মুজিব বর্ষে দেশের সব অফ-গ্রিড অঞ্চল আলোকিত হবে

415

॥ সৈয়দ শুকুর আলী শুভ ॥
ঢাকা, ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : মুজিব বর্ষ উপলক্ষে অফগ্রিড বিশেষ করে চর ও দ্বীপাঞ্চলে থাকা জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে, ৯৯ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বাকি ১ শতাংশকেও এই সুবিধার আওতায় আনা হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, এমপি বাসসের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী’তে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সাল নাগাদ দেশের প্রতিটি বাড়ি আলোকিত করার লক্ষ্য পুনর্নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সরকার সারাদেশে সব জায়গায় সুষম বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়ায় বর্তমানে দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি বাড়ি আলোকিত করাই আমাদের লক্ষ্য। আমাদের ভিশন যৌক্তিক ও সহনীয় মুল্যে সকল জনগণের জন্য নির্ভরযোগ্য ও মানসম্মত বিদুৎ সরবরাহ করা। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ খাতের সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে সকলের জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা।’
বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অফিস সুত্রে জানায়, দেশের রাঙ্গাবালি উপজেলা, পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত অফ-গ্রিড অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছনো কঠিন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাও বিদ্যুতের আওতায় আনা হচ্ছে।
সুত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরের অফ-গ্রিড উপজেলাগুলোর দ্বীপ অঞ্চলসমুহে মুজিব বর্ষের মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড ১০০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে। গ্রিডের ৪৬১ টি উপজেলা ১০০ শতাংশ বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে এবং মুজিব বর্ষে ১০৫৯ টি গ্রাম একই প্রোগ্রামের আওতায় আসবে।
সূত্রমতে, পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড চর কুকড়ি মুকড়ি, তাজুমউদ্দিন, রাঙ্গাবালী, চর কাজল, চর বিশ্বাস, মুজিব নগর ও অন্যান্য প্রত্যন্ত গ্রামগুলোকে গ্রিডে যুক্ত করতে এবং বিদ্যুতায়নের আওতায় আনতে কাজ করছে। অফ-গ্রিড অঞ্চলগুলো দেশের ৬৮ টি উপজেলায় অবস্থিত।
এ ছাড়াও, নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে সারাদেশে সেবা দিয়ে জনগণের কাছে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার সময়পযোগী, বাস্তবসম্মত ও টেকসই পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে গত ১২ বছরে ১৯,৪৭৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১১৪ টি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪,৪২১ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে, যা ২০০৯ সালে ছিল মাত্র ৪৯৪২ মেগাওয়াট।
এতে বলা হয়েছে, ট্রান্সমিশন লাইনের ধারণক্ষমতা ১২,৪৯৪ সার্কিট লাইন কিলোমিটারে বেড়েছে এবং বিতরণ লাইন ৫৯৪,০০০ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। মোট বিদ্যুৎ গ্রাহকের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩.৯ কোটিতে এবং মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৫১২ কেভি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে সেচ সংযোগের সংখ্যা বেড়ে ৩.৬২২ লাখে দাঁড়িয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ১৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮.৭৩৩ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
ইতিমধ্যে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় ৮৭ টি প্রকল্প ছিল। এর মধ্যে ৩৪ টি প্রকল্প অগ্রাধিকার তালিকায়, ২৬ টি প্রকল্প মধ্যম অগ্রাধিকার তালিকায় এবং ২৭ টি প্রকল্প অর্থ মন্ত্রণালয়েরর নি¤œ অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দক্ষতার সাথে বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের জন্য এডিপির বরাদ্দ ২৬,৫৪৬ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ সেলের মহাপরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ সরবরাহে দেশকে স্বাবলম্বী করতে এবং প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে।
তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে, তবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৪,৪২১ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে।
রাষ্ট্র পরিচালিত টেকসই এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি শক্তি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানি এবং জ্বালানি দক্ষতা কার্যক্রম বিকাশের জন্য নিযুক্ত হয়েছে। এটি সম্প্রতি ৫০০ মেগাওয়াট সৌরভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের জন্য একটি কর্মসূচি চালু করেছে।