নাটোরের খামারে তিন লক্ষাধিক কোরবানীর পশু

210

নাটোর, ১৪ আগস্ট, ২০১৮ (বাসস) : আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে নাটোর জেলায় তিন লাখ পাঁচ হাজার ৫১২টি কোরবানীর পশু প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। এসব পশুর বাজার মূল্য অন্তত ৬শ’ কোটি টাকা। এবার জেলায় প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার কোরবানীর পশু জবাই হবে বলে আশা করছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। অর্থাৎ এক লাখ ৬৫ হাজার উদ্বৃত্ত পশু চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ১২ হাজার ১৫০টি পশুর খামার রয়েছে। এরমধ্যে নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলায় এক হাজার ১২৫টি, লালপুরে দুই হাজার ১২৬টি, সিংড়ায় দুই হাজার ৫৫০টি, গুরুদাসপুরে দুই হাজার ৬৫০টি, বাগাতিপাড়ায় এক হাজার ৯১৪টি ও বড়াইগ্রামে এক হাজার ৭৮৫টি। এসব খামারে ঈদ উপলক্ষ্যে বিক্রির উপযোগী মজুদ পশুর সংখ্যা হচ্ছে ষাঁড় ৫১ হাজার ৫৩৭টি, বলদ ১০ হাজার ৮২৪ টি, গাভী ১৫ হাজার ৭৭৩টি, ছাগল এক লাখ ৯৫ হাজার ৪১৩টি, ভেড়া ২৯ হাজার ৪৮৯টি ও মহিষ রয়েছে এক হাজার ৪৭৫টি।
এবার জেলার সবচেয়ে বৈচিত্রময় ও আকর্ষণীয় গরুর খামার করেছেন সদর উপজেলার ডালসড়ক এলাকার চাল ব্যবসায়ী আলহাজ্ব রেকাত আলী। এই খামারের ১০১টা গরুর মধ্যে বেশীরভাগ বিদেশী। এরমধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের শাহীওয়াল, ভারতের রাজস্থান ও উলুবাড়িয়া জাতের গরু। লাল, সাদা, কালো রঙের এসব এক একটি গরু লম্বায় ৯ ফুট ও উচ্চতায় ৬ ফুটেরও বেশি হয়েছে। বিগত সময়ে বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীকে এসব গরু দেখার কৌতুহল নিয়ে খামারটি পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। কোরবানীর হাটে তোলার আগেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা গরু কিনতে খামারে ভিড় করছেন। ইতোমধ্যে কুষ্টিয়ার বালিয়াপাড়া এলাকার বিশিষ্ট গরু ব্যবসায়ী লিয়াকত মন্ডল ৫৫টি গরু কিনে নিয়েছেন। অন্য গরুগুলোও খামার থেকেই বিক্রির পর্যায়ে রয়েছে। ধান কলের পাশাপাশি গরুর খামার অত্যন্ত লাভজনক বলে জানালেন রেকাত আলী।
লালপুর উপজেলার বিলমাড়িয়া এলাকার মোঃ শাহজালাল কয়েক বছর ধরে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার করে আসছেন। এবার তাঁর খামারে গরুর সংখ্যা ২৫টি। এসব গরু কেনা এবং খামারে খাবার ও পরিচর্যা খাতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। ঢাকার কমলাপুর হাটে এসব গরু বিক্রির পরিকল্পনাকারী শাহজালাল বলেন, আশা করছি অন্তত ১৮ লাখে বিক্রি করতে পারবো।একই উপজেলার গৌরিপুর ঈশ্বরদী এলাকার খামারী আকসেদ আলী এবার কোরবানীর ঈদকে উপলক্ষ্য করে ১৫টি গরু প্রস্তুত করেছেন।
খামারীরা জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরার্মশে পুষ্টিকর খাবার- খৈল, গম, ভূষি,ছোলাসহ সুবজ ঘাস খাইয়ে খুব সহজেই গবাদী পশু মোটাতাজা করেছেন। ক্ষতিকর স্টেরয়েড বা হরমোন ব্যবহার করা হয়নি।
কোরবানীর পশু বিক্রির জন্যে জেলায় ১৪টি পশুর হাট প্রসিদ্ধ। জেলার সবচেয়ে বড় কোরবানীর পশুর হাট বসে রোববার নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া আর বড়াইগ্রামের মৌখাড়া হাট বসে বৃহস্পতিবার। এছাড়া সদর উপজেলার হয়বতপুর, নলডাঙ্গা উপজেলার নলডাঙ্গা ও মোমিনপুর এবং সিংড়া উপজেলার সিংড়া হাটও কোরবানীর পশুতে জমজমাট। পশুর হাটগুলোতে শুরু হয়েছে পুরোদমে কেনা-বেচা।
তবে ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রাম, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারী ক্রেতারা কিছু কিছু খামার থেকে কোরবানির পশু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। অনেক স্থানীয় ক্রেতারাও সরাসরি খামার থেকে পশু কিনছেন। শহরের আলাইপুর এলাকার কাজী তৌহিদুল আলম জানান, খামার থেকে পশু কিনলে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঐ খামারেই পশু রাখার সুবিধা পাওয়া যায় আর হাটে যাওয়ার কষ্টও হয় না। তাই প্রতিবছরের মত এবারো খামার থেকেই গরু কিনলাম।
কোরবানরি পশুর হাটগুলোতে ভেটেরিনারি সার্জনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের পশু চিকিৎসক দল কাজ করছে। স্টেরয়েড ও হরমোন ব্যবহার করে বড় করা পশু কিংবা অসুস্থ পশু হাটে কেনাবেচা না করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কাজ করছে এই দল। রোববার নাটোরের তেবাড়িয়া হাট থেকে গরু কিনতে আসা ক্রেতা জুলফিকুল হায়দার বাবু বলেন, বিনা পয়সায় গুরুত্বপূর্ণ সেবা। তাই পশু চিকিৎসক দলের পরামর্শ নিয়েই গরু কিনলাম। এছাড়া ক্রেতা-বিক্রেতাদের সচেতনতার জন্যে ইতোমধ্যে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। পশুর হাটে জাল টাকার ব্যবহার রোধ করার জন্যে ব্যাংকারদের সমন্বয়ে গঠিত টিম গুরুত্বপূর্ণ হাটগুলোতে কাজ করছে বলে জানালেন নাটোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক গোলাম রাব্বি।
লালপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কোনরকম ক্ষতিকর উপাদান ছাড়া প্রাকৃতিক খাবারে পশু হ্রষ্টপুষ্টকরন নিশ্চিত করতে ইউনিয়ন পর্যায়ের খামারগুলোতে টিম নিয়মিত মনিটরিং করেছে। এই টিম পরিচর্যাসহ পশুর অসুস্থ্যতা নিরাময়ে পরামর্শও দিয়েছে। পশুসম্পদ কার্যালয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। পশু খাদ্য ও পশু ঔষধের দোকানগুলো পরিদর্শন করে আমরা নিরাপদ খাদ্য আইন অনুসরণে বিক্রেতাদের উদ্বুদ্ধও করেছি।
জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বেলাল হোসেন বাসসকে বলেন, জেলায় এবার অন্তত ছশ’ কোটি টাকার পশু কোরবানীর জন্যে প্রস্তুত হয়েছে। জেলার সকল পর্যায়ের খামারে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত পশু উৎপাদনে পশু সম্পদ বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মীরা দলগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিরলসভাবে কাজ করেছে। আশাকরি এ ব্যাপারে আমরা সফলতা লাভ করেছি।