বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের প্রতিটি শব্দ পরিকল্পিত জনযুদ্ধের নির্দেশনা : চসিক মেয়র

338

চট্টগ্রাম, ৭ মার্চ ২০২১ (বাসস) : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ একটি শোষিত নির্যাতিত ও নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে মুক্তিযুদ্ধে উদ্দীপ্ত করেছিল। তাঁর এই আঠারো মিনিটের ভাষণে প্রতিটি শব্দ ও বাক্য একটি পরিকল্পিত জনযুদ্ধের নির্দেশনা। তাই এ ভাষণটি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে আজ বিশ^ব্যাপী সবচেয়ে বেশি সমাদৃত।
মেয়র আজ সকালে থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতীয় দিবস পালনোপলক্ষে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা যারা রণাঙ্গনে ছিলাম এবং অস্ত্র হাতে হানাদার বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি ছিল আমাদের জন্য যুদ্ধজয়ের মন্ত্র। ৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর এই ভাষণটি নিষিদ্ধ ছিল। এমনকি বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করাটাও কঠিন ছিল। দীর্ঘ একুশ বছর বাংলাদেশ পাকিস্তানি ভাবধারায় পরিচালিত হওয়ায় মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিসর্জন দেয়া হয়েছিল। তিনি ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে একটি কৌশলগত নির্দেশনা হিসেবে অভিহিত করে বলেন, অনেকেই এক সময় বলতেন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি কেন ? এর উত্তর হল, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তিনি যদি ৭ মার্চ সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করতেন তাহলে পাকিস্তানিরা তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতো এবং ৭ মার্চ রেসকোর্সে পাকিস্তানি বাহিনী বোমা হামলা চালিয়ে ও ঢাকা নগরীকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে হত্যা করতো। কৌশলী বঙ্গবন্ধু তা বুঝতে পেরে ভাষণে বাঙালির আশা-আক্সক্ষাকা ও স্বপ্নের কথা এমনভাবে উপস্থাাপন করেছিলেন যে, তিনি যুদ্ধ চান না, বাঙালির অধিকার চান এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর চান। তিনি তাঁর ভাষণটি শেষ করেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাক্য উচ্চারণ করে। তাহলে আমরা বলতে পারি, এই ভাষণে স্বাধীনতা ঘোষণার বাকি আর কি থাকতে পারে?
চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগীর, চসিকের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, কুলগাঁও সিটি কর্পোরেশন কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুল হক খান এবং কর কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী।
আলোচনা সভার পূর্বে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শিত হয় এবং আলোচনা সভাশেষে উদ্দীপনামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।
এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন উপলক্ষে আজ বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সম্মুখ চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী বলেছেন, ৭ মার্চের ভাষণ বাঙালি জাতিসত্তা জাগরণের ঐতিহাসিক দলিল। এই দিনটি জাতীয় দিবস পালনের সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও আমরা ঘরে ঘরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে পারিনি।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, আজকের বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশের অভিধায় অভিষিক্ত হয়েছে। এটা আত্মতৃপ্তি নয়, ধৈর্য্য ও নিষ্ঠায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ দিয়ে গেছেন। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতিকে বিশ্বে মর্যাদা এনে দিয়েছেন।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সহ সভাপতি আলহাজ নঈম উদ্দিন চৌধুরী, এড. সুনীল কুমার সরকার, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু ও আইন বিষয়ক সম্পাদক এড. শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।
এছাড়া, আজ সকালে সংগঠনের দারুল ফজলস্থ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান, বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিনব্যাপী মাইকযোগে প্রচারসহ নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়।