বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি) : উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ১২ বছরের নিরন্তর পরিশ্রমের ফসল : প্রধানমন্ত্রী

152

বাসস প্রধানমন্ত্রী-১ (দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তি)
শেখ হাসিনা-প্রেস কনফারেন্স-ভাষণ
উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ১২ বছরের নিরন্তর পরিশ্রমের ফসল : প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ গতকাল (২৬ ফেব্রুয়ারি) স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা অর্জন করেছি।
‘সমগ্র জাতির জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের এবং গর্বের। আমাদের এই উত্তরণ এমন এক সময়ে ঘটলো, যখন আমরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করছি; আমরা মহান স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে।’
বাংলাদেশের জন্য এই উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কৃতিত্ব এ দেশের আপামর জনসাধারণের। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি।
এই অর্জনকে দেশের নতুন প্রজন্মকে উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ একটি প্রত্যয়ী ও মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে জায়গা করে নেবে। আমাদের এ অর্জনকে সুসংহত এবং টেকসই করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন, ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য এটি একটি বিশেষ ধাপ।
উল্লেখ্য, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে।
জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত পাঁচ দিনব্যাপী এক বৈঠক শেষে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে এলডিসি স্ট্যাটাস পর্যালোচনা করে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সূচক পর্যালোচনা করা হয়। বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণে সব ধরনের সূচকের অগ্রগতি হয়েছে।
এরআগে প্রধানমন্ত্রীর হাতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র তুলে দেন অর্থমন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন।
মুজিববর্ষে সবার জন্য ঘর দেওয়ার কর্মসূচির কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল গৃহহীনদের ঘর প্রদান কর্মসূচির আওতায় ৮ লাখ ৯২ হাজার গৃহহীনকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার গৃহ নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৬ পরিবারকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
নারীর ক্ষমতায়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের নারীরা আজ স্বাবলম্বী। জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ৭ম।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জনকে প্রথম ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে, টিকা দেওয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা, হাত ধোয়া এবং পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
টিকা গ্রহীতার তালিকায় যেমন সাধারণ মানুষ রয়েছেন, তেমনি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সরকারি কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও রয়েছেন। বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শেখ রেহানা প্রথম টিকা নিলেও এখনও টিকা নেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অবশ্যই টিকা নেব। তবে দেশের মানুষকে আগে দিতে হবে। আমার ৭৫ বছর বয়স। আজ আছি, কাল নেই। একটা টার্গেট করা আছে। সে পরিমাণ যখন দেওয়া হবে, তখন যদি টিকা থাকে, তাহলে তখন টিকা নেব।’
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সফলতার পেছনে কোনো ম্যাজিক লুকিয়ে আছে কিনা জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কোনো ম্যাজিকের কিছু না। যখন যেভাবে বলেছি, সবাই মেনে চলেছে। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করায় এটা হয়েছে। এটা বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত ম্যাজিক।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনা সারা বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছিল। জনগণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যে, আমরা যখন যেভাবে বলেছি, সবাই তা মেনে চলেছে। আমরা বিশেষ করে অর্থনীতির ক্ষেত্রে সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছি। মানুষের যেন কষ্ট না হয় সেটা দেখেছি। আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছি। সব শ্রেণির মানুষ সহায়তা পেয়েছে। তখনও গবেষণা চলছে, যখন আমরা আগাম অর্থ দিয়ে করোনার টিকা কেনার ব্যবস্থা নিয়েছি।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ যখন গড়ে তুলেছি, তখন ডিজিটাল নিরাপত্তা দেয়াও আমাদের দায়িত্ব। কেউ যেন সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে না জড়াতে পারে, সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা অপরিহার্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘সমালোচনা যারা করছে, তারা সবকিছু কি অনুধাবন করছে? আজকের এই দিনে আমি অন্য কিছু বলতে চাই না। শুধু এটুকুই বলবো, কারও মৃত্যুই কাম্য নয়। তবে সেটাকে উদ্দেশ্য করে অশান্তিও কাম্য নয়। অসুস্থ হয়ে মারা গেলে কী করার আছে?’
আল জাজিরা নামের একটি চ্যানেলের নিউজে দেশ সম্পর্কে অপপ্রচারের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কোনো প্রতিক্রিয়াও নাই। কিছু বলারও নাই। একটা চ্যানেল কি বলছে না বলছে। দেশের মানুষ বিচার করবে, কতটুকু বানোয়াট, কী উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, সেটা দেশের মানুষ জানে। আমার চিন্তার কিছু নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কোন চ্যানেল কি বললো, সেটা শুনে চলা আমার রাজনীতি নয়, দেশের মানুষের জন্য কাজ করাই আমার রাজনীতি। যারা বলবে বলতে থাকবে, এটা তাদের কাজ। জনগণের জন্য কাজ করা আমাদের কাজ।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা এসব বলে তারা ৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার গোটা পরিবারকে হত্যা করেছে। ছোট শিশুকে হত্যা করেছে। আমি সন্তান হিসেবে যখন সরকারে আসলাম, তখন বাবা মায়ের হত্যার বিচার করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, মানবতা বিরোধীদের বিচার করেছি। অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামালার বিচার করেছি।’
বাসস/এএসজি-এফএন/২০১০/-শআ