শিশুর নামকরণের মতোই জন্মনিবন্ধন করাকে প্রাধান্য দিতে হবে

506

ঢাকা, ১১ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : জন্ম নিবন্ধন প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। শিশুর মা-বাবা বা অভিভাবক এবং তথ্য সংগ্রহকারীর সদিচ্ছায় জন্ম নিবন্ধন নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট। জন্ম নিবন্ধন শিশুর জাতীয়তা, বয়স, নামকরণ, স্থায়ী ঠিকানা, পিতামাতার নাম ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ের নিশ্চয়তা দেয়। এ অধিকার নিশ্চিত করতে সবার আগে শিশুর মা-বাবা বা অভিভাবককে এগিয়ে আসতে হবে। জন্মের পর আনুষ্ঠানিকভাবে নামকরণের মতোই শিশুর জন্মনিবন্ধন করাকে প্রাধান্য দিতে হবে। জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে শিশুর জন্মনিবন্ধন করতে হবে।
দেশের সব মানুষকে জন্মনিবন্ধনের আওতায় আনার লক্ষ্যে ২০০১ সালে ইউনিসেফ এবং বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক সহায়তায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তখন হাতে কলমে প্রতিটি মানুষের জন্ম ও মৃত্যুসনদ দেয়া হতো। আগের আইন স্থগিত করে ২০০৪ সালে সরকার ‘জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন-২০০৪’ পাশ করে। আইনটি ২০০৬ সালের ৩ জুলাই থেকে কার্যকর হয়। ২০১০ সাল থেকে অনলাইনে জন্মসনদ দেয়া আরম্ভ হয়। ২০১৬ সালে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন প্রকল্পটি সমাপ্ত হয়। এরপর থেকে সরকার এই কার্যক্রমটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করে এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে ‘জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন রেজিস্টার জেনারেল কার্যালয়ের’ মাধ্যমে পরিচালিত করছে।
শিশুর জন্ম নিবন্ধণ শতভাগ সফল করার জন্য প্রতিবছর জাতীয় ভাবে জন্ম নিবন্ধন দিবস উদযাপন করা হয়। শিশুর জন্ম নিবন্ধনের গুরুত্ব সম্পর্কে সকল অভিভাবক সোচ্চার হোক, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্মনিবন্ধন হোক এই প্রত্যাশা সকলের।
নিবন্ধন রেজিস্টার জেনারেল কার্যালয় সুত্রে জানা যায় শুরু থেকে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার ৯০০ জনের জন্মনিবন্ধন হয়েছে । এর মধ্যে ২০২০ সালে ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার ৪০০ জনের মৃত্যুনিবন্ধন হয়েছে।
বর্তমানে দেশে ১৬টি মৌলিক সেবা পাওয়ার জন্য জন্মনিবন্ধন প্রয়োজন। এগুলো হচ্ছে- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, বিয়ের নিবন্ধন, ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি, জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান, পাসপোর্ট, সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় নিয়োগ, ব্যাংক হিসাব খোলা, গ্যাস-পানি-টেলিফোন-বিদ্যুতের সংযোগ, ট্যাক্স আইডেনডিফিকেশন, টিআইএন, ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহন নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, আমদানী ও রপ্তানী লাইসেন্স, ঠিকাদারী লাইসেন্স, জমির নিবন্ধন এবং বাড়ির নকশা অনুমোদন।
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি বন্টন, পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে মৃত্যু নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। মৃত্যু নিবন্ধিত না হলে দেশের প্রকৃত জনসংখ্যার পরিমান নির্ধারণ করা কঠিন। মৃত্যুনিবন্ধন করতে হলে মৃত ব্যক্তির জন্মনিবন্ধন থাকতে হবে। জন্মনিবন্ধন করা না থাকলে মৃত ব্যক্তির আগে জন্মনিবন্ধন করতে হবে, এরপর তার মৃত্যুনিবন্ধন করতে হবে।
জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন আইন-২০০৪ অনুযায়ী জাতি, ধর্ম, বর্ন, গোষ্ঠি, লিংগ নির্বিশেষে সব ব্যাক্তির জন্ম নিবন্ধন বাধ্যতামুলক। একটি শিশুর জন্ম নিজ দেশকে, বিশ্বকে আইনগত ভাবে জানান দেওয়ার একমাত্র পথ জন্মের পর জন্ম নিবন্ধন করা। রাষ্ট্রিয় নানা সুযোগ সুবিধা পেতে এই নিবন্ধন জরুরী। শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। এই নির্দিস্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধন না করলে পরবর্তীতে ৫ বছর পর্যন্ত ২৫ টাকা, ৫ বছরের পর ৫০ টাকা ফি দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। পল্লী এলাকার শিশু জন্ম নিলে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদে, পৌর এলাকার পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এলাকার নির্ধারিত সিটি কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সংশ্লিষ্ট ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এবং বিদেশে জন্মগ্রহণকারী কোন বাংলাদেশীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুতাবাসে শিশুর জন্ম নিবন্ধন করতে পারবেন।
দেশে এখন পর্যন্ত যাদের জন্মনিবন্ধন করা হয়েছে তাদের মধ্যে অসংখ্য দ্বৈততা রয়েছে। কেউ ঢাকার বাইরে থেকে জন্মনিবন্ধণ করেছে, আবার ঢাকা থেকেও জন্মনিবন্ধন করেছে। কেউ আবার জন্মনিবন্ধন সনদ হারিয়ে ফেলার কারনে নতুন করে আরো একটি জন্মনিবন্ধন সনদ গ্রহণ করেছে। ফলে মোট জন্মনিবন্ধনের সংখ্যা সঠিক ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এই দ্বৈততা বন্ধ করার জন্য ২০১৪ সালে জন্মনিবন্ধন দিবসের প্রধান প্রতিপাদ্য ছিল ‘জন্ম একবার, নিবন্ধনও একবার’। কিন্তু সেই প্রচারও কাজে আসেনি। তবে এখন সার্ভারের মাধ্যমে জন্মনিবন্ধনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সুতরাং খুব শিগগিরই এই সমস্যা দূর হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।