বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : গবেষণা ও বিজ্ঞানের বিবর্তন দেশের উন্নয়নে অপরিহার্য : প্রধানমন্ত্রী

104

বাসস প্রধানমন্ত্রী-৩ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
গবেষণা ও বিজ্ঞানের বিবর্তন দেশের উন্নয়নে অপরিহার্য : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি খাতে আমরা শুধু একটা বা দুইটার ওপর নির্ভরশীল নই। আমরা বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করতে পারি। তার মধ্যে যেমন ডিজিটাল ডিভাইসগুলো, অর্থাৎ এখন আমরা যেহেতু ডিজিটাল বাংলাদেশ কাজেই এই ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন আমরা কিন্তু সেগুলো করতে সক্ষম, আমরা তা পারি।’
নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক সুযোগ রয়েছে, আমাদের রপ্তানি পণ্য বাড়াতে হলেও কিন্তু গবেষণার প্রয়োজন আছে। কাজেই আমি আশা করি সবাই নতুন নতুন পণ্য সৃষ্টি এবং আমাদের রপ্তানি যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিবেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সামরিক স্বৈরশাসকরা দেশের উন্নয়ন না করে নিজেদের ভাগ্যেন্নয়নেই বেশী ব্যস্ত ছিল। আমরা দেখেছি তারা মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। সেজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোমাবাজী, সেশন জট, আর অস্ত্রের ঝনঝনানিই পরিলক্ষিত হয়। তবে, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিয়ে সারাদেশে শিক্ষার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি।
করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় এক বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘এটা মানুষের জীবনকে সুরক্ষিত করার জন্যই করা হয়েছিল। তবে ইতোমধ্যে টিকা দান কর্মসূচি শুরু হয়েছে এবং সেক্ষেত্রে শিক্ষক এবং কর্মচারিদের অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে।’
টিকা দেওয়া পর্ব শেষ হলেই এই মার্চ মাসের শেষের দিকে তাঁর সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেবে বলেও তিনি জানান।
অতীতে শিক্ষার্থীরা দেশে বিজ্ঞান পড়ার ওপর আগ্রহ হারিয়ে ফেললে তাঁর সরকারই প্রথম দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আমাদের অগ্রগতি সাধণের একটা উপায়।’
সরকার প্রধান বলেন, গবেষণা ছাড়া বা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া একটা জাতি সামনে এগিয়ে যেতে পারে না কারণ, বিজ্ঞানের যুগে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবন হচ্ছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে।
তিনি বলেন, যে কারণে তাঁর সরকার ক্ষমতায় এসেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দেয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়, সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বায়োটেকনোলজি ইনস্টিটিউট, নভোথিয়েটার প্রতিষ্ঠা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার স্থানীয়ভাবে উ™া¢বিত টেকসই প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সম্প্রসারণে গুরুত্বারোপ করে এবং সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় আজ মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো সরকার পুরণ করতে সক্ষম হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি এবং শিক্ষা ও গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ন্যাশনাল সায়েন্টিফিক এন্ড টেকনিক্যাল ডকুমেন্টেশন সেন্টার (ব্যান্সডক) আইন-২০১০, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন ট্রাস্ট আইন-২০১১, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০ (সংশোধিত ২০১৪), বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন আইন-২০১৭, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ আইন (সংশোধিত),-২০১৮সহ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রবিধান/বিধি/নীতিমালা প্রণয়ন করেছি।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল, উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ’। আর এই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পেরেছিলাম বলেই করোনা মোকাবেলাতেও যথেষ্ট সহযোগিতা এবং সুযোগ পেয়েছি।’
তাঁর সরকার শিক্ষাকে বহুমুখী করার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতেই অধিক গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উচ্চশিক্ষার প্রসারে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৮টি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন,‘যার যেখানে দক্ষতা থাকবে সে সেভাবেই গড়ে উঠবে এবং দেশে-বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে এবং দেশ লাভবান হবে।’
তিনি এ সম্পর্কে আরো বলেন, আমরা হাই-টেক সিটি, হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার প্রযুক্তি পার্ক স্থাপন করেছি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে জনপ্রিয়করণের লক্ষ্যে আমরা ৪৯০টি উপজেলায় এবং ৯০টি ইউনিয়নে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্লাব গঠন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ গত বারো বছরে ১১৭টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে, ২১১টি প্রযুক্তি বাণিজ্যিকীকরণের জন্য হস্তান্তর করেছে, ৪১টি প্রযুক্তির প্যাটেন্ট অর্জন করেছে এবং ৭টি’র জন্য প্যাটেন্ট আবেদন করেছে।
এ সময় রুপপুরের ন্যায় দ্বিতীয় পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য সরকার দক্ষিণ বঙ্গে জায়গা খুঁজছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাইড্রোজেন শক্তি গবেষণাগার, জাতীয় জিন ব্যাংক স্থাপনের কাজ অতি দ্রুতই সম্পন্ন হবে। তাঁর সরকার সকল বিভাগীয় শহরে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার স্থাপনের উদ্যোগও গ্রহণ করেছে।
বাসস/এএসজি-এফএন/১৪৫০/-আসাচৌ