বাসস দেশ-৪৯ : সরকার যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে কাজ করছে: কৃষিমন্ত্রী

134

বাসস দেশ-৪৯
কৃষি-পদ্ধতি
সরকার যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে কাজ করছে: কৃষিমন্ত্রী
টাঙ্গাইল, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (বাসস): কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে কৃষিকে আধুনিক ও লাভজনক করতে নিরলসভাবে কাজ করছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নেয়া হয়েছে ৩ হাজার ২০ কোটি টাকার প্রকল্প। পাশাপাশি কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ত্বরান্বিত করতে দক্ষ জনবল তৈরি করতে ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে কৃষি প্রকৌশলীর ২৮৪টি পদ সৃজন করা হয়েছে ।
তিনি আজ শনিবার টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে কেন্দুয়া গ্রামে ‘সমলয় পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে ৫০ একর জমিতে ধানের চারা রোপণ উদ্বোধন ও কৃষক সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
কৃষক সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: আসাদুল্লাহ। এছাড়া বিএডিসি’র চেয়ারম্যান মো: সায়েদুল ইসলাম,ব্রির মহাপরিচালক ড. মো: শাহজাহান কবীর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক আরও বলেন, দেশ কৃষি যান্ত্রিকীকরণের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে ক্ষেতগুলো ছোট ছোট। তাছাড়া, কৃষকেরা বিভিন্ন জমিতে বিভিন্ন সময়ে চারা রোপণ করে। ফলে কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার সঠিকভাবে করা যায় না। ‘সমলয়’ পদ্ধতিতে চাষ করলে যন্ত্রের ব্যবহার সহজতর হবে। কৃষকের সময় ও শ্রম খরচ কমবে। কৃষক লাভবান হবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক আরও বলেন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে প্রতি একর জমিতে ১ ঘন্টায় ধানের চারা রোপণ করা যায়। এর ফলে একর প্রতি কৃষকের খরচ কমবে ৪৫০০ টাকা। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ৪-৫ বছর পরে কেউ হাতে ধান রোপণ করবে না।
কেন্দুয়া গ্রামের হাইব্রিড ধানের সমলয় চাষাবাদ প্রদর্শনী সর্বমোট ৫০ একর জমিতে স্থাপিত হয়েছে যেখানে ৯০ জন উদ্যোগী কৃষক এই কার্যক্রমের সাথে যুক্ত আছে। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড হিরা-১ জাতের ধান এখানে রোপন করা হচ্ছে। এক মাস আগে এখানে একযোগে বীজতলায় ধানের বীজ বপন করা হয়েছিল; ৪ হাজার ৫০০ ট্রেতে। তার অংশ হিসাবে আজ একযোগে যন্ত্রের মাধ্যমে ধানের চারা জমিতে রোপণ করা হলো।
চলতি অর্থবছরে সারাদেশের ৬১টি জেলায় এই মৌসুমে প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় সমলয় চাষাবাদ একযোগে চলমান আছে। প্রণোদনার আওতায় কৃষকদেরকে হাইব্রিড জাতের বোরো ধানবীজ, সার, চারা রোপণসহ অন্যান্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তার অংশ হিসাবে ধনবাড়ী উপজেলায় এই ব্লক প্রদর্শনী তৈরী করা হয়েছে।
‘সমলয়’ চাষের এক নতুন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সবাই মিলে একটি ব্লকে/মাঠে একসঙ্গে একই জাতের ধান একই সময়ে যন্ত্রের মাধ্যমে রোপণ করবে। বীজতলা থেকে কর্তন, সকল প্রক্রিয়া যন্ত্রের সাহায্যে সমসময়ে সম্পাদন করা হয়। এ পদ্ধতিতে ধান আবাদ করতে হলে চারা তৈরি করতে হয় ট্রেতে। ট্রেতে চারা উৎপাদনে জমির অপচয় কম হয়। রাইস ট্রান্সপ্লান্টার দিয়ে চারা একই গভীরতায় সমানভাবে লাগানো যায়। কৃষক তার ফসল একত্রে মাঠ থেকে ঘরে তুলতে পারে। কারণ, একসঙ্গে রোপণ করায় সব ধান পাকবেও একই সময়ে। তখন ধান কাটার মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কর্তণ ও মাড়াই করা যাবে।
তিনি বলেন, সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের ব্যবহার সহজতর ও বৃদ্ধি পাবে। ফলে, ধান চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম লাগবে তেমনি উৎপাদনও হবে বেশি। এতে লাভবান হবেন কৃষকরা।
কেন্দুয়া গ্রামের কৃষক শাহ আলী বলেন, মেশিনে ধান লাগানোতে বিঘাতে ১৫০০ টাকা করে খরচ কম হয়েছে। সব সহায়তা দিয়েছে কৃষি বিভাগ। তাছাড়া ধান কাটার সময়ও মেশিন ব্যবহার করা যাবে। তখনও খরচ কম হবে। সামনের মৌসুমেও মেশিনে সমলয়ে ধান চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
এছাড়া মন্ত্রী ধনবাড়ীর বিরতারা ইউনিয়নের হাতিবান্ধা বিলের জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন পরিদর্শন ও উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে হাতিবান্ধা বিলের মাঠের ৩০০ একর জমির জলাবদ্ধতা দূর হবে। এক ফসলি জমি দুই বা তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর হবে।
মন্ত্রী বলেন, ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এটির ব্যবহার বাড়াতে পারলে সেচ খরচ কমবে। উৎপাদন খরচ ২৫-৩০ ভাগ কমে যাবে। সেচকাজে পানির অপচয় হবে না। একই সাথে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ধরে রাখতে সহায়ক হবে।
বিএডিসি’র টাঙ্গাইল কিশোরগঞ্জ জেলার ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এ পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৮০০ মিটার ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন ও ২০০ মিটার খাল খনন করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়।
বাসস/সবি/এমএআর/-শআ