বাসস দেশ-১৩ : দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ : টাঙ্গাইলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে

107

বাসস দেশ-১৩
সূর্যমুখী-টাঙ্গাইল
দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ : টাঙ্গাইলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে
ঢাকা, ১১ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : হলুদ রঙের নান্দনিক একটি ফুল সূর্যমুখী। দেখতে সূর্যের মত এবং সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে, তাই ফুলকে সূর্যমুখী বলে। সূর্যমুখী থেকে তৈরি তেলও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ। বিশ্বেজুড়েই সূর্যমুখী তেলের চাহিদা এখন ব্যাপক। আমাদের দেশেও ক্রমশ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন জেলায় বাণিজ্যিকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে। পুষ্টিবিদদের মতে, সূর্যমুখীর তেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা খুবই কম এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, ডি এবং ই। এই তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
বাসস জেলা প্রতিনিধিদের সহযোগিতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে সূর্যমুখী চাষের চিত্রটুকু তুলে ধরার প্রয়াসে ‘দেশজুড়ে বাড়ছে সূর্যমুখীর আবাদ’ শীর্ষক ধারাবাহিক প্রতিবেদন তুলে ধরা হচ্ছে। আজ থাকছে টাঙ্গাইল জেলায় সূর্যমুখী চাষের চিত্র-
জেলার মির্জাপুরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল। কম খরচে লাভজনক হওয়ায় বারি সূর্যমুখী-২ (উপসী জাত) চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন ৫ চাষি। পাশাপাশি মনমুগ্ধ এই ফুল দেখতে ভিড় করছেন সৌন্দর্য্য প্রেমীরা। এ ফুল চাষে ব্যাপক স¤প্রসারণ সম্ভব বলে দাবি কৃষি অফিসের।
সরজমিন ঘুরে চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, এ বছর মির্জাপুর উপজেলাতে তারাই সর্বপ্রথম এই ফুল চাষ করেছেন। আবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় সূর্যমুখী ফুল চাষে সাফল্য আসবে এমনটিও আশা তাদের। পাশাপাশি ফুল থেকে উৎপাদিত তেল ও বীজ বিক্রি করে অধিক লাভবান হবেন এমনটিও মনে করছেন খেটে-খাওয়া এই চাষিরা। মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহন এলাকায় কৃষি বিভাগের প্রণোদনায় বাণিজ্যিকভাবে ৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করেন উদ্যোক্তা চাষি মিলন। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকেই পুরো বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এতেই সবার নজর পরে সূর্যমুখী বাগানে। যতোদূর চোখ যায় দেখে মনে হয় বিশাল আয়তনের হলুদ এক গালিচা। চোখে পড়ে শুধু সূর্যমুখী ফুল। আর এই ফুলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে মনোরম দৃশ্য স্মৃতির পাতায় বন্দি করছেন অনেকেই। সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ফুটে থাকা এই ফুল দর্শনার্থীদের টানছে এক আমোঘ আকর্ষণে। ফুল ফোটার শুরু থেকেই প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী সূর্যমুখী বাগানে আসতে শুরু করেছে। হলদে ফুলের সমারোহে হারিয়ে যেতে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন সূর্যমুখী বাগানে।
এদিকে সূর্যমুখী ফুল চাষিদের সকল ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ মশিউর রহমান। কৃষি অফিস তথ্যমতে, চলতি বছর টাঙ্গাইল জেলাসহ মোট ১২টি উপজেলায় এ ফুল চাষ করা হয়েছে। এ মৌসুমে মির্জাপুর উপজেলায় ২ দশমিক ৫ টন বীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় মির্জাপুর উপজেলার লতিফপুর ইউনিয়নে ৫ জন কৃষককে সরকারিভাবে প্রতি বিঘা জমিতে চাষের জন্য ১ দশমিক ৫ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওটি সার বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে।
লতিফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, এই ফসলটি মির্জাপুর উপজেলার চাষিদের জন্য সুখবর বয়ে আনতে যাচ্ছে। খুব অল্প টাকায় বেশি মুনাফা সম্ভব এই চাষের মাধ্যমে। এই ফুলের বীজ থেকে আমরা যে তেল পাবো সেটায় ক্ষতিকর কলেস্টেরল নেই। পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী ফুল চাষের জন্য কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। বাজারে সরিষা ভাঙ্গানোর মেশিনের মাধ্যমেই এই বীজ ভাঙ্গিয়ে আমরা খাবার তেল পেতে পারি। পরীক্ষামূলক ৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষে আমরা ১৫০০-১৬০০ কেজি বীজ আশা করছি। যেখান থেকে আমরা তেল উৎপাদন করতে পারবো।
মির্জাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, এ উপজেলায় সর্বপ্রথম সরকারি প্রণোদনায় সূর্যমুখী বীজ ও সার সহায়ক হিসেবে দেয়া হয়েছে। দেশের মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিতে এ ফুলের চাষ করা হয়েছে। এ সূর্যমুখী ফুল থেকে উৎপাদিত তেলে ৪০ ভাগ লিনোলিক এসিড থাকে যা হার্টের জন্য অত্যন্ত ভালো। এ ফুল থেকে তেল উৎপাদন করতে পারলে দেশের মানুষের ভোজ্য তেলের যে চাহিদা তা এই ফুলের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারলে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত তেল খেতে পারবে। এ ফুল চাষে চাষি লাভবান হবেন বলেও আশা করেন তিনি। চাষি মিলনের মাধ্যমে পরবর্তী বছরে সারা মির্জাপুর উপজেলায় এ ফুল চাষের খবর ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব বলে দাবি করেন এবং ইতিমধ্যেই অনেক কৃষক এ সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বাসস/এনডি/বি.প্র./ সংবাদদাতা/১৫৪৭/কেজিএ