বরেন্দ্র এলাকায় ভূ-উপরিস্থ পানিতে সেচ জোরদারের সম্ভাবনা উজ্জ্বল : বিশেষজ্ঞদের অভিমত

346

॥ ড. আইনুল হক ॥
রাজশাহী, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (বাসস): বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বরেন্দ্র এলাকায় পরিত্যক্ত অবস্থায় যেসব প্রাকৃতিক পানির উৎস রয়েছে সেগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করার মাধ্যমে ওই এলাকায় ভূ-উপরিস্থ পানি দিয়ে সেচ জোরদারের উজ্জ্বল সম্ভাবনার রয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণার উল্লেখ করে অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান বলেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলার সমন্বয়ে এই বরেন্দ্র এলাকায় ১০ হাজার পুকুর, দু’শ খাল, এবং আরও ১০টি বড় আকারের জলাশয় রয়েছে।
সময়ের দাবি অনুযায়ী ভূ-উপরিস্থ পানি দিয়ে সেচ জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এসব পানির উৎসের সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের সেচের উৎসকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূ-উপরিস্থ ও ভূ-গর্ভস্থ উভয় পানির উৎস নিয়ে গবেষণা করছেন।
তিনি উদাহরণ হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার ৬ হাজার ৩৮৮ একরের বিস্তীর্ণ জলাভূমি বিলভাটিয়ায় উল্লেখ করে বলেন, এটি পুনরায় খনন করার মাধ্যমে তাতে পানি সংরক্ষণ করে সারা বছর ধরে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি সেচের আওতায় আনা সম্ভব।
জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রোহানপুরে আরও চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ জলাশয় রয়েছে। এই জলাশয় পুনঃখনন করা হলে ২৫ হাজার কৃষকের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আনা যেতে পারে।
অধ্যাপক চৌধুরী আরও বলেন, এছাড়াও দুই কিলোমিটার দীর্ঘ চৌদলা-বোয়ালিয়ার খালটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে যা পুনঃখনন করা হলে ১৫০ হেক্টর ফসলি জমি সেচের আওতায় আনা যেতে পারে।
ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যমান ভূ-গর্ভস্থ সেচের রূপান্তর ঘটানো যেতে পারে।
ধীরে ধীরে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া খরা প্রবণ এলাকার প্রান্তিক ও অন্যান্য স্বল্প আয়ের পরিবারের মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর মারাত্মক হুমকির কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রাষ্ট্র-মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ‘পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করে সেচ বাড়ানোর মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে শুরু করেছে।
বিএমডিএ’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ বলেন, প্রায় ১২৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া ও নাটোর জেলার ৪৩ টি খরা প্রবণ উপজেলায় পাঁচ বছর ব্যাপী এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতে বিশাল বরেন্দ্র অঞ্চলসহ এইসব এলাকার সেচ ও বাসাবাড়ির কাজের জন্য ব্যবহার উপযোগী করে আরও ৭১৭টি পরিত্যক্ত এবং ১০টি বড় জলাশয় পুনঃখননের আওতায় আনা হবে।
প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ৩ হাজার ৫৮ হেক্টর ফসলী জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে। এতে বছরে প্রায় ১৮ হাজার ৩৪৮ টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদিত হবে।
তিনি বলেন, এছাড়াও, সংরক্ষিত জলাধারের মাধ্যমে ১ হাজার ৮৮ টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদনেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ইঞ্জিনিয়ার রশিদ বলেন, এরআগে, গত জুন পর্যন্ত ভূ-উপরিস্থ পানি ভিত্তিক সেচের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিএমডিএ ৩ হাজার ৯৮টি পুকুর, ২ হাজার ১১ কিলোমিটার খাল ও ৪১৩টি কুপ পুনঃখনন করেছে।