পাহাড়ের হাতি সুরক্ষায় সোলার ফেন্সিং সিস্টেম স্থাপনের উদ্যোগ

375

রাঙ্গামাটি, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : পাহাড়ে জীব বৈচিত্র্য রক্ষা, মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্ব নিরসন এবং বনের হাতিকে নিজস্ব অভয়ারণ্যে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পাহাড়ে ফেন্সিং সোলার সিস্টেম স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগ।
ফেন্সিং সোলার সিস্টেম স্থাপন করতে পারলে বন থেকে লোকালয়ে হাতি মানুষের উপর আর মানুষ হাতির উপর আক্রমণ করতে পারবেনা। এতে হাতির আক্রমণ থেকে মানুষ রক্ষা পাবে এবং হাতি ও অনেকটা নিরাপদে থাকবে বলে জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মোঃ রফিকুজ্জামান শাহ।
ফেন্সিং সোলার সিষ্টেম পদ্ধতির বিষয় নিয়ে তিনি জানান, ফেন্সিং সোলার সিষ্টেম হচ্ছে মূলত হাতি বা অন্যান্য জীবজন্তুর অভয়ারণ্যস্থলের চতুর্পাশে কাটা তারের মাধ্যমে পিলার স্থাপনের মাধ্যমে সেখানে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে একধরনের বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট কৌশল।
এটি স্থাপন করা গেলে অভয়ারণ্য পেরিয়ে কোন হাতি বা অন্য জীবজন্তু পার হতে চাইলে ফেন্সিং সোলার প্যানেলের কাটা তারের সংস্পর্শে আসলে তারা বৈদ্যুতিক শর্টের মতো একটা প্রতিরোধের মুখে পড়বে। এতে ভয় পেয়ে ফেন্সিং প্যানেল পেরিয়ে হাতি বা অন্য প্রাণীরা তা পার হবেনা।
তিনি জানান, চলতি বছরেই প্রাথমিকভাবে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই উপজেলার হাতির অভয়ারণ্য ও চলাচলের রাস্তার ৪ কিলোমিটার এলাকা এবং আগামী বছর আরো ৪ কিলোমিটার এলাকায় ফেক্সিং সোলার সিষ্টেম চালু স্থাপনের পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা পেলে অচিরেই কাজ শুরু করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি আরো জানান,পরিকল্পনা অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে পাহাড়ের জীব বৈচিত্র রক্ষা ও হাতির অভয়ারণ্য সুরক্ষা করতে রাঙ্গামাটির বিভিন্ন উপজেলায় দৃূর্গম এলাকা চিহ্নিত করে ফেন্সিং সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মোঃ রফিকুজ্জামান শাহ বলেন, হাতিসহ পাহাড়ের বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল অবাধে দখল হওয়ার কারণে পাহাড়ে বসবাসরত স্থানীয় মানুষ ও হাতির মধ্যে এক প্রকার দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ত স্থানীয় মানুষের আক্রমণে হাতি এবং হাতির আক্রমণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,পাশাপাশি হুমকিতে পড়ছে এ অঞ্চলের জীব বৈচিত্র্য।
এ পরিস্থিতি রোধ করতে হাতির অভয়ারণ্য ও চলাচলের রাস্তাগুলো সুরক্ষা করতে ফেন্সিং সোলার সিষ্টেম স্থাপন করার উদ্যোগ নিচ্ছে বনবিভাগ।
এ বিষয়ে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান বলেন,রাঙ্গামাটির ১০টি উপজেলার মধ্যে কাপ্তাই, লংগদু, বাঘাইছড়ি,বিলাইছড়ি,নানিয়ারচরে হাতির অভয়ারণ্য রয়েছে। এসব উপজেলায় প্রায়ই লোকালয়ে এসে মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা করে হাতির পাল। পরে হাতির আক্রমণ প্রতিরোধে মানুষ ও হাতির উপর আক্রমণ করার ফলে হাতি এবং মানুষ উভয়েই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থা রোধে ফেন্সিং সোলার সিষ্টেম স্থাপন গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মফিজুল হক বলেন, পাহাড়ে হাতিসহ বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য ধংস করে সেখানে মানুষের বসবাসের কারণে হাতিসহ বন্যপ্রাণীরা খাদ্যের খোঁজে লোকালয়ে আসে।এ পরিস্থিতিতে জনগণকে সচেতন করতে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাঙ্গামাটিতে পাহাড় ও বনজঙ্গল জবর দখলের কারণে পাহাড়ে বসবাসরত স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে ইতিমধ্যে ১২টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছে এবং বিলুপ্তির পথে আরো ১৭ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে বলে জানিয়েছে রাঙ্গামাটি বনবিভাগ।
পাহাড়ে জীব বৈচিত্র্যরক্ষা,হাতির অভয়ারণ্য রক্ষায় বনবিভাগের প্রস্তবনানুযায়ী ফেক্সিং সোলার সিস্টেম স্থাপন করা গেলে এখানে হাতি ও জীব বৈচিত্র্য অনেকটাই সুরক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।