ব্রিসবেন টেস্ট: কোহলিকে ছাড়াই সিরিজ জিতলো ভারত

234

ব্রিসবেন, ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : উইকেটরক্ষক ঋসভ পান্থের অপরাজিত ৮৯ রানের সুবাদে ব্রিসবেনে সিরিজের চতুর্থ ও শেষ টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে কোহলিবিহীন ভারত। যার মাধ্যমে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিলো সফরকারী টিম ইন্ডিয়া। প্রথম টেস্টের পর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে দেশে ফিরে যান নিয়মিত অধিনায়ক ও দলের সেরা ব্যাটসম্যান কোহলি। কোহলি উপস্থিতিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৬ রানে অলাআউট হয়ে সমালোচনায় বিধ্বস্ত ছিলো ভারত। তবে দ্বিতীয় টেস্টে নাটকীয় জয়ে সিরিজে সমতা আনে আজিঙ্কা রাহানের নেতৃত্বাধীন ভারত। তৃতীয় টেস্ট ড্র হলে, চতুর্থ টেস্টেও নাটকীয়ভাবে জিতে বোর্ডার গাভাস্কার ট্রফি ধরে রাখে রাহানের দল।
টেস্টটি জিততে পঞ্চম ও শেষ দিনে ভারতকে করতে হতো ৩২৪ রান। আজ ওভার বাকী ছিলো ৯৮ দশমিক ১। আর অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিলো ১০ উইকেট। তাই জয়-হার ও ড্র, যেকোন কিছুর নাটকীয়তার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো সিরিজের চতুর্থ ও শেষ টেস্টের শেষ দিন। পান্থের সাথে ৯১ রানের ইনিংস খেলে ভারতের জয়ে অবদান রাখেন তরুন ওপেনার শুভমান গিল।
৩২৮ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে চতুর্থ দিন শেষে বিনা উইকেটে ৪ রান করেছিলো ভারত। আজ দিনের নবম ওভারে রোহিত শর্মাকে বিদায় দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে দারুন ব্রেক থ্রু এনে দেন পেসার প্যাট কামিন্স। ৪ রান নিয়ে শুরু করে ৭ রানে বিদায় নেন রোহিত।
দলীয় ১৮ রানে রোহিতের বিদায়ের পর শক্তভাবে দলের হাল ধরেন আরেক ওপেনার গিল ও তিন নম্বরে চেতেশ্বর পূজারা। ভারতের রানের চাকা ঘুড়িয়েছেন গিল। আর অন্য প্রান্তে দেয়াল হয়ে থাকতে মনোযোগি ছিলেন পূজারা।
তাই মধ্যাহ্ন-বিরতি পর্যন্ত আর কোন উইকেট হারায় ভারত। এ সময় ৩৮ ওভারে ১ উইকেটে ৮৩ রান করে টিম ইন্ডিয়া। ৯০ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া গিল ৬৪ রানে অপরাজিত ছিলেন। ৮ রানে পূজারা।
বিরতির পরও রানের চাকা সচল রেখে প্রথম সেঞ্চুরির দিকে ছুটচ্ছিলেন গিল। কিন্তু নার্ভাস-নাইন্টিতে থামতে হয় তাকে। অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার নাথান লিঁওর বলে স্লিপে স্টিভেন স্মিথকে ক্যাচ দিয়ে আউট হন গিল। ১৪৬ বলে ৮টি চার ও ২টি ছক্কায় ৯১ রান করেন গিল। দ্বিতীয় উইকেটে পূজারার সাথে ২৪০ বলে মহামূল্যবান ১১৪ রান যোগ করেন গিল।
গিলের আউটের পর ক্রিজে পূজারার সঙ্গী হন ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক রাহানে। ভালো শুরু করেও ২৪ রানে থেমে যান তিনি। অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্সের বলে আপার কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন রাহানে।
দলীয় ১৬৭ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে রাহানের আউট ভারতকে চাপে ফেলে দেয়। কারন তখনও দিনের খেলা ৪৩ দশমিক ১ ওভার বাকী ছিলো।
ততক্ষণে উইকেটে দেয়ালের প্রাচীর গড়ে তুলেন পূজারা। ১৯৬ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৮তম হাফ-সেঞ্চুরি করেন পূজারা। পুজারা এক প্রান্ত আগলে রাখায় চালকের আসনেই থাকে ভারত।
