বাসস দেশ-৬১ : বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘যোগাযোগকে’ প্রাধান্য দিচ্ছে ভারত

187

বাসস দেশ-৬১
বাংলাদেশ-ভারত-আলোচনা
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘যোগাযোগকে’ প্রাধান্য দিচ্ছে ভারত
ঢাকা, ৪ মার্চ, ২০২১ (বাসস): ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী ড. এস জয়শংকর আজ বলেছেন, এই অঞ্চলের ভূ-অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তনের জন্য ভারত আগামী বিশ বছরের জন্য বাংলাদেশ-ভারত যোগাযোগের ইস্যুটির ওপর সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সাথে দেড় ঘন্টাব্যাপী এক বৈঠকের পর গণ-মাধ্যমকে দেয়া এক যৌথ ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
ড. জয়শংকর আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পার হয়েছে, এখন আর ৫০ বছর নয়, পরবর্তী ২০ বছরের কথা ভাবতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই- আসুন আমরা যোগাযোগের দিকে নজর দেই। আমি আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে যোগাযোগকে একটি বড় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচনা করি।’
ভারতীয় এই শীর্ষ কূটনৈতিক আরো বলেন, ঢাকা ও নয়া দিল্লী উভয়েরই টোকিও’র সাথে ‘খুব ভাল’ সম্পর্ক রয়েছে। আর এ জন্যই, তারা যোগাযোগের ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতায় একটি স্টেকহোল্ড হিসেবে জাপানকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করেন।’
তিনি বলেন, ‘জাপান বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে যোগাযোগ প্রকল্পগুলোতে জড়িত আছে। আমি আপনাদের বলতে পারি যে- এই অঞ্চলের গোটা ভূ-অর্থনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। বঙ্গোপসাগরকে অনেকটাই অন্যরকম দেখাবে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠককালে আমরা আমাদের মাননীয় দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শ্রী নরেন্দ্র মোদি’র নেতৃত্বে আমাদের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চলমান প্রচেষ্টা অব্যহত রাখার অঙ্গীকার করি।’ ড. মোমেন বলেন, এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে করোনা-১৯ সহযোগিতা, যোগাযোগ, বাণিজ্য, পানি, নিরাপত্তা, সীমান্ত ও লাইন্স অব ক্রেডিটসহ চলমান বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন ও পারস্পারিক কল্যাণ সংরক্ষণের সম্ভাব্য উপায় বের করার উপর জোর দিয়েছি।’
২৬-২৭ মার্চে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত আসন্ন বাংলাদেশ সফরের এজেন্ডা ঠিক করতে জয়শংকর আজ সকালে এক দিনব্যাপী এই সফরে এসেছেন।
ব্রিফিংকালে মোমেন এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘অবশ্যই, চলতি মাসের শেষের দিকে ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতিই ছিল আমাদের আলোচনার প্রধান বিষয়।’
তিনি আরো বলেন, ঢাকা বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত-বার্ষিকী উদযাপনে মোদির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। উৎসবটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির বছরেই হচ্ছে।’ এ সময় ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নয়া দিল্লীর দিক থেকে যোগাযোগ ইস্যুর পরই মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সাংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো রয়েছে। এবং আমি মনে করি- আমাদের আরো অনেক বেশি জনগণ-ভিত্তিক সম্পর্ক স্থাপন করা উচিৎ। আমাদের পারস্পারিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এটা একটি বাড়তি চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা দেবে বলে আমি একান্তভাবে বিশ্বাস করি।’
জয়শংকর বলেন, এমন কোন ক্ষেত্র নেই, যেখানে বাংলাদেশ ও ভারত আজ একসাথে কাজ করছে না। তবে এখনো নয়া দিল্লী মনে করে যে- দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে কাজ করার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক আসলেই বৃত্তের মতো এবং আরো অনেক সম্ভাবনার দরজা আমাদের সামনে খোলা আছে। যখন আমি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে দেখি… আমি অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা দেখতে পাই। আমি দেখি যে- দু’দেশের মধ্যে ব্যাপক যোগাযোগ সম্ভব। আমি দেখি যে- মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
জয়শংকর কোভিড-১৯ মহামারি ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রচেষ্টায় ঢাকা-দিল্লী সহযোগিতা খুবই সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, একমাত্র বাংলাদেশকেই ভারত এর সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত নয় মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন দিয়েছে। অন্য কোন দেশকে এই বিপুল সংখ্যক ভ্যাকসিন দেয়া হয়নি।
মোমেন চলমান মহামারি মোকাবেলায় ভারতের সহোযোগিতার কথা স্বীকার করেন। বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কোভিড ভ্যাকসিন কিনেছে।
সীমান্ত হত্যার ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে জয়শংকর বলেন, সীমান্তে প্রতিটি মৃত্যুই অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে এ ধরনের কিছু ঘটনা ভারতের ভূÑখন্ডের ভেতরেই ঘটেছে। তিনি এ ব্যাপারে আরো বলেন, ‘প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু সমস্যাটি অপরাধজনিত। তাই আমাদের অভিন্ন লক্ষ্য হওয়া উচিত সীমান্তে ‘অপরাধ নয়, মৃত্যু নয়।’
তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত, যদি আমরা এটা ঠিক করতে পারি যে- অপরাধ নয়, মৃত্যু নয়। তবে আমরা একসাথে কার্যকরভাবেই সমস্যাটির সমাধান করতে পারব।’
দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত তিস্তার পানি বন্টনের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত ইতোমধ্যেই এই চুক্তিতে স্বাক্ষরের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে নয়া দিল্লী এখনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে কথা বলেছি এবং আপনারা জানেন যে- খুব শিগগিরই আমাদের পানি সম্পদ সচিবদের মধ্যে একটি বৈঠক হতে যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত যে- তারা এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবেন। আপনার ভারত সরকারের অবস্থান জানান, এটা পরিবর্তন হয়নি।’
অন্যদিক মোমেন বলেন, জয়শংকরের সাথে তার বৈঠকে ‘আমাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায়গুলোকে পাধান্য দেয়া হয়।’
জয়শংকর বলেন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতিই তার সফরের প্রধান উদ্দেশ্য।
তিনি আরো বলেন, ‘আপনাদের অনেকেরই মোদির সর্বশেষ সফরের কথা মনে আছে।’
বাসস/টিএ/অনুবাদ-কেএটি/২০৩৫/-কেএমকে