বাসস দেশ-১১ : বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের নদী কূটনীতির সূচনা করেন

119

বাসস দেশ-১১
বঙ্গবন্ধু- নদী কূটনীতি
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের নদী কূটনীতির সূচনা করেন
ঢাকা, ১৯ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতদিয়েই সূচনা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের নদী কূটনীতির। অভিন্ন নদনদী সমূহের পানি বন্টন সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের মার্চে প্রতিবেশি ভারতের সাথে যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) গঠিত হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ. ডি. দেব গৌড়ার মধ্যে গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু সূচিত নদী কূটনীতির সাফল্য অর্জিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মূলত শুষ্ক মৌসুমে গঙ্গাসহ অভিন্ন নদীর পানির নায্য হিস্যা আদায় ও পানিবন্টনের ব্যাপারে সরব হয়ে ওঠে বাংলাদেশ।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর যৌথ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ২৪ নভেম্বর অংশগ্রহণকারী দু’দেশের মধ্যে আন্তঃসীমান্ত বা অভিন্ন নদ-নদীসমূহ থেকে সর্বোচ্চ সুফল প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ঢাকায় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের স্ট্যাটিউট স্বাক্ষরিত হয়।
ঢাকায় যৌথ নদী কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ওই স্ট্যাটিউট-এ স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের তৎকালীন বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব শফিকুল হক এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের তৎকালীন হাইকমিশনার সুবিমল দত্ত।
বাংলাদেশের নদী কূটনীতি সম্পর্কে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) সদস্য (চলতি দায়িত্ব) মোঃ মোফাজ্জল হোসেন বাসস’কে বলেন, ‘স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পানি সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেন। ১৯৭২ সালের মার্চে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘোষনার আলোকে স্থায়ীভাবে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে যৌথ নদী কমিশন গঠিত হয়।’
তিনি বলেন, অভিন্ন নদনদীর পানি সম্পদের যৌথ ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এই কমিশন কাজ করছে।
মোঃ মোফাজ্জল হোসেন জানান, মূলত, বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে আন্তঃসীমান্ত নদনদীর ব্যাপক জরিপ কার্যক্রম পরিচালন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণের বিস্তারিত প্রকল্প প্রণয়ন ও প্রধান প্রধান নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ প্রকল্পের উপর সমীক্ষা পরিচালন, উভয় দেশের জনগণের পারস্পরিক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যে এ অঞ্চলের পানি সম্পদের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার এবং বাংলাদেশের সাথে ভারত সংলগ্ন এলাকায় পাওয়ার গ্রীড সংযোজনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য স্থায়ী ভিত্তিতে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন গঠন হয়।
এছাড়াও বৃহত্তর পরিসরে অভিন্ন নদনদী সম্পর্কে চীন, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও তথ্য বিনিময় করে থাকে যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি)।
যৌথ নদী কমিশনের তথ্য মতে, বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০৫টি নদনদী প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীগুলোর মধ্যে ৫৭টি হচ্ছে আন্তঃসীমান্ত নদী, এর মধ্যে ৫৪টি বাংলাদেশ ও ভারত এবং ৩টি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রবাহিত। এই নদনদীগুলো আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন।
অভিন্ন নদনদীসমূহের মধ্যে এ পর্যন্ত গঙ্গা নদীর পানি বন্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ. ডি. দেব গৌড়ার মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা নদীর পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি অনুসারে, প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে। তবে ফারাক্কা বাঁধে পানি প্রবাহ ৭৫ হাজার কিউসেক বা তার উর্ধ্বে হলে ভারত ৪০ হাজার কিউসেক এবং তার কম হলে দু’দেশ সমান হারে পানি পাবে।
বাসস/এসপিএল/এমকে/১৬৫৫/এমএসআই