নারীর সামগ্রিক উন্নয়ন বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার

600

।।সালমা আফরোজ।।

ঢাকা, ৯ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করা মেয়ে মৌসুমী ইসলাম। কাজ করেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে অভ্যর্থনা কর্মী হিসেবে। বাবা বেঁচে নেই, থাকেন বড় ভাইয়ের সংসারে। কিন্তু ভাবী সেটা পছন্দ করেন না। একদিন হঠাৎ করে এলাকার আলম নামে এক ছেলে, না, ছেলে বললে ভুল হবে লোক বলাই শ্রেয়। কারণ সেই লোকের ঘরে বিদেশি বউ আছে তার সাথেই মৌসুমীর বিয়ে হয়ে গেল। ও কিছু বলতে পারল না। বাবা নেই, ভাইয়ের সংসারে কতদিন থাকা যায়! মোটামুটি দিন কাটছিল, যন্ত্রনা শুরু হলো-যখন বিয়ের তিন মাস পরও মৌসুমী কনসিভ করছিলনা তখন থেকেই। মৌসুমী কনসিভ করছেনা দেখে স্বামীর সে কি রাগ। শুরু হলো মানসিক যন্ত্রনা। তারপর ঠিক এক বছর পর ডিভোর্স। মৌসুমীকে বাধ্য হয়েই ফিরতে হলো ভাইয়ের বাড়িতে। এরপর শুধু ভাবে সে কি করবে! হঠাৎই একদিন মনে পড়ল- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী দিবসে বলেছিলেন, নারী যত স্বাবলম্বী হবে একটা সমাজ তত দ্রুত এগিয়ে যাবে। তাহলে মৌসুমী কেন চাকরী করেও ভাইয়ের বাসায় থেকে প্রতিনিয়ত অপমানিত হবে! যেই ভাবা সেই কাজ, ও চলে গেল নীলক্ষেতে কর্মজীবি মহিলা হোস্টেলে।
ঢাকার মিরপুরের পল্লবী এম আই মডেল হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা সুলতানা জামান বলেন, বর্তমানে আমাদের স্কুলে ১৭ জন পুরুষ শিক্ষিক এবং নারী শিক্ষক ১৬ জন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহনাজ পারভীন বলেন, সরকারি নানা সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ফলে মেয়েদের পড়ালেখায় আগ্রহ বাড়ছে। আগের কয়েক বছরের তুলনায় মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় মেয়ের সংখ্যা বেড়েছে। আমি যে ভর্তি পরীক্ষায় গার্ড দিতে যাই সেখানে ৭০জনের মধ্যে ৪০ জনই থাকে মেয়ে।
পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, দিনকে দিন বিভাগে নারী সদস্য বাড়ছে। তারা সব রকম সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে বলেই আশা করা যাচ্ছে তাদের সংখ্যা আরও বাড়বে।
অসহায় নারীদের ব্যাপারে প্রতিক্ষণ ফাউন্ডেশনের প্রধান হেলেনা কবীর বলেন, প্রথমত এসব নারীদের উচিত হবে নিজেদের দুর্বল না ভাবা। আমার এই প্রতিষ্ঠানে অনেক অবহেলিত নারী আছেন যাদের বিভিন্ন হাতের কাজ শিখিয়েছি। তারা এখন স্বাবলম্বী। প্রতিক্ষণের মত প্লান ইন্টারন্যাশনাল, শিশু অধিকার ফোরাম, আশা’র মত অনেক প্রকল্প রয়েছে। এসব এনজিও ফাউন্ডেশন নারী ও শিশুদের চিকিৎসা সহায়তা, আইনি সহায়তা ও পুনর্বাসনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। রয়েছে সরকারের নানা পদক্ষেপ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখা যাচ্ছে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষকতার ক্ষেত্রে বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী নিয়োগ দিতে হয়। এসব পদক্ষেপের কারণে চাকরিতে নারীর সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে।’
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে নারীর অবস্থান। মেধা আর দক্ষতায় এগিয়ে চলছে তারা। নারী কিন্তু আমাদের সকলের জীবনেরই একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জীবনের অঙ্গ। তাদের বাদ দিয়ে পুরুষরাও কিন্তু নিরাপদ নন। এ বিষয়গুলো অনুধাবন করতে পারলে অবশ্যই নারীর নিরাপত্তা, নারীর অগ্রগতি, নারীর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পুরুষরাই সহযোগিতা করবেন অগ্রণী হয়ে।
অতীতে আর্থ-সামাজিক কাঠামোর কারণে শিক্ষার অভাবে নারীরা পুরুষতান্ত্রিক পরিবেশে দুঃসহ জীবনযাপন করত। এখন দিন পাল্টে গেছে। এখন তারা শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে, সরকার তাদের সব ক্ষেত্রে সব রকম সুবিধা দিচ্ছে, চাইলেই সে বুঝে নিতে পারে, তাকে কি করতে হবে। নারীদের অধিকার আদায়ে তাদের সচেতন হতে হবে। পুরুষ যেমন মানুষ, তেমনি নারীও মানুষ। একজন মানুষ হিসেবে তাদেরও ইচ্ছামতো জীবনযাপন করার অধিকার আছে। তাই নিজেদের কোনোভাবেই দুর্বল ভাবা যাবেনা। নারীদের আত্মনির্ভরশীল ও অধিকার সচেতন হতে হবে। জন্মগত অধিকার সবার থাকে, সেটা কার্যকর করার মতো শুধু সাহস থাকতে হবে আর সাহসী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে নারীদের। তাই নিজেদের জন্যই নারীদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, কুসংস্কার, অপশিক্ষা যাতে নারীদের দমিয়ে রাখতে না পারে।
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে দেশে আইনের কোনো ঘাটতি নেই। আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সমাজে তাদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোসহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি কৌশল ও পদক্ষেপ নিলে নারী নির্যাতনের মাত্রা কমানো সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার পাশাপাশি প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। এছাড়া নির্যাতনের ঘটনা গোপন না করে তা প্রকাশ করার ব্যবস্থা করতে হবে। দুষ্কৃতিকারীদের প্রকৃত মুখোশ খুলে দিতে নারীকে সাহসী হয়ে সকলের সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে সামনে।