বাসস ক্রীড়া-৫ : অস্ট্রেলিয়ায় টেনিসের শীর্ষ তারকাদের জন্য কঠোর কোয়ারেন্টাইন অপেক্ষা করছে

95

বাসস ক্রীড়া-৫
টেনিস-অস্ট্রেলিয়ান ওপেন
অস্ট্রেলিয়ায় টেনিসের শীর্ষ তারকাদের জন্য কঠোর কোয়ারেন্টাইন অপেক্ষা করছে
মেলবোর্ন, ১২ জানুয়ারি ২০২১ (বাসস) : অস্ট্রেলিয়ান ওপেনকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহে আসতে শুরু করবেন বিশ^ সেরা টেনিস তারকারা। বিশ^জুড়ে করোনা মহামারীতে বিধ্বস্ত প্রতিকূল পরিবেশের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে চলেছে উন্নত দেশগুলো। অস্ট্রেলিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। সে কারনেই অস্ট্রেলীয় সরকারের কঠোর কোভিড-১৯ প্রোটোকল ভঙ্গকারীর জন্য চূড়ান্ত শাস্তি অপেক্ষা করছে। যে কারনে অস্ট্রেলিয়ায় আগত শীর্ষ টেনিস তারকাদের প্রতিটি মুহূর্ত বেশ সতর্কতার সাথে চলতে হবে।
বছরের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সাধারানত প্রথা অনুযায়ী জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা মহামারীর কারনে এ বছর তা তিন সপ্তাহ পিছিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী টেনিস অস্ট্রেলিয়া প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল খেলোয়াড়রা মধ্য-ডিসেম্বরের মধ্যে মেলবোর্নে এসে পৌঁছাবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক যাত্রীদের ভ্রমন নিষেধাজ্ঞায় ভিক্টোরিয়ার স্থানীয় সরকার টুর্নামেন্টটি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়। তবে খেলোয়াড়দের মানসিক ও শারিরীক ভাবে চাঙ্গা করে তোলার জন্য অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের আগে বেশ কয়েকটি ডব্লিউটিএ ও এটিপি টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় করোনা মহামারীর দ্বিতীয় প্রবাহের অন্যতম ক্লাস্টার এরিয়া ছিল মেলবোর্ন। যে কারনে চার মাসের জন্য এখানে কঠোর লক ডাউন ঘোষনা করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন আয়োজন নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করতে হয়েছে স্থানীয় টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির। সকলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এই আলোচনায় কখনো কখনো খেলোয়াড়দেরও অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল।
বিশেষ করে সরকারের বেঁধে দেয়া ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন সময়ে খেলোয়াড়দের অনুশীলন নিয়ে একটি সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে সেটা শিথিল করে দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘন্টা করে খেলোয়াড়দের অনুশীলনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে সবকিছুই কঠোর জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থেকেই করতে হবে।
এরপরও বিশে^র শীর্ষ খেলোয়াড়রা গত বছরের ইউএস ও ফ্রেঞ্চ ওপেনের তুলনায় কঠোর প্রোটোকলের মধ্যেই পড়তে যাচ্ছেন। প্রতিদিন নিজ নিজ হোটেল কক্ষে ১৯ ঘন্টা কোয়েরান্টাইনে অবশ্যই থাকতে হবে। কেউ কেউ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এতে করে খেলোয়াড়দের পারফরমেন্সে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে।
নারী বিভাগে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন সোফিয়া কেনিন স্বীকার করেছেন পুরো পরিস্থিতি মোটেই অনুকুলে নেই। তার মতে, অস্ট্রেলিয়ার আইনগুলো বেশ কঠোর, যদিও এটা সকলের জন্যই প্রযোজ্য।
স্বাস্থ্য প্রোটোকল ভঙ্গকারীর জন্য চড়া মূল্যের জরিমানা গুনতে হবে। একইসাথে আরো অতিরিক্ত সময়ে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। বিশে^র পাঁচ নম্বর তারকা ইউক্রেনের এলিনা সভেতলিনা এ ধরনের কঠোর পরিবেশে মানসিক ভাবে শক্তিশালী থাকার জন্য একজন মনস্তাত্বিক নিয়োগ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি এই ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে মানসিক ভাবে শক্ত থাকা সবচেয়ে জরুরী।’
ছয়বারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন বিজয়ী রজার ফেদেরার ইতোমধ্যেই টুর্নামেন্ট থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ কারনে মেলবোর্নে তার টানা ২১ বার অংশগ্রহণের রেকর্ড ভঙ্গ হলো। এমনিতেই ইনজুরির কারনে গত বছরের প্রায় পুরোটা সময় কোর্টের বাইরে ছিলেন এই সুইস তারকা। নতুন বছরে ফিরে আসার ইঙ্গিত দিলেও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে তার না খেলার সিদ্ধান্ত অনেকেই বাঁকা চোখে দেখেছে। সমালোচকরা বলতে শুরু করেছে কোয়ারেন্টাইন আইন থেকে বাঁচার জন্যই ফেদেরার না খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত বছর ৩৯ বছর বয়সী ফেদেরারকে দু’দফা হাঁটুর অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। ১২ মাস আগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নেবার পর আর কোর্টে নামেননি তিনি।
এদিকে আয়োজক সূত্র নিশ্চিত করেছে শীর্ষ তারকা নোভাক জকোভিচ, রাফায়েল নাদাল, সেরেনা উইলিয়ামস ও নাওমি ওসাকাসহ শীর্ষ প্রায় ৫০ জন খেলোয়াড়ের একটি বহর মেলবোর্নের পরিবর্তে এডিলেডে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনকে সামনে রেখে কোয়ারেন্টাইন সময়ে তারা বেশ কিছু প্রদর্শনী ম্যাচে অংশ নিবেন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন প্রধান ক্রেইগ টিলে জানিয়েছেন ৮০টি চার্টার ফ্লাইটে ১২৭০ জনের দল চলতি সপ্তাহে মেলবোর্ন ও এডিলেডে এসে পৌঁছাবে। এক সাক্ষাতকারে টিলে বলেছেন, ‘পুরো বিষয়টি বেশ অস্বস্তির। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কেউই আগে কখনো পড়েনি। তবে আশা করছি সবকিছুই ভালভাবে সম্পন্ন হবে।’
বাসস/নীহা/১৭১০/স্বব