বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২ : উচ্চ আদালতে সাত নারীর পদচারণা

107

বাসস ইউনিসেফ ফিচার-২
নারী- আদালত
উচ্চ আদালতে সাত নারীর পদচারণা
ঢাকা, ১১ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : নারী ভগিনী, নারী মাতা, নারী দুহিতা- এই নারী যেমন ঘর সংসার সামলান, তেমনই রাষ্ট্র পরিচালনা করেন। এই নারী,পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দেশের অর্থনীতির চাকা। একটা সময়ে উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চলে নারীরা শুধু পরিবার সামলে দিনাতিপাত করতেন।
কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে, এখন নারী রান্না ঘর পেরিয়ে, কৃষি ক্ষেত্র পেরিয়ে খেলার মাঠেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, বিচারকাজÑ সব ক্ষেত্রেই রয়েছে নারীর সাফল্যের ছোঁয়া।
বর্তমান সরকারের বাস্তবমুখী উদ্যোগের ফলেই এসব সম্ভব হয়েছে। নিজ নিজ দক্ষতা ও যোগ্যতার বদৌলতে উচ্চ আদালতে মেধার স্বাক্ষর রেখে চলছেন নারী বিচারপতিরা।
জানা যায়, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ১০ হাজার ৩৬৩ সদস্য রয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৩৭ জনই নারী। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান নাজমুন আরা সুলতানা। এরই মধ্যে তিনি অবসরে গেছেন। তার প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও বিচারিক ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ এ পদে নারীদের অংশগ্রহণের পথ আরও সুগম করে।
বর্তমানে উচ্চ আদালতে সাতজন নারী বিচারপতি রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই স্বমহিমায় ভাস্বর। বিচারাঙ্গনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নির্ভীক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তারা প্রতিষ্ঠা করে চলেছেন ন্যায়বিচার।
উচ্চ আদালতে দায়িত্ব পালন করা নারী বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, ফারাহ মাহবুব, নাইমা হায়দার, কৃষ্ণা দেবনাথ, কাশেফা হোসেন, ফাতেমা নজীব ও কাজী জিনাত হক।
প্রথম নারী বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, উচ্চ আদালতে নারী বিচারপতির সংখ্যা আনুপাতিক হারে কম। তবে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এ সংখ্যা ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই আরও বাড়বে।
‘ সারাদেশের নিম্ন আদালতগুলোয় সাড়ে পাঁচশর মতো নারী বিচারক দায়িত্ব পালন করছেন। এটা অনেক বড় অগ্রগতি,’ যোগ করেন তিনি।
এ দিকে বাংলাদেশের প্রথম নারী ব্যারিস্টার রাবেয়া ভূঁইয়ার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের নারীরা আগের চেয়ে বেশ এগিয়ে গেছেন। এটা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
ব্যারিস্টার রাবেয়া বলেন, আইন অঙ্গনে নারীরা মোটামুটি ভালোভাবে এগিয়ে চলছে। যদিও আইন পেশায় নারীদের কিছুটা প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে তা মোকাবেলা করে তারা পুরুষের সঙ্গে সমানতালে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী:
বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরীর বাবা সাবেক বিচারপতি এ টি এম মাসুদ। ১৯৮১ সালের ২২ আগস্ট তিনি ঢাকা জেলা জজ আদালতে আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৮৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।
আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ১৯৯৬ সালের ১৪ মে। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। দুই বছর পর অর্থাৎ ২০০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টের বিচারপতি হন তিনি।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএলএম পাসের পর ১৯৯২ সালে জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব। ১৯৯৪ সালের ১৫ অক্টোবর হাইকোর্টে এবং ২০০২ সালের ১৫ মে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন তিনি। ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০০৬ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি নাইমা হায়দার:
বিচারপতি নাইমা হায়দার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এছাড়া কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কেল বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন।
১৯৯৩ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী এবং ২০০৪ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি ২০০৯ সালের ৬ জুন হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১১ সালের ৬ জুন হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ:
বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে লেখাপড়া সম্পন্ন করার পর মুনসেফ হিসেবে ১৯৮১ সালের ৮ ডিসেম্বর বিচার বিভাগে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯৮ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এর দুইবছর পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি কাশেফা হোসেন:
বিচারপতি কাশেফা হোসেন ইংরেজি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার পর একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া লন্ডনেও একই বিষয়ে পড়াশোনা করেন তিনি।
এরপর ১৯৯৫ সালে জেলা আদালতে আইন পেশায় যোগ দেন। পরে ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান কাশেফা হোসেন।
বিচারপতি ফাতেমা নজীব:
নরসিংদীর জেলা ও দায়রা জজ বেগম ফাতেমা নজীব ২০১৮ সালের ৩০ মে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০২০ সালের ৮ জুন তাকে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বিচারপতি কাজী জিনাত হক
২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর কাজী জিনাত হক হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে তিনি দুই মেয়াদে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
বাসস/ইউনিসেফ ফিচার/সুঘো/মহ/১৭৪৮/স্বব