১৪ ফেব্রুয়ারিতে ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবস পালিত

487

ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : বৈশ্বিক করোনা মহামারির সময়েও বর্ণিল আয়োজনে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আজ রাজধানীসহ সারাদেশে পালিত হয়েছে বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইন ডে )।
করোনা মহামারীর প্রকোপ খানিকটা শিখিল হলেও সর্বস্তরে প্রাণের সঞ্চার এখনো ঘটেনি। তবুও সংস্কৃতিমনা বাঙালী তাদের প্রাণের উৎসব পালনে কার্পণ্য করেনি। বিভিন্ন বয়সের এবং নান শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ এ দুই উৎসবে মেতে উঠেছিল। কোথাও কোথাও মুখে মাস্ক পরে, আবার কোথাও মাস্কের ব্যবহার কিছুটা শিথিল করে শিশু-কিশোর,তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ আনন্দ-উদ্দীপনায় বসন্তকে বরণ এবং পারস্পরিক উজাড় করা ভালবাসায় নিজেদের মাতিয়ে রাখে।
এদিকে করোনাকালে অনেক সংগঠন আগের ঐতিহ্য মেনে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করলেও একাধিক সংগঠন এই মহামারীর কারণে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আয়োজন থেকে বিরত থাকে। ভিন্ন চিত্র রয়েছে অনেক সংগঠনেও। বসন্ত বরণকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে। বসন্ত আর ভালোবাসার রঙে মিশে সংস্কৃতিমনা বাঙালি প্রকৃতির সাথে মিশে নিজেদের সাজিয়ে তুলেছে।
এদিকে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনকে কেন্দ্র করে বিকাল ৪টায় নন্দনমঞ্চে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজন করেছে বসন্ত উৎসব ২০২১।
নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে করা অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন একাডেমির সচিব মো.নওসাদ হোসেন।
আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড পারফরমিং আর্টস,স্পন্দন নৃত্যদল, নৃত্যালোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, বাংলাদেশ একাডেমি অফ ফাইন আর্টস, নৃত্যম, নন্দন কলা কেন্দ্র এবং মারমা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী স¤প্রদায়, ধৃতি নৃত্যালয় এর শিল্পীরা সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন। শিল্পী সাজেদ আকবর ও সালমা আকবর, ইবরার টিপু-বিন্দু কনা এবং খাইরুল আনাম শাকিল-কল্পনা আনামদ্বৈত সঙ্গীত পরিবেশন করেন । শিল্পী অপু আমান, সাব্বির, বিউটি এবং দিতি সরকার একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন । দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ভাওয়াইয়া,সরকারি সঙ্গীত কলেজ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পীরা ।
অনুষ্ঠানে নাটকের অংশবিশেষ পাঠ করেন শহীদুজ্জামান সেলিম ও রোজী সিদ্দিকী এবং অনন্ত হীরা ও নূনা আফরোজ। সবশেষে ব্যান্ডদল ‘স্পন্দন’ এর পরিবেশনায় পরিবেশন করেন ব্যান্ড সঙ্গীত।
এদিকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এদিন সকাল সাড়ে সাতটা থেকে দশটা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্ম্ুক্ত মঞ্চে এবং বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বসন্তবরণ অনুষ্ঠান হয়েছে। এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ। দীপর সরকারের যন্ত্র বাদনে শুরু হয় নগরবাসীর বসন্ত বন্দনা। পংক্তিমালায় বসন্তের আবাহন করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত আবৃত্তিশিল্পী ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্যদিকে,প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে ‘বসন্ত বরণ’ উৎসব অনুষ্ঠিত হলেও এবার করোনা ভাইরাসের কারণে চলতি বছর এই উৎসব না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাংলা একাডেমির সংশোধিত বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বাংলা বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত প্রথম ছয়মাস ৩১ দিন,কার্তিক মাস থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন ধরে গণনা করা হবে। তবে গ্রেগরীয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে।
বাংলা পঞ্জিকার একাদশতম মাস ফাল্গুনের প্রথম দিন ও বসন্তের প্রথম দিন। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন পালিত হয়। ইংরেজি বর্ষপঞ্জির ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় সারা বিশ্বে। বাংলাদেশ জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ এই দিনকে বরণ করতে জাতীয় বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে।
শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপনের সূচনা ঘটেছে। বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় বসন্ত উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। শুরুর দিকে এ উৎসব আয়োজনে ভূমিকা পালন করেছেন রবীন্দ্র গবেষক ও সংগঠক ওয়াহিদুল হক এবং কবি শামসুর রাহমান। বর্তমানে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা শহরে বসন্ত উৎসব উদযাপতি হয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এক দশকের বেশি সময় ধরে বসন্ত উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে।
নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও ভ্যালেন্টাইন ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালিত হয়।