দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভূমিকা রাখছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি

171

ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : সরকারের সম্প্রসারিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় জি টু পি পদ্ধতিতে সরাসরি উপকার ভোগীর কাছে সহায়তা পৌঁছে দেয়ার ফলে উপকৃত হচ্ছেন দেশের গ্রামীণ প্রান্তিক পর্যায়ের বিশাল এক জনগোষ্ঠী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ ১০ উদ্যোগের একটি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এই কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৮৮ লাখ ৫০ হাজার গ্রামীণ প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ উপকারভোগী বর্তমানে অর্থনৈতিক দূর্বলতা কাটিয়ে উন্নত জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহফুজা আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মাসে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভাতা প্রদানের জন্য জি টু পি কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন। এই পদ্ধতিতে ‘বিকাশ’ এবং ‘নগদ’এর মাধ্যমে সরাসরি ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষের কাছে যাতে অতি দ্রুত ভাতা পৌঁছায় সেটি নিশ্চিত করতে আমরা জি টু পি পদ্ধতির মাধ্যমে ভাতা প্রদান করছি এবং কোন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকলে তা নিরুপনের চেষ্টা করছি।
এই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তার মতে, প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্টীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্য এবং জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রামীণ সমাজ কল্যাণ কার্যক্রম চালু করেছিলেন আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭-১৯৯৮ সালে পুনরায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভাগ্যন্নোয়নে এই কার্যক্রম গ্রহণ করেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরনে সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে খুব আন্তরিকভাবে কাজ করছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সূত্র মতে, বর্তমান সময়ে চারটি সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় সর্বমোট উপকারভোগীর সংখ্যা গত অর্থ বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।
সরকার সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে যা ২০২০-২০২১ অর্থবছরের পুরো বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক ০১ শতাংশ এবং এ খাতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল ৮১,৮৬৫ কোটি টাকা।
উপকারভোগীদের মধ্যে রয়েছে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা নারী এবং অস্বচ্ছল এবং শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। এছাড়াও, শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।
পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমা ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ হতে ২০২০ সালে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে। দারিদ্র্যের হারের মধ্যে ২০২০ সালে অতি দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ১০ শতাংশে যা ২০০৫ সালে ছিল ২৫ দশমিক ১ শতাংশ।
সরকার ১৪৫ টি সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রায় ৪৯ লক্ষ লোক বয়স্ক ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে পাচ্ছেন জনপ্রতি ৫০০ টাকা, প্রায় ২০ লাখ ৫০ হাজার বিধবা অথবা স্বামী পরিত্যক্তা নারী প্রতি মাসে জনপ্রতি পাচ্ছেন ৫০০ টাকা করে। সর্বমোট ১৮ লাখ অস্বচ্ছল শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রতি মাসে পাচ্ছেন জনপ্রতি ৭৫০ টাকা। এছাড়া, সরকার শারিরীক প্রতিবন্ধীদের বৃত্তির সংখ্যা ১২ লাখ বৃদ্ধি করেছে।
প্রকৃতপক্ষে সরকার উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে। কিন্তু, কোভিড-১৯ কারণে আরো ৪ দশমিক ২৭ শতাংশ বা ৩ দশমিক ৩০ লাখ জনসংখ্যা ভাতার আওতায় আনা হয়েছে।
এছাড়া, দেশের ১১২টি দারিদ্র্য কবলিত উপজেলায় শতভাগ বিধবা এবং বয়স্ক ভাতা প্রদান করা হবে এবং এ বছর হতে সকল ধরনের শারিরীক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এই ভাতা কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।
২০২০-২০২১ অর্থবছরে সর্বমোট ১৭,৬৭৫ টি আবাসিক সরকারি পরিবারের শিশু এবং আবাসিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ৭৪ দশমিক ২৩ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। একই অর্থ বছরে ১ লাখ এতিমের জন্য ২৪০ কোটি টাকা এবং সরকারি এতিমখানার ১০,৩০০ এতিমের জন্য ৪৩ দশমিক ২৬ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে।
দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রমের আওতায় সরকার এ পর্যন্ত ৪৩ লাখ ৬ হাজার ২০৬ জনের কাছে সুদবিহীন ৭০৭ কোটি ২৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করেছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে গ্রামীণ সামাজিক কল্যাণ কার্যক্রমের আওতায় আরো ৫০ কোটি টাকা বরাদ্ধ দিয়েছে সরকার। এছাড়া, সরকার রুরাল মেটারনাল সেন্টার (আরএমসি) কার্যক্রমের আওতায় ২২ কোটি টাকা এবং অগ্নিদগ্ধ এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুনঃর্বাসন কার্যক্রমের জন্য ১ দশমিক ৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।
গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়নে এবং তাদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পল্লী মাতৃকেন্দ্র এর কার্যক্রম খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলার ৪৯৪টি ইউনিয়নের ১৪,৮০৬টি গ্রামে মেটারনাল সেন্টার স্থাপন করে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
গত ৪৫ বছরে (১৯৭৫ হতে জুন, ২০২০ পর্যন্ত) ১৩ লাখ ৭ হাজার ২৬ জন গ্রামীণ অসহায় নারী এই মেটারনাল সেন্টারের সদস্য হয়েছে। এসব সদস্যের মধ্যে ৯ লাখ ৭০ হাজার ৬৯৬ জন নারীকে বিভিন্ন ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ গ্রহনের জন্য ১৮৯ কোটি ৫০ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে, যাতে তারা নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে।
আরবান সোশ্যাল সার্ভিস এক্টিভিটিস হল সমাজ সেবা অধিদপ্তরের অধীনস্ত একটি কর্মসূচি। এই কর্মসূচির আওতায় শহরের দরিদ্র জনগোষ্টীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। বর্তমানে কর্মসূচিটি সিটি কর্পোরেশন এবং জেলা শহরসহ ৮০টি শহরে সমাজ কল্যাণ অফিসের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এই কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত উপকার ভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৩৯ লাখ ৮৭৫টি পরিবার এবং বর্তমানে এই কর্মসূচির মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫১ কোটি ৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।