কক্সবাজার বিমানবন্দর খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.মোকাম্মেল হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে নতুন কেনা বিমান দুটির ওপর ভিডিও তথ্য চিত্রও পরিবেশিত হয়।
বিমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জানায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে সদ্য যুক্ত হওয়া সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত সম্পূর্ণ নতুন ২য় ও ৩য় ড্যাশ ৮-৪০০ ‘আকাশতরী’ ও ‘শ্বেতবলাকা’- বাংলাদেশ ও কানাডা সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে ক্রয় করা ৩টি উড়োজাহাজের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয়।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উড়োজাহাজ দুটির নাম রেখেছেন ‘আকাশতরী’ ও ‘শ্বেতবলাকা’। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স অত্যাধুনিক ড্যাশ ৮-৪০০ দুটি উড়োজাহাজ বহরে যুক্তকরণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও স্বল্প দূরত্বের আন্তর্জাতিক রুট গুলোতে ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এতে সম্মানিত যাত্রীসাধারণ অতি সহজেই তাদের নিদিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন।
কানাডার বিখ্যাত এয়ারক্রাফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডি হ্যাভিল্যান্ড নির্মিত অত্যাধুনিক ৭৪ সিট সম্বলিত নতুন ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজ। ড্যাশ-৮ বিমানটি খুব ছোট রানওয়ে থেকে উড্ডয়নক্ষম ও স্বল্প খরচে নিরবিচ্ছিন্ন ও মসৃণ উড্ডয়নের জন্য বিখ্যাত। এই মডেলের বিমান গুলোতে কেবিন নয়েজ সাপ্রেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। পরিবেশবান্ধব এবং অধিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ এ উড়োজাহাজে রয়েছে হেপা ফিল্টার প্রযুক্তি যা মাত্র ৪ মিনিটেই ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করার মাধ্যমে উড়োজাহাজের অভ্যন্তরের বাতাসকে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ করে যা সম্মানিত যাত্রীগণের যাত্রাকে করে তোলে অধিক নিরাপদ। এছাড়াও এ উড়োজাহাজে বেশি লেগস্পেস, এল ই ডি লাইটিং এবং প্রশস্ত জানালা থাকার কারণে ভ্রমণ হয়ে উঠবে অধিক আরামদায়ক ও আনন্দময়।