পূজারাকে আউট করতে মাথার ঘাম পা’এ ফেলানো অস্ট্রেলিয়া, অবশেষে সাফল্যের দেখা পায়। দলীয় ২২৮ রানে পূজারার কচ্ছপ ইনিংসটি থামান কামিন্স। ৩১৪ মিনিটে ২১১ বল খেলে ৭টি চারে ৫৬ রান করেন পূজারা। পান্থ-পূজারা ১৪১ বলে ৬১ রানের জুটি গড়েন।
পূজারা যখন আউট হন, তখন ১১৮ বলে ১০০ রানের প্রয়োজন ছিলো ভারতের। উইকেটে পান্থের সাথে নতুন ব্যাটসম্যান মায়াঙ্ক আগারওয়াল। এ অবস্থায় ম্যাচ জয়ের স্বপ্নও দেখছিলো ভারত। ততক্ষনে ৮৪ বলে ৩৪ রান তুলে উইকেটে পাকাপাকিভাবে সেট হয়ে আছেন পান্থ।
পান্থ উইকেটে থাকলেও ম্যাচ বের করে আনার সুযোগ থাকছে ভারতের। কারন প্রয়োজনীয় সময়ে দ্রুত রান তুলতে পারেন তিনি। সেটিই করেছেন পান্থ। আগারওয়ালের সাথে ৩৯ বলে ৩৭ রান যোগ করে দলকে জয়ের পথে টিকিয়ে রাখেন পান্থ। এই জুটিতে ২৪ বলে ২৩ রান যোগ করে।
আগারওয়ালকে ৯ রানে থামিয়ে আবারো অস্ট্রেলিয়ার খেলায় ফেরানোর পথ দেখান কামিন্স। এমন অবস্থায় ম্যাচ জয়ের জন্য শেষ ৮০ বলে ৬৩ রানের প্রয়োজন পড়ে ভারতের।
সাত নম্বরে নামা ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে ওয়ানডে স্টাইলে খেলতে থাকেন পান্থ। ৫৫ বলে ৫৩ রানের জুটি ভারতকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিতে যায় পান্থ-সুন্দর।
প্রথম ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ৬২ রান করা সুন্দর এবার ২২ রান করেন। যা পান্থকে সঙ্গ দেয়ার জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। লিঁওর বলে বোল্ড হবার আগে ২টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন সুন্দর। তখন জয় থেকে ১০ রান দূরে সফরকারীরা।
সুন্দরের পর ২ রান করা শারদুল ঠাকুরকে শিকার করেন অস্ট্রেলিয়ার হ্যাজেলউড। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করে ভারত। জয় থেকে মাত্র ৩ রান দূরে ছিলো টিম ইন্ডিয়া।
৯৬তম ওভারের শেষ বলে হ্যাজেলউডকে লং-অফ দিয়ে চার মেরে ভারতকে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের স্বাদ পাইয়ে দেন পান্থ। পুরো সিরিজে ইনজুরি বিধ্বস্ত দল হওয়ায়, ২০ জন খেলোয়াড়কে খেলিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়া ভারতের জন্য এমনভাবে সিরিজ জয় ঐতিহাসিকই বটে।
১৮০ মিনিট ক্রিজে থেকে ৯টি চার ও ১টি ছক্কায় অপরাজিত ৮৯ রান করেন পান্থ। তাই ম্যাচ সেরাও হয়েছেন তিনি। ২১ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কার পান অস্ট্রেলিয়ার কামিন্স।
২০১৮ সালে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে চার ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো কোহলির নেতৃত্বাধীন দলটি। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দ্বিতীয়বারের মত টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেলো ভারত। তাই বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি ধরে রাখতে সক্ষম হয় রাহানে-রোহিতরা।
এই সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো অস্ট্রেলিয়া। আর তিন ম্যাচের টি-টুয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিলো ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
অস্ট্রেলিয়া : ৩৬৯ ও ২৯৪, ৭৫.৫ ওভার (স্মিথ ৫৫, ওয়ার্নার ৪৮, সিরাজ ৫/৭৩)।
ভারত : ৩৩৬ ও ৩২৯/৭, ৯৭ ওভার (গিল ৯১, পান্থ ৮৯*, কামিন্স ৪/৫৫, কামিন্স ৪/৫৫)।
ফল : ভারত ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ঋসভ পান্থ (ভারত)।
সিরিজ সেরা : প্যাট কামিন্স (অস্ট্রেলিয়া)।
সিরিজ : চার ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলো ভারত।