সময়োপযোগী কৃষিনীতি আর কৃষকদের পরিশ্রমে বদলে গেছে কুমিল্লার কৃষির চিত্র

253

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : আধুনিক প্রযুক্তি, সময়োপযোগী কৃষিনীতি আর কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বদলে গেছে কুমিল্লার ৃকৃষির চিত্র। কৃষিক্ষেত্রে সবজি চাষে নীরব বিপ্লব ঘটেছে। সবজির উৎপাদন দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকদের আয়ও বেড়েছে। কৃষক বিবর্তিত জলবায়ূর সাথে সংগ্রাম করে কৃষি বিপ্লবে এখন মাঠে ময়দানে কাজ করছেন। বৈরী আবহাওয়াকে চ্যালেঞ্জ করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল ফলাতে এখন কঠোর পরিশ্রম করছেন। এ যুদ্ধ কুমিল্লার গ্রামে গ্রামে মাঠে মাঠে বাড়ির আঙ্গিনায় আঙ্গিনায়। এ সংগ্রাম যেন সর্বত্র। মাটির মাঝে তুলে আনছে ফসলের খাটি সোনা। গত দুই যুগ আগের কৃষি কাজের সাথে বিস্তার ফারাক এখনকার প্রযুক্তি। যেখানে একদা সবজি চাষ ছিল আকাশকুসুম কল্পনা মাত্র সেখানে সবজি চাষ এখন আর্শিবাদ। বৈরী আবহাওয়াকে হাতের মুঠোয় কব্জা করে মাঠের সেই কৃষক এখন সোনা ফলাচ্ছে। সবজির দামও ভালো পাচ্ছে। কৃষক তাই কোমর বেধে কৃষিযজ্ঞে পরিবর্তন আনছে। তাই উচ্চফলনশীল সবজি চাষ কুমিল্লার কৃষকের ভাগ্য ক্রমেই বদলে দিয়েছে এ সবজি চাষ বিপ্লব। কুমিল্লার গ্রামে গ্রামে চাষ হচ্ছে এ সবজি। কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকরা এখন উচ্চফলনশীল জাতের শাক-সবজির চাষ করছেন। চাষিরা দেশীয় বীজ বাদে হাইব্রিড চাষ করে অধিকফলন ফলাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কৃষিকাজে যন্ত্রপাতির বদলে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। কেবল জমি চাষই নয়, জমিতে সার দেওয়া, কীটনাশক ছিটানো থেকে শুরু করে সবই আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে করা যাচ্ছে। কৃষিবিদরা মনে করছেন সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা, কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার, পরিশ্রমী কৃষক এবং মেধাবী কৃষি বিজ্ঞানী যৌথ প্রয়াসেই এমন সাফল্য এসেছে।
কৃষি বিভাগের পরামর্শে কুমিল্লার হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ এখন নজর কাড়ার মত। যেখানে কোনদিন সবজি চাষের অস্তিত্বই ছিল না সেখানে এখন সবুজের সমরাহ। বুড়িচং উপজেলার শিকারপুর গ্রামের কৃষক রমিজ উদ্দিন বাসসকে জানান, ১১-১২ বছর ধরে তিনি কৃষি কাজের সাথে আছেন। এটি তার প্রধান পেশা। চলতি বছর ৫ বিঘা জমিতে লাউ চাষ করে প্রায় ২ লাখ টাকার বেচা কেনা করেছেন। প্রতিদিন ২শ’ থেকে ৩শ’ লাউ বাজারজাত করেন। সাথে কপি ও শিম চাষ চলছে। ডুবাইরচর গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম (৫২) ছোট বেলা থেকেই কৃষি কাজ করে সংসার চালান। এ বছর ২ একর জমিতে বরবটি লাগিয়েছেন। প্রতিদিন ১-২ মণ বরবটি তুলছেন। এতে তার খরচ হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যেই তিনি ৪০ হাজার টাকার বরবটি বিক্রি করেছেন। শ্রীমন্তপুর গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম তিন বছর ধরে শিম আবাদ করে ভালো দাম পেয়েছেন। এবার শিমের পাশাপাশি অন্যান্য সবজিও চাষ করেছেন। অল্প সময়ে ফসল তোলার পাশাপাশি রোগবালাই এবং লোকসানের শংকা কম বলে আমিরুলের মতো অনেকেই এখন সবজি চাষ করছেন। ডুবাইরচর গ্রামের কৃষক রমজান আলী বাসসকে বলেন, তার জমিতে লাউ, বরবটি, মূলা ও ডাটা শাক রোপণ করে তার খরচের টাকা উঠে এখন লাভের মুখ দেখেছে। গত বছর ৩শ’ ঝাড়ে আলাভী গ্রীণ জাতের শসা, টিয়া জাতের করলা এবং মার্টিনা জাতের লাউ বীজ রোপণ করেছিলেন। এবার লাউ শাক বিক্রি করে বেশ টাকা এসেছে।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক সুরজিত দত্ত বাসসকে বলেন, ফলন ভালো হওয়ায় কৃষক উচ্চফলনশীল সবজি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। উচ্চফলনশীল সবজি চাষে অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় চাষিদের মাঝে ব্যপক সাড়া ফেলেছে। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। চাষাবাদে কাঠের লাঙ্গলের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। কৃষি কাজের মধ্যে সবচেয়ে শ্রমনির্ভর কাজ হচ্ছে বীজ বা চারা রোপণ, আগাছা দমন ও ফসল কাটা। মৌসুমের নির্দিষ্ট সময়ে বীজ বপন, চারা রোপণ এবং ফসল কেটে ঘরে তুলতে কৃষককে বেশ সংকটে পড়তে হয়। ওই সময়ে কৃষি শ্রমিকের মজুরি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। কখনো কখনো দ্বিগুণ মজুরি দিয়েও কৃষি শ্রমিক পাওয়া যায় না। ফলে বিলম্বে বীজ রোপণের জন্য ফলন কম হয়, পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাইয়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এসব থেকে রক্ষা পেতেই কৃষি কাজে আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় এতে যেমন সময় কম লাগছে, তেমনি বেশি ফসলও উৎপাদন হচ্ছে। যার ফলে কৃষক লাভবান হচ্ছে।