বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১ : সেমজার’স-এ স্বপ্ন দেখছেন শারমিন

170

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-১
স্বপ্ন-শারমিন
সেমজার’স-এ স্বপ্ন দেখছেন শারমিন
ঢাকা, ১৩ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগেই কিশোরী বয়সে বিয়ে হয় শারমিনের। এরপর কোলজুড়ে আসে দুই সন্তান। স্বপ্ন নিয়ে কিশোরী বয়সে বিয়ের পিড়িতে বসলেও শেষ পর্যন্ত সুখের হয়নি তার সংসার। অবশেষ বাধ্য হয়েই বিচ্ছেদ ঘটে।
তবুও হাল ছাড়েননি শারমিন। দুই সন্তান নিয়ে জীবনযুদ্ধে নতুন করে অবতীর্ণ হন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার এই নারী। নয় বছরের সংসার জীবন শেষে নিজেকেই নিজের দায়িত্ব নিতে হয়। বিচ্ছেদের পর থেকে একাই লড়ে চলেছেন। শারমিনকে স্বচ্ছল ও স্বাবলম্বী জীবনের পথ দেখিয়েছে তার নিজেরই উদ্যোগ অনলাইন ব্যবসা ‘সেমজার’স’।
নিজের ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমকে পুঁজি করে সমাজে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করেছেন শারমিন। অনেক কষ্টের জীবনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বিয়েটা যখন ভেঙে গেল তখন দুই সন্তান নিয়ে অকুল পাথারে পড়েছিলাম। সেখান থেকেই যেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে পথ চলতে শুরু করি। এখন আলহামদুলিল্লাহ, বেশ ভালো আছি।’
এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ-চারিতায় শারমিন জানালেন, ২০০৯ সালে তিনি দশম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায়। সংসার সামলে ২০১০ এর এসএসসি পরীক্ষার্থী শারমিন শেষ পর্যন্ত এসএসসি পাস করেন ২০১৪ সালে। তবে ইচ্ছা থাকলেও শ্বশুরবাড়ির নিষেধাজ্ঞায় আর পড়াশুনা করতে পারেননি।
পারিবারিক টানাপোড়নের মধ্য দিয়েই ৯ বছর সংসার করার পর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে তার। শারমিনের ভাষ্য, দুই ছেলে নিয়ে বাবার বাড়ি যখন এলাম তখন চোখে অন্ধকার দেখছিলাম। এ অবস্থায় আর কোনো স্বপ্ন দেখতে পারছিলাম না। তবে এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিই- আমার জীবন আমাকেই গড়তে হবে। কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে সিদ্ধান্ত নেন, একাই লড়ে যাবার। আর সেই থেকে শুরু।
তিনি বলেন, আমার যখন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলো তখন বুঝলাম যে, একজন নারীর জন্য শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আগে থেকেই ইচ্ছে ছিলো নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। কিন্তু অল্প বয়সে বিয়ের কারণে তা পূরণ করতে পারেনি। তবে বিয়ের পর যে আঘাত পেয়েছি, তা আমাকে অনেক উদ্বুদ্ধ করেছে লুকানো স্বপ্নগুলো নিয়ে আবার কাজ করার।
এরপরই উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন শারমিন। তবে জানালেন, প্রথমবার এই উদ্যোগে পরিবারের উৎসাহ কিংবা সহযোগিতা সেভাবে পাননি। বললেন, সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পরিবারের অনুৎসাহ সত্ত্বেও প্রথমে কুমিল্লা শহরে আমি একটি বিউটি পার্লার দিয়ে কাজ শুরু করি। সেখানেও আমার সাবেক স্বামী অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
‘তাদের কারণে আমাকে আমার প্রথম প্রজেক্ট শুরু করার দুই মাসের মধ্যেই থামিয়ে দিতে হয়। আমি যখন অফলাইনে কিছু করতে পারছিলাম না, তখনই আইডিয়া আসে অনলাইনে কাজ করার। বাসায় থেকে এক রকম গোপনেই অনলাইনে কাজ শুরু করি।’
তিনি বলেন, এরপর ‘বিউটি জোন বাই শারমিন মেকওভার’ নামে একটি অনলাইন পেজ চালু করি। সেখান থেকে রূপচর্চা বিষয়ক বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের পাশাপাশি পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করি। এরপর সেমজার’স নামক আরেকটি পেজ চালু করি। এই পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশন পোশাক বিক্রি করি।
শুরুতে বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেলেও বর্তমানে ব্যবসায় ভালো করছেন জানালেন শারমিন। তিনি বলেন, আমি যেসব পণ্য নিয়ে কাজ করি সেগুলোর নতুন চালান আসার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশন পোশাকের কাপড় সংগ্রহ থেকে শুরু করে সেগুলোর প্যাকেজিং এবং কুরিয়ার এজেন্সি পযন্ত পৌঁছে দেওয়ার কাজ আমিই করি।’
প্রত্যয়ী এই উদ্যোক্তা বলেন, পোশাকের ডিজাইন আমি নিজেই করি। তাই আমার পোশাকের নকশা ইউনিক। অন্যদের থেকে আলাদা হওয়ায় গ্রাহকেরা তাদের পোশাক আমার কাছ থেকে করিয়ে নিতে পছন্দ করেন। শুরুতে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না।
রাজধানীর ইসলামপুর, চকবাজারসহ এসব পণ্য যেসব সম্ভাব্য জাগায় পাওয়া যায় সবখানে ঘুরে ঘুরে তাকে কাজ করতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
সম্ভাবনাময়ী এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, আমার স্বপ্ন হচ্ছে ঢাকায় নিজের একটা অবস্থান, পরিচয় তৈরি করা। আমি যখন ঢাকায় থাকি সন্তানদের জন্য মন খুব কাঁদে। কিন্তু কাঙ্খিত অবস্থানে পৌঁছাতে পারলে ওদের আমার কাছে নিয়ে আসব।
রাজধানীর বনশ্রীতে আউটলেট চালু করার বিষয়ে কাজ চলছে জানিয়ে শারমিন বলেন, ইচ্ছে আছে এমন অন্তত তিনটি আউটলেট গড়ে তোলার। শুধু আমি না, আমার মতো অন্য আরও যেসব নারীরা আছেন, তাদের জন্যও কিছু করতে চাই আমি।
নারী ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের অনলাইন প্লাটফর্ম ‘উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম’ বা উই এ তথ্য মতে, অনলাইন প্লাটফর্মটিতে দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করছে এমন উদ্যোক্তার সংখ্যা ৬ লাখ ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে। এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
উই-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, উই-কে আমরা অনন্য উচ্চতায় দেখতে চাই। লাখ লাখ মানুষের একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা খুব সহজ নয়। এক্ষেত্রে আমরা উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা করতে চাই। যাতে উদ্যোক্তাদের কল্যাণ সাধিত হয়।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/ফই/মহ/০৯১৮/স্বব