বাসস দেশ-১৯ : বরগুনার আমতলীতে অবৈধ সিসা’র কারখানা : প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র্য হুমকিতে

157

বাসস দেশ-১৯
সিসা-কারখানা
বরগুনার আমতলীতে অবৈধ সিসা’র কারখানা : প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র্য হুমকিতে
বরগুনা, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : জেলার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নে একটি অনুমোদনহীন ‘সিসা’ কারখানা থেকে বিষ ছড়িয়ে পড়েছে মাটিতে ও ফসলে। সিসার প্রাদূর্ভাবে ওই এলাকা প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র্য হুমকিতে রয়েছে।
আঙ্গুলকাটা গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপরে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুস ছত্তার ফকিরের ছেলে মো. ইয়ামিন ফকির তার সহযোগি আল আমিন ও মামুন মৃধাকে সাথে নিয়ে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই সিসা তৈরির অবৈধ কারখানাটি গড়ে তোলে দুই বছর আগে। মূলতঃ পরিত্যাক্ত অ্যাসিড ব্যাটারি ভেঙ্গে সেগুলোর কোষ উন্মুক্ত চুল্লিতে পুড়িয়ে সিসা তৈরী (অবমুক্ত) করা হতো। আমতলী উপজেলা ভেটেরোনারি সার্জন ডা. মো. আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, কারখানাটির আশ-পাশের জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় ১৩৮ গুন ও ধানের খড়ে ২ হাজার ৫৫৬ গুন বেশী সিসার উপস্থিতি পেয়েছে ঢাকা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও বিশ^ খাদ্য সংস্থা (এফও)’র গাইড লাইন অনুসারে মাটিতে সীসার পরিমাণ ০.৬৫ মাইক্রোগ্রাম এবং উদ্ভিদে ০.৩০ মাইক্রোগ্রাম। এই এলাকার মাটিতে সিসার পরিমাণ ৮৯.৫ আর খড়ে রয়েছে ৭৬৬.৭ মাইক্রোগ্রাম সিসা।
কারখানা সংলগ্ন এলাকার মানুষের মধ্যে শ^াসকষ্ট ও হাপানির লক্ষণ ধরা পড়েছে। ওই এলাকায় ইতোমধ্যে সিসার বিষক্রিয়ায় ১৫টি গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে কারখানার পরিচালক মো. ইয়ামিন ফকির গা ঢাকা দিয়েছে। সে মুঠোফোনে সিসার বিষক্রিয়ার গরু মারা যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।
আমতলীর প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার মোদক জানান, অতিমাত্রায় সিসার বিষক্রিয়াই বেশ’কটি গরু মারা গেছে। সিসা কারখানা এলাকার প্রাণিকুল রক্ষায় ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়েছে। ওই এলাকার গবাদী পশুকে খড়, ঘাস ধুয়ে ও রোদে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়াতে বলা হয়েছে।
আমতলীর উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম জানান, সিসার প্রাদূর্ভাবে ওই এলাকা প্রকৃতি ও জীব বৈচিত্র্য হুমকিতে রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী জানিয়েছেন, সিসা গলানোর সময় বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য বাতাসের সাথে ছড়িয়ে পড়ে। যা মানব দেহ ও জীব বৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সিসার প্রভাবে মানবদেহে অ্যাজমা, শ^াসকষ্ট, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের মত ভয়াবহ রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, সীসা কারখানা গড়ে তোলা পরিবেশ আইনে একেবারেই নিষিদ্ধ।
আমতলীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে অবৈধ সীসা কারখানার বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাসস/এনডি/সংবাবদাতা/১৪৫৫/কেজিএ