বাসস দেশ-১ : স্বপ্ন দেখাচ্ছে সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ নদী বন্দর

154

বাসস দেশ-১
নদী-বন্দর
স্বপ্ন দেখাচ্ছে সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ নদী বন্দর
// আরিফুল আমীন রিজভী //
ফেনী, ৫ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘেঁষে অনুমোদনের অপেক্ষায় সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ নদী বন্দর। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এসব তথ্য বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের দপ্তর সূত্র নিশ্চিত করেছে।
চেয়ারম্যানের সমন্বয় কর্মকর্তা সেলিম শেখ জানান, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রতিবেদন ও সুপারিশসহ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এর পর তা আইন মন্ত্রণালয়ে যাবে।
সোনাগাজীতে নদীবন্দর স্থাপিত হলে অর্থনীতিতে সুবাতাস বইবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।
এ প্রসঙ্গে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, নদী বন্দর বাস্তবায়ন হলে শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য বিশালাকারে বাড়বে তা নয়। স্থানীয় মানুষ যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। এতে একটি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
ফেডারেল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এর সাবেক পরিচালক ও তৈরি পোশাক ব্যবসায়ী একেএম সাহিদ রেজা শিমুল বলেন, নদী বন্দর গড়ে উঠলে শিল্পায়ন আরও বাড়বে। মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
বিআইডব্লিউটিএ এর একই সূত্র হতে জানা যায়, সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ নদী বন্দর ঘোষণার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
সম্ভাব্যতা যাচাই সংক্রান্ত প্রাপ্ত প্রতিবেদন হতে জানা যায়, গত বছরের ৬ ও ৭ নভেম্বর সরেজমিন পরিদর্শন করে গঠিত কমিটি। এসময় উপস্থিত ছিলেন সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ একাধিক জনপ্রতিনিধি।
প্রতিবেদনটির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, প্রস্তাবিত সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ নদী বন্দরের ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার ফেনী নদীর মুহুরী প্রজেক্ট সংলগ্ন থাক খোয়াজের লামচি, ফেনী নদীর মোহনায় চর নারায়ণ, ইকরাম বেড়ী, চর খন্দকার ও পূর্ব বড় ধলী এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ছোট ফেনী নদীর মোহনা সংলগ্ন মুছাপুর চর, এলাহী ঘাটে নৌ বাণিজ্যিক কর্মকান্ড পরিচালনার উপযুক্ত স্থান বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
এতে বলা হয়, দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু শিল্প অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী হওয়ায় এবং সন্দ্বীপ চ্যানেলে নাব্যতা ও প্রস্থতা থাকায় প্রস্তাবিত নদীবন্দরের তৃণভূমিতে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান বাজার এবং নদীকেন্দ্রিক বিভিন্ন স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদী বন্দর ঘোষিত হলে সরকারের বিপুল রাজস্ব অর্জিত হবে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সন্দীপ চ্যানেলের ফেনী নদী মোহনায় বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর গড়ে উঠছে। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশী বিদেশী বহু শিল্প কারখানা গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এ শিল্পাঞ্চল ঘিরে দেশীয় ছোট বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। বঙ্গবন্ধু শিল্পাঞ্চলের প্রয়োজনে সোনাগাজী উপকূলে দীর্ঘ রাস্তা ও ব্রিজের কাজ চলছে। উপজেলার বড়ধলী এলাকায় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে উঠছে।
এ অঞ্চলের নদী বন্দরের উপযোগিতা প্রসঙ্গে বলা হয়, ফেনী নদী ক্লোজার এর পর হতে মোহনা পর্যন্ত অংশে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পর্যাপ্ত নাব্যতা নিশ্চিত করা হলে গড়ে ওঠা বৃহত্তম অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান মালামাল পরিবহনে নিয়োজিত জাহাজসমূহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই অঞ্চলে আশ্রয় নিতে পারবে। অর্থাৎ ঝড়ঝঞ্ঝা সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ফেনী নদীর ক্লোজার হতে মোহনা পর্যন্ত অংশ শিপ শেল্টার হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
ফেনী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ এর সভাপতি আয়নুল কবির শামীম বলেন, দেশের দক্ষিণ পূর্ব অংশে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা নদী পথে পণ্য খালাসে বাড়তি সুবিধা পাবে। এতে পরিবহন ব্যয় অনেক কমবে।
নদী বন্দরের কার্যকারিতা সম্পর্কে বাংলাদেশ বাঙ্কার সাপ্লাইয়ার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মিজানুর রহমান মজুমদার বলেন, এটি বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় সুযোগ তৈরি করবে। এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে বৃহত্তর নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন ব্যয় কমা ছাড়াও উদ্যোক্তা সৃষ্টি করবে। ফেনী যেহেতু সীমান্তবর্তী তাই ত্রিপুরা অঞ্চলের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হবে।
বাসস/বি.প্র./এনডি/সংবাদদাতা/০৯২০/কেজিএ