চট্টগ্রাম টেস্ট: মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে এগিয়ে বাংলাদেশ

490

চট্টগ্রাম, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : ব্যাট হাতে নিজের প্রথম সেঞ্চুরির পর বল হাতেও মিরাজের ভেল্কিতে চট্টগ্রমি টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে রয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। দুই ম্যাচ সিরিজে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৫৯ রানে অলআউট করে দেয় বাংলাদেশের বোলাররা। ফলে প্রথম ইনিংস থেকে ১৭১ রানে লিড পায় বাংলাদেশ। তবে দিন শেষে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে ২১৮ রানে এগিয়ে টাইগাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ৪৭ রান করেছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে মেহেদি হাসান মিরাজের ১০৩ রানের সুবাদে ৪৩০ রান করেছিলো বাংলাদেশ।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে গতকাল, দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনে নিজেদের প্রথম ইনিংস শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিন শেষে ২৯ ওভারে ২ উইকেট ৭৫ রান করেছিলো সফরকারীরা। অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট ৪৯ ও এনক্রুমার বোনার ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন।
আজ দিনের প্রথম বলেই আগের দিন করা ১৭ রানেই বোনারকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান বাংলাদেশের স্পিনার তাইজুল ইসলাম।
বোনারের বিদায়ের পর টেস্ট ক্যারিয়ারের ২০তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন ব্র্যাথওয়েট। হাফ-সেঞ্চুরির পর কাইল মায়ারসের সাথে দলের স্কোর বড় করতে থাকেন তিনি। উইকেটের সাথে মানিয়ে নিয়ে জুটিতে হাফ সেঞ্চুরি পুরন করেন।
হাফ-সেঞ্চুরির পরই এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান বাংলাদেশের অফ-স্পিনার নাইম হাসান। দারুন এক ডেলিভারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলপতিকে বোল্ড করেন নাইম। ১১১ বলে ১২টি চারে ৭৬ রান করেন ব্র্যাথওয়েট। চতুর্থ উইকেটে মায়ারসের সাথে ৬৮ বলে মূল্যবান ৫৫ রান যোগ করেন তিনি।
অধিনায়কের বিদায়ের পর আক্রমনাত্মক হয়ে বাংলাদেশ বোলারদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন মায়ারস। দৃষ্টিনন্দন কিছু শটে ৭টি বাউন্ডারিও তুলে নেন তিনি। এমন অবস্থায় মায়ারসকে থামান স্পিনার মিরাজ। মিরাজের বলে লেগ বিফোর হওয়ার আগে ৬৫ বলে ৪০ রান করেন মায়ারস।
২৪ রানের ব্যবধানে দুই সেট ব্যাটসম্যান ব্র্যাথওয়েট ও মায়ারসের আউটে চাপে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলকে চাপ থেকে মুক্ত করতে সতর্কতার সাথে এগোতে থাকেন জার্মেই ব্ল্যাকউড ও উইকেটরক্ষক জসুয়া ডা সিলভা। প্রথম সেশনে এই দুই ব্যাটসম্যানকে আউট করতে না পারায় ব্লাকউড ৩৪ ও সিলভা ১২ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান।
বিরতি থেকে ফিরেও, প্রতিপক্ষ বোলারদের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিচ্ছিলেন ব্ল্যাকউড ও সিলভা। দলীয় ১৫৪ রানে জুটি বেঁধে দলের স্কোর আড়াইশ পার করেন তারা।
এমন অবস্থায় সিলভাকে শিকার করে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন নাইম। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৪২ রানে আউট হন সিলভা। তার ১৪১ বলের ইনিংসে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা ছিলো। ম্যাচে এখন পর্যন্ত ১টি ছক্কা এসেছে সিলভার ব্যাট থেকে। ষষ্ঠ উইকেটে ২৫৫ বলে ৯৯ রান দলের স্কোরবোর্ডে জমা করেন ব্যøাকউড ও সিলভা।
সতীর্থকে হারিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন দারুন খেলতে থাকা ব্লাকউড। ৩ বল পরই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। বাংলাদেশের বোলারদের দারুনভাবে সামলাতে থাকা ব্যøাকউডকে ৬৮ রানে থামান মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ-সেঞ্চুরির করা ব্লাকউড ১৪৬ বল খেলে ৯টি চার হাঁকান।
দলীয় ২৫৩ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সিলভার আউটের পর ধস নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে। এরপর ২৫৯ রানে অলআউট হয় তারা। অর্থাৎ শেষ ৬ রানে শেষ ৫ উইকেট হারায় ক্যারিবীয়রা।
