শেরপুরে গাজর চাষে কৃষকদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে

280

শেরপুর, ৩ মার্চ, ২০২১ (বাসস) : জেলার কৃষকরা নামমাত্র শ্রমে, অল্প ব্যয়ে ও স্বল্প সময়ে গাজর আবাদ করে অন্যান্য ফসলের তুলনায় অধিক লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের দাবি গাজর আবাদে উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লাভ পাওয়া যায়। উচ্চ মূল্যের এ সবজির উৎপাদন বেশি ও ভালো দাম পাওয়ায় জেলার শেরপুর সদরসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় গাজর চাষে কৃষকদের আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার প্রায় সব উপজেলায় স্থানীয় চাহিদা মেটাতে কৃষকরা কম-বেশি গাজর চাষ করেছেন। এরমধ্যে নকলা উপজেলাতে ৫ হেক্টর জমিতে গাজর চাষ করা হয়েছে। তারা সকলেই লাভবান হয়েছেন। এমন এক কৃষক নকলা উপজেলার জালালপুর এলাকার কৃষক আব্দুল মোতালেব ৩৫ শতাংশ জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে গাজর চাষ করেছেন। এতে সবমিলিয়ে প্রায় ২২ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে, আর ব্যয়বাদে তার লাভ হবে প্রায় ২০ হাজার টাকা। গাজর চাষে মোতালেবের লাভ দেখে এলাকার অনেক কৃষক এ সবজি চাষে আগ্রহী হয়েছেন। জালালপুরের কামাল ও আনার; চন্দ্রকোনার সুখন, শামীম, মোকসেদ ও আজিম উদ্দিন; ধুকুড়িয়ার তাঁরা মিয়া, হাসেম আলী, নজরুল ইসলামসহ অনেকে জানান আগামীতে তারা সকলেই কম করে হলেও গাজ চাষ করবেন। অবার অনেকে জানান আগামীতে তারা বাণিজ্যিক ভাবে গাজর চাষ করতে জমি নির্বাচন করছেন। উৎপাদন ভালো হওয়ায় আগামীতে গাজর চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে কৃষকরা জানান।
জালালপুর এলাকার কৃষক মোতালেব বলেন, এক-দেড় যুগ আগেও এলাকার অনেকেই গাজর সম্পর্কে তেমন জানতেন না। কিন্তু এখন গাজর সবার কাছে একটি অতি পরিচিত সবজি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছ। চন্দ্রকোনার শামীম জানান, ২০১৬ সালে প্রথমে ৫শতাংশ জমিতে গাজরের আবাদ করে ভালো ফলন এবং দাম পেয়েছেন। পরের বছর থেকে তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরা গাজর চাষ শুরু করেন। নামে মাত্র শ্রমে উৎপাদন বেশি ও ভালো দাম পাওয়ায় উপজেলার কয়েকশ কৃষক এরইমধ্যে গাজর চাষ করা শুরু করেছেন। বাছুর আলগা গ্রামের কৃষক মোকছেদ আলী মাস্টারসহ অনেকেই জানান, তারা কয়েক বছর ধরেই নিজেদের চাহিদা মিটাতে সামান্য পরিমাণে গাজরের আবাদ করছেন।
গাজর চাষি মোতালেব জানান, পতিত জমিকে গাজর চাষের উপযোগী করাসহ গাজর উৎপাদন তথা বিক্রি করার পূর্ব পর্যন্ত প্রতি কাঠা (৫ শতাংশ) জমিতে গাজর চাষ করতে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়। আর প্রতি কাঠা (৫ শতাংশ) জমির গাজর বিক্রি হয় ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা। তার ৩৫ শতাংশ জমির গাজর থেকে ৪২ হাজার থেকে অর্ধলক্ষ টাকা আয় হবে বলে তিনি আশা করছেন। মোতালেব আরও জানান, গাজর গাছের পাতা গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ তথা গুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। তাই গবাদি পশুর খাবারের জন্য পশুর মালিকরা গাজর গাছ তুলে পাতা নিয়ে যান; এতে শ্রমিক খরচ কম লাগছে।
গাজর চাষিরা জানান, প্রতি ১০০ গ্রাম বীজের কৌটা ৪৫০ টাকা করে কিনেছেন। বর্তমানে প্রতিমণ গাজর পাইকারি ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে ২০ টাকা থেকে ২৫ টাকা করে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে। এখন গাজরের ভরা মৌসুম হওয়ায় চাষিরা গাজরের দাম কম পাচ্ছেন। তবে রোজা বা গরম মৌসুমে গাজরের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়; তখন কৃষকরা কয়েকগুণ বেশি লাভ পেয়ে থাকেন।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকতা শেখ ফজলুল হক মনি জানান, সাধারণত ভাদ্র মাসের শুরু থেকে মধ্য আশ্বিন পর্যন্ত গাজরের বীজ বপন করা হয়। ৯০ দিনের জীবনীকাল সম্পন্ন এ সবজি জাতীয় ফসল চাষ করে কৃষকরা যতটা লাভবান হন, তা অন্যকোন আবাদে কল্পনাও করা যায়না। তাই দিন দিন গাজর চাষের পরিমাণ ও চাষির সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। অতিরিক্ত কৃষি অফিসার রোকসানা নাসরীন জানান, প্রয়োজনের তুলনায় নকলা উপজেলায় গাজরের আবাদ কম হওয়ায় এবং দাম ভালো থাকায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আগামীতে এর আবাদ কয়েকগুণ বাড়বে বলে তিনি জানান। গাজরের আবাদ বাড়াতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, গাজর একটি বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন সবজি। উপজেলায় এবছর গত বছরের তুলনায় গাজরের আবাদ বেশি হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। তিনি জানান, সাধারণত প্রতি হেক্টরে ১০ থেকে ১২ মেট্রিকটন গাজর উৎপাদন হয়ে থাকে। এরইমধ্যে কৃষকরা গাজর উত্তোলণ শুরু করেছেন। গাজরে কৃষকরা প্রায় দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন। অন্যান্য ফসলের তুলনায় গাজর চাষে লাভ বেশি পাওয়া যায়। তাই যে কেউ গাজর চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন বলে তিনি মনে করেন। নকলার মাটি গাজর চাষের উপযোগী হওয়ায় আগামীতে এ সবজির আবাদ কয়েকগুণ বাড়বে। এতেকরে এখানকার উৎপাদিত গাজরে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য ফসলের মতো রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে কৃষি অফিসাররা মনে করছেন।