অবিচল আস্থার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

359

ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১(বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সমুদ্র এলাকায় নিরাপত্তা প্রদান সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশপ্রেম, আন্তরিকতা, সাহসিকতা ও অবিচল আস্থার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের প্রতিটি সদস্যের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আগামীকাল বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ‘কোস্ট গার্ড দিবস, ২০২১’ উপলক্ষ্যে দেয়া এক বাণীতে আজ এ আহবান জানান।
এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড দৃপ্ত পদক্ষেপে অগ্রসর হয়ে তাঁর সরকারের ‘রূপকল্প ২০৪১’ ও ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলেও দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ সম্মুখসমরে পাকহানাদার-বাহিনীকে পরাস্ত করতে থাকে। জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনী সংগঠিত হয়। যুদ্ধকালে এ বাহিনীর সদস্যগণ এমনকি নিজেরা নৌকা পর্যন্ত ক্রয় করে শত্রুর মোকাবিলা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স এন্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭০’ প্রণয়ন করেন। এতে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ বাহিনীর তত্ত্বাবধানে দেশের নদ-নদী ও সমুদ্রের জলরাশিতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার দর্শনের বাস্তবায়নকারী দল হিসেবে, সময়ের পরিক্রমায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি এবং উপকূলীয় এলাকায় নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করে একটি বিশেষায়িত বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে ১৯৯৪ সালে বিরোধীদলে থাকা অবস্থায় জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বিল’ উত্থাপন করে।
তিনি বলেন, প্রস্তাবটি আইনে পরিণত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব-রক্ষাকারী একটি বিকল্পবাহিনী হিসেবে ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড’ প্রতিষ্ঠিত হলেও মূলত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর এ সংস্থাটি কার্যক্রম শুরু করে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা কোস্টগার্ডকে ২টি টহল-জাহাজ এবং ২টি রিলিফ-বোট হস্তান্তর করি। ২০০১ সালে ‘বিসিজিএস রূপসী বাংলা’ নামে একটি ইনসোর প্যাট্রোল ভেসেলকে কোস্ট গার্ডে কমিশন করি। এছাড়াও সংস্থার অবকাঠামো-স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ প্রদান করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের পর আমরা এ বিশেষায়িত বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করা, প্রশিক্ষণ ঘাঁটি নির্মাণ, সমুদ্রগামী জলযান সংগ্রহ ও নির্মাণ, অবকাঠামো-নির্মাণ ও বর্ধিতকরণে প্রকল্প গ্রহণসহ এর সাংগঠনিক কাঠামোতে জনবল বৃদ্ধির দিকে মনোনিবেশ করি।
তিনি বলেন, গত ১২ বছরে আমরা এ বাহিনীতে বেশকিছু বিশেষায়িত হারবার প্যাট্রোল বোট, হাইস্পিড বোট, ইনসোর প্যাট্রোল ভেসেল, ফাস্ট প্যাট্রোল ভেসেল, ফ্লোটিং ক্রেন, ট্যাগসহ অফসোর প্যাট্রোল ভেসেল সংযোজন করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের সরকার কোস্টগার্ড সদস্যদের অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে তাদের কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডকে ‘ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড’ পুরস্কার প্রদান করে।
তিনি বলেন, আমরা এ বাহিনীকে অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে বিদ্যমান আইনকে হালনাগাদ করে ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড আইন, ২০১৬’ প্রণয়ন করি। শুধু তাই নয়, আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র ও সংস্থার সহযোগিতায় আমরা এ বাহিনীতে ২৫টি মেটাল শার্ক বোট, ৬টি ডিফেন্ডার বোট এবং ১০টি ১০ মিটার রেসকিউ বোট সংযোজন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অচিরেই এ সহযোগিতার আওতায় ৪টি পোর্টেবল পল্যুশন কন্ট্রোল ইকুইপমেন্টসহ ২০ মিটার রেসকিউ বোট এবং আরো ১০টি ১০ মিটার রেসকিউ বোট সংযোজন করবো। অদূর ভবিষ্যতে আমরা এ বাহিনীতে সকল আবহাওয়ায় চলাচল উপযোগী অত্যাধুনিক অফসোর প্যাট্রল ভেসেল ও হোভারক্রাফট সংযোজন করবো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সুবিশাল সমুদ্র এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি দেশের সুনীল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করতে কোস্ট গার্ড অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, এ বাহিনী সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে বনদস্যু-ডাকাত-চোরাকারবারী আটক, অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকানো এবং অবৈধভাবে সমুদ্রপথে বিদেশগমন রোধ, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, সমুদ্রে বিপন্ন জেলেদের উদ্ধারসহ মৎস্য সম্পদ-রক্ষা ও জাটকা নিধন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ বাহিনীর গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।