আট নম্বরে নামা রাকিম কর্নওয়ালকে ২ ও নয় নম্বরে ন নামা কেমার রোচকে খালি হাতে বিদায় দেন মিরাজ। আর দশ নম্বরে নামা ওয়ারিকানকে ৪ রানে বোল্ড করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসের সমাপ্তি টানেন তাইজুল।
বাংলাদেশের মিরাজ ২৬ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত চার উইকেট নিলেন মিরাজ। এছাড়া মুস্তাফিজুর-নাইম-তাইজুল ২টি করে উইকেট শিকার করেন। বাম ঊরুর ইনজুরিতে পড়ায় আজ বল করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। গতকাল ৬ ওভারে ১৬ রান দিয়ে উইকেটশুন্য ছিলেন তিনি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৫৯ রানে গুটিয়ে দিয়ে প্রথম ইনিংস থেকে ১৭১ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। তাই ফুরফুরা মেজাজে শেষ সেশনে নিজেদের ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ।
ব্যাট হাতে নেমে মহাবিপদে পড়ে বাংলাদেশ। ১ রানে ২ উইকেট হারায় টাইগাররা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ ও শেষ বলে বাংলাদেশের ওপেনার তামিম ইকবাল ও তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্তকে রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে পাঠান ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার কর্নওয়াল।
শুরুতেই ২ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে চিন্তামুক্ত করার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম ও অধিনায়ক মোমিনুল হক। উইকেট বাঁচিয়ে খেলতে শুরু করেন সাদমান। অন্যপ্রান্তে রানের চাকা সচল করেন মোমিনুল। ফলে ১৪ ওভার পর্যন্ত ৩২ রানের জুটি গড়ে ফেলেন তারা। যেখানে মাত্র ৫ রান অবদান ছিলো সাদমানের। আর মোমিনুলের ছিলো ৩৮ বলে ২৭ রান।
তবে ১৫তম ওভারের প্রথম বলে সাদমানের বিদায় নিশ্চিত করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার গাব্রিয়েল। ৪২ বলে ৫ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাদমান।
এরপর দিনের শেষ সময়ে আর কোন উইকেট পতন হতে দেননি মোমিনুল ও মুশফিকুর রহিম। মোমিনুল ৩১ ও মুশফিক ১০ রানে অপরাজিত আছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কর্নওয়াল ২টি ও গ্যাব্রিয়েল ১টি উইকেট নেন।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস : ৪৩০/১০, ১৫০.২ ওভার (মিরাজ ১০৩, সাকিব ৬৮, সাদমান ৫৯, ওয়ারিকান ৪/১৩৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস (আগের দিন ৭৫/২, ২৯ ওভার, ব্রার্থওয়েট ৪৯*, বোনার ১৭*) :
ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট বোল্ড নাইম হাসান ৭৬
জন ক্যাম্পবেল এলবিডব্লু ব মুস্তাফিজুর ৩
শায়নে মোসলে এলবিডব্লু ব মুস্তাফিজুর ২
এনক্রুমার বোনার ক শান্ত ব তাইজুল ১৭
কাইল মায়ারস এলবিডব্লু ব মিরাজ ৪০
জার্মেই ব্যøাকউড ক লিটন ব মিরাজ ৬৮
জসুয়া ডা সিলভা ক লিটন ব নাইম ৪২
রাকিম কর্নওয়াল বোল্ড ব মিরাজ ২
কেমার রোচ ক মিঠুন ব মিরাজ ০
জোমেল ওয়ারিকান বোল্ড ব তাইজুল ৪
শানন গ্যাব্রিয়েল অপরাজিত ০
অতিরিক্ত (লে বা-১, নো-৪) ৫
মোট (অলআউট, ৯৬.১ ওভার) ২৫৯
উইকেট পতন : ১/১১ (ক্যাম্পবেল), ২/২৪ (মোসলে), ৩/৭৫ (বোনার, ৪/১৩০ (ব্রার্থওয়েট), ৫/১৫৪ (মায়ারস), ৬/২৫৩ (সিলভা), ৭/২৫৩ (ব্লাকউড), ৮/২৫৩ (রোচ), ৯/২৫৯ (কর্নওয়াল), ১০/২৫৯ (ওয়ারিকান)।
বাংলাদেশ বোলিং :
মুস্তাফিজ : ১৫-৪-৪৬-২ (নো-১),
সাকিব : ৬-১-১৬-০,
মিরাজ : ২৬-৯-৫৮-৪ (নো-১),
তাইজুল : ৩৩.১-১১-৮৪-২ (নো-২),
নাইম : ১৬-১-৫৪-২।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস :
সাদমান ইসলাম ক সিলভা ব গ্যাব্রিয়েল ৫
তামিম ইকবাল এলবিডব্লু ব কর্নওয়াল ০
নাজমুল হোসেন শান্ত ক ব্লাকউড ব কর্নওয়াল ০
মোমিনুল হক অপরাজিত ৩১
মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ১০
অতিরিক্ত (নো-১) ১
মোট (৩ উইকেট, ২০ ওভার) ৪৭
উইকেট পতন : ১/১ (তামিম), ২/১ (শান্ত), ৩/৩৩ (সাাদমা),
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :
কেমার রোচ : ৪-১-৫-০ (নো-১),
রাকিম কর্নওয়াল : ৯-১-২৮-২,
শ্যানন গাব্রিয়েল : ৬-০-১৩-১,
জোমেল ওয়ারিকান : ১-০-১-০।