বাসস দেশ-১ : বরিশালে সরকারের দেয়া ভাতায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে

176

বাসস দেশ-১
বরিশাল- বয়স্ক-বিধবা-প্রতিবন্ধী-ভাতা
বরিশালে সরকারের দেয়া ভাতায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে
॥ শুভব্রত দত্ত ॥
বরিশাল, ১১ জানুয়ারি, ২০২১ (বাসস) : জেলায় সরকারের দেয়া ভাতায় সমাজের অবহেলিত, ও দুস্থ মানুষের জীবনে অসহায়ত্বের বেদনা ঘুচে যাচ্ছে প্রায় সর্বস্তরে। বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনমান উন্নয়ন হচ্ছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে মাস শেষে সরকারের দেয়া ভাতায় তাদের পরিবারে ও সমাজে মর্যাদা বেড়েছে। তাদের পরিবারে মিলছে ঠাঁই। সমাজে বঞ্চিত, অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়ন সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এ খাতে ১৮টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চিহ্নিত করে তা বাস্তবায়নে নগদ টাকা ভাতা হিসেবে দেয়া হচ্ছে। এসব ভাতার মধ্যে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা ও অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা অন্যতম।
বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র আরো জানায়, এ কর্মসূচির আওতায় বিভাগে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ও অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ২০২০ সালের হিসেব অনুযায়ী সর্বমোট প্রায় ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৭শ’ নারী-পুরুষ এ ভাতা সুবিধা ভোগ করছে। বিভাগে বয়স্ক ভাতা দেয়া হচ্ছে সর্বমোট প্রায় ২ লাখ ২৭ হাজার ৫’শ ৩৮ জন পুরুষ ও নারীকে। এরমধ্যে বরিশাল জেলায় ভাতা ভোগীর সংখ্যা ৮৬ হাজার ৪’শ ২৮ জন, পটুয়াখালীতে ৫১ হাজার ২’শ ৩৬ জন, ভোলা জেলায় ৫৭ হাজার ৪’শ ৩ জন, পিরোজপুর জেলায় ৩৮ হাজার ২’শ ৩৪ জন, বরগুনা জেলায় ৩০ হাজার ২’শ ৭২ ও ঝালকাঠি জেলায় রয়েছেন প্রায় ২৩ হাজার ৯’শ ৬৫ জন।
বিভাগে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা পাচ্ছেন সর্বমোট প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ৫’শ ৯৯ জন। এরমধ্যে বরিশাল জেলায় ভাতা পান ২৯ হাজার ৩’শ ৬৩ জন, পটুয়াখালীতে ২৪ হাজার ৭’শ ৫২ জন, ভোলায় ২৩ হাজার ৭’শ ৫২, পিরোজপুরে ১৮ হাজার ৫’শ ৪৭, বরগুনায় ১৪ হাজার ৬’শ ৭৮ ও ঝালকাঠি জেলায় ১০ হাজার ৫’শ ৭জন।
এদিকে, বিভাগে সর্বমোট প্রায় ৬৫ হাজার ৫’শ ৬৩ জন অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধীকে এ ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এরমধ্যে বরিশাল জেলায় ১৭ হাজার ৯’শ ৭২, পটুয়াখালীতে ১২ হাজার ২’শ ২৬, ভোলায় ১৩ হাজার ২৬, পিরোজপুরে ৮ হাজার ৭”শ ৭, বরগুনায় ৮ হাজার ১১ জন ও ঝালকাঠি জেলায় ৫ হাজার ৬’শ ২১ জন অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা ভোগীর সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা হবে। যা প্রস্তাবনা আকারে বর্তমান সরকারের কাছে বিভাগীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর প্রেরণ করেছেন।
নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শ্রী দয়ানন্দ বালা জানান, তার ৪ ছেলে, ১ মেয়ে বিবাহিত। তার বয়স প্রায় ৮৫ বছর। কিন্তু সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ সহায়তা বিভিন্ন সময় চিকিৎসা নেয়াসহ নাতী-নাতনীদের কিছু উপহারও দিতে পারছেন।
বিধবা আখিঁ বেগম বেগম বলেন, বিভিন্ন অফিস-আদালতে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন তিনি। যা রোজগার করি তাতে বেকার ১ ছেলে ও বড় ছেলের বিধবা স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালানো কঠিন। সরকারের দেয়া এ বাড়তি বিধবা ভাতা আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন।
জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের বিহারীপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মো. সাহেব আলী হাওলাদার বলেন, তার ১ ছেলে শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মো. নজরুল ইসলাম (২