চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস আজ

307

চট্টগ্রাম, ২৪ জানুয়ারি ২০২১ (বাসস) : আজ ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস। এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৮ সালের এদিনে ঐতিহাসিক লালদিঘি মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভা ভ-ুল করার হীন মানসে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করে। সেই থেকে এদিনটি চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস হিসেবে ইতিহাসের একটি কলংকিত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতন আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বিকেল ৩ টায় লালদিঘি মাঠে জনসভা আহবান করে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ। বিকেল ৩ টার আগেই জনসভার মাঠ পূর্ণ হয়ে আন্দরকিল্লা থেকে কোতোয়ালীর মোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জনসভার প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা জনসভাস্থলে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে পৌঁছুলে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ অতর্কিতে তাঁর গাড়িবহর লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় শেখ হাসিনাকে ঘিরে রাখা ২৪ জন নেতাকর্মী পুলিশের গুলিতে নিহত হন। আহত হন আরো কয়েক শত।
নিহতরা হলেন, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, বদরুল আলম, স্বপন চৌধুরী, ডি কে চৌধুরী, মো. হাসান মুরাদ, এথেলবার্ট গোমেজ কিশোর, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মো. কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত।
পুলিশের বেপরোয়া গুলির মুখে আইনজীবীদের একটি দল মানবপ্রাচীর তৈরি করে শেখ হাসিনাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালীন এ নিয়ে কোনো মামলা করা যায়নি। এরশাদের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ এডভোকেট মো. শহীদুল হুদা বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু বিএনপির সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এ মামলার কার্যক্রম আর এগোয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর মামলাটি সচল হয়। আদালতের আদেশে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি প্রথম এবং ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাসহ আট পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা ছিলেন, কোতোয়ালী জোনের পেট্রোল ইনস্পেক্টর জে সি ম-ল, কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, শাহ মো. আবদুল্লাহ ও মমতাজ উদ্দিন। মামলার কার্যক্রম চলাকালে তিন আসামি মারা যান। ২০০০ সালের ৯ মে আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হয়।
আলোচিত এ মামলার মোট সাক্ষী ১৬৭ জন। গত বছরের ১৪ জানুয়ারি ৫৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ড. অনুপম সেন, সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন ও হেলাল উদ্দিন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী মামলায় সাক্ষ্য দেন।
গত বছর ২০ জানুয়ারি আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। মামলার রায়ে আসামি সাবেক ৫ পুলিশ সদস্যকে মৃত্যুদন্ড দেন আদালত।