দেশে এইডস আক্রান্তদের মধ্যে ২১ শতাংশ নারী

555

ঢাকা, ১২ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রমিজ উদ্দিন (ছদ্মনাম) গত কয়েক মাস আগে বিদেশ থেকে দেশে এসেছে। আসার এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করেন তারই গ্রামের এক মেয়েকে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই মেয়েটির মনে হয় তার স্বামী পুরোপুরি সুস্থ নয়। প্রায়ই রাতে তার জ্বর আসে। সারাক্ষণ কেমন যেন ঝিম মেরে থাকে। কারো সাথে খুব বেশি কথাও বলে না। মনে হয় মেজাজ সব সময় খিটখেটে থাকে।
শুরুতে বেশ কয়েকবার ডাক্তার দেখাতে বললেও ডাক্তারের কাছে যেতে নারাজ রমিজ। পরে অনেকটা জোর করেই নিয়ে যাওয়া হয় ডাক্তারের কাছে। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানা গেল তার এইচআইভি পজিটিভ। ডাক্তারের কথা শুণে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে মেয়েটির। সাথে সাথে সেও সব ধরনের পরীক্ষা করে। জানতে পারে সেও এইচআইভি পজিটিভ।
পরিসংখ্যান মতে, দেশে নতুনভাবে ৬৫৮ জনের শরীরে এইচআইভি এইডস শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৭৬ শতাংশ পুরুষ, ২১ শতাংশ নারী এবং তিন শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে নতুনভাবে আক্রান্ত হওয়া এসব ব্যক্তির মধ্যে বিবাহিতদের সংখ্যাই বেশী। এদের আনুপাতিক হার ৭০.৬ শতাংশ। আর অবিবাহিতদের হার ২৩.১৬ শতাংশ। এছাড়াও দেশে বর্তমানে এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা ১৪ হাজারেরও বেশি।
অন্য দিকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে মধ্যে ১২৪ জনের শরীরে এইচআইভি এইডস পজিটিভ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. সামিউল ইসলাম বলেন, নভেম্বর ২০১৯ থেকে নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত এক বছরে ১৩,৩২,৫৮৯ জন এইচআইভি এইডস শনাক্তকরণ পরীক্ষা করেছেন। এরমধ্যে নতুনভাবে ৬৫৮ জন শনাক্ত হয়েছেন। যার মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ৭৬ শতাংশ, নারী ২১ শতাংশ এবং তিন শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গ। ১২৪জন রোহিঙ্গা।
এছাড়াও নতুনভাবে শনাক্ত হওয়া এসব বিবাহিত রয়েছেন ৭০.৬ শতাংশ, অবিবাহিত ২৩.১৬ শতাংশ। এই সময়ে মারা গেছেন ১৪১ জন। এই রোগে সর্বমোট মৃত্যুবরণ করেছেন ১৩৮৩ জন।
তিনি বলেন, নতুনভাবে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগে নতুন শনাক্ত হয়েছেন ২১৮ জন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ১২৭ জন, খুলনায় ৬৪জন, সিলেটে ৪৫জন, বরিশালে ২৮জন, রাজশাহীতে ২৭জন, এবং ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে ১৫জন শনাক্ত হয়েছেন।
এছাড়াও নতুন আক্রান্তদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১২.২৪ শতাংশ ৫০ বছরের উর্ধ্বে, ৭৪.২০ শতাংশ ২৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে, ৮.৮৫ শতাংশ ১৯ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে এবং ২.০৭ শতাংশ ১০ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে।
সূত্র মতে, সাধারণ জনগণের মধ্যে এইচআইভি এইডস সংক্রমনের হার ০.০১ শতাংশের নিচে। আর এটা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র বর্তমান সরকারের কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপের কারনে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপকহারে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরীতে। মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন। আগে যৌনকর্মীরা অসেচতন থাকলেও এখন তারা অনেক বেশী সচেতন। এছাড়াও বিশেষ করে বিদেশ ফেরত প্রবাসী ভাইয়েরাও এখন অনেক বেশী সচেতন।
ডা. সামিউল বলেন, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩.৮০ কোটি মানুষ এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত। এরমধ্যে নতুন আক্রান্ত হয়েছে ১.৮০ কোটি।