সাউদাম্পটনের জালে ইউনাইটেডের ৯ গোল

547

ম্যানচেস্টার, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ (বাসস) : নয় জনের সাউদাম্পটনকে ৯-০ গোলে বিধ্বস্ত করে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটির সাথে সমান পয়েন্টে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে উঠে এসেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে এক ম্যাচে এটা তৃতীয় ৯ গোলের ঘটনা।
এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় মৌসুমে সেইন্টরা ৯ গোলের লজ্জায় ডুবলো। গত মৌসুমে সেন্ট মেরি’সে একই ব্যবধানে লিস্টার সিটির কাছে তারা বিধ্বস্ত হয়ছিল। ১৯৯৫ সালে ইচউইচের জালে ৯ গোল দিয়ে ইউনাইটেডই প্রথম এই রেকর্ড গড়েছিল।
ওল্ড ট্রাফোর্ডের ম্যাচটিতে শুরুর দ্বিতীয় মিনিটে অভিষিক্ত সুইস মিডফিল্ডার আলেক্সান্দ্রে জানকেউইজ লাল কার্ডের কারনে মাঠ ত্যাগে বাধ্য হলে সফরকারীদের দু:সয়ম শুরু হয়। বিরতির আগে এ্যারন ভন-বিসাকা, মার্কোস রাশফোর্ড, এডিনসন কাভানি ও ইয়ান বেডনারেকের গোলে ইউনাইটেড ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায়। এ্যান্থনি মার্শাল বদলী বেঞ্চ থেকে উঠে এসে দ্বিতীয়ার্ধে দুই গোল দিয়েছেন। ৮৬ মিনিটে বেডনারেক দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারনে মাঠ ত্যাগ করলে সাউদাম্পটন ৯ জনের দলে পরিণত হয়। মার্শালের সাথে দ্বিতীয়ার্ধে আরো গোল দিয়েছেন স্কট ম্যাকটোমিন, ব্রুনো ফার্নান্দেস ও ড্যানিয়েল জেমস।
ইউনাইটেডের থেকে দুই ম্যাচ কম খেলে সিটি ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে। ২০১১/১২ মৌসুমে গোল ব্যবধানে ইউনাইটেডকে পিছনে ফেলে শিরোপা জয় করেছিল সিটিজেনরা। ঐ স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি রেড ডেভিলসরা। ইউনাইটেড বস ওলে গানার সুলশারও সেই স্মৃতি ভুলে শিরোপা নিশ্চিত করতে চান।
এ সম্পর্কে সুলশার বলেছেন, ‘আমরা জানি গোল ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ার স্মৃতি কতটা দু:সহ। কারন আমরা লিগ শিরোপ হারিয়েছিলাম এই গোল ব্যবধানের কারনেই।’
গত দুই সপ্তাহে তলানির দল শেফিল্ড ইউনাইটেডের কাছে ২-১ গোলের হতাশাজনক পরাজয়ে পর আর্সেনালের সাথে গোল শুন্য ড্র করে পয়েন্ট হারিয়েছে ইউনাইটেড। যে কারনে সুলশার আগেই তার ফরোয়ার্ডদের আরো বেশী সতর্ক হবার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তার প্রতিদান কাল ঠিকই দিয়েছে রাশফোর্ড, মার্শাল, কাভানিরা। ২০২১ সালে এখনো পর্যন্ত নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি রাশফোর্ড, মার্শাল ও ফার্নান্দেস। কিন্তু মৌসুমের দ্বিতীয় ভাগে এসে খেলোয়াড়রা নিজেদের আত্মবিশ^াস ঠিকই ফিরে পাবে এবং সেই শক্তিতে শিরোপা দৌঁড়ে রেড ডেভিলসরা ঠিকই টিকে থাকবে বলে সুলশার বিশ^াস করেন।
ইউনাইটেডস বস বলেন, ‘আমরা যাদু দেখানোর জন্য অপেক্ষায় ছিলা। আর সেই রাতটা ছিল কাল। সবাই মিলে আমরা অবশ্যই এই জয় উপভোগ করবো। এবারের আসরে এমন সময় খুব কমই এসেছে যখন আমরা দ্বিতীয়ার্ধ পুরোটা দারুনভাবে উপভোগ করেছি।’
লিস্টারের কাছে আগের মৌসুমে ৯-০ গোলে বিধ্বস্ত হবার পর সাউদাম্পটনের চাকরি কোনমতে রক্ষা পেয়েছিল কোচ রাফ হ্যাসেনহাটেলের। কিন্তু মৌসুমের শুরুটা দারুনভাবে হলেও সেইন্টসরা টানা চার লিগ ম্যাচে পরাজিত হয়ে টেবিলের ১২তম স্থানে নেমে গেছে। ইতোমধ্যেই দলে দেখা দিয়েছে ইনজুরি সমস্যা। যে কারনে ১৯ বছর বয়সী সুইস মিডফিল্ডার জানকুইজের অভিষেক হয়। কিন্তু ম্যাকটোমিনেকে ফাউলের অপরাধে মাত্র ৭৯ সেকেন্ডে তাকে মাঠ ত্যাগ করতে হলে অভিষেকটা মোটেই স্মরণীয় হয়নি।
হ্যাসেনহাটেল বলেছেন, ‘ম্যাচের শুরুতেই জানকুইজ বেরিয়ে যাওয়ায় খেলোয়াড়রা বেশ অসহায় হয়ে পড়ে। এই ধরনের দলের বিপক্ষে ৯০ মিনিট টিকে থাকাটা অনেক লম্বা সময়। ফলাফলই তার প্রমান। আমাদের আবারো বড় পরাজয়ের মুখ দেখতে হলো। আমি এই মুহূর্তে মৌসুমে আমরা কি করেছি তার উপর আলোকপাত করতে চাইনা। এর বর্ণনা দেয়া কঠিন। আমাদের আবারো সেই অবস্থানে ফিরে আসতে হবে।’
১৮ মিনিটে ফন-বিসাকা ইউনাইটেডের হয়ে গোলের দরজা উন্মুক্ত করেন। লুক শ’র ক্রস থেকে তিনি ইউনাইটেডের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় গোল করেন। ২৫ মিনিটে ম্যাসন গ্রীনউডের ক্রস থেকে রাশফোর্ড ব্যবধান দ্বিগুন করেন। ৩৪ মিনিটে রাশফোর্ডের লো ক্রস থেকে বেডনারেক আত্মঘাতি গোলের লজ্জায় ফেলেন সফরকারীদের। পাঁচ মিনিট পর শ’র আরো একটি ক্রস থেকে উরুগুইয়ান অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার কাভানি দলের ব্যবধান ৪-০’তে নিয়ে যান।
বিরতির পর হ্যাসেনহাটেলের দল কিছুটা আক্রমনাত্মক হয়ে উঠে। তারই ধারাবাহিকতায় চে এ্যাডামসের সান্তনাসূচক গোলটি অবশ্য অল্পের জন্য অফসাইডের কারনে বাতিল হয়ে যায়। ৬৯ মিনিটে ফার্নান্দেসের থ্রু বল থেকে আট ম্যাচের গোলখরা কাটিয়ে অবশেষে গোলের দেখা পেয়েছেন মার্শাল। দুই মিনিট পর ম্যাকটোমিনে দুর পাল্লার শটে দলের হয় ষষ্ঠ গোলটি পূরণ করেন। মার্শালকে ফাউলের অপরাধে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডের কারনে মাঠত্যাগে বাধ্য হন বেডনারেক। বাকি চার মিনিট সাউদাম্পটনকে ৯ জন নিয়ে খেলতে হয়েছে। এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে আরো তিন গোল আদায় করে নিয়েছে ইউনাইটেড। বেডনারেকের ফাউলের বিপরীতে আদায় করা পেনাল্টি থেকে ফার্নান্দেস ঠান্ডা মাথায় গোল নিশ্চিত করেন। এর মাধ্যমে পাঁচ ম্যাচ পরে গোল পেলেন এই পর্তুগীজ তারকা। ৯০ মিনিটে ভন-বিসাকার ক্রস থেকে মার্শাল ও ইনজুরি টাইমে জেমসের গোলের ইউনাইটেডের বড় জয় নিশ্চিত হয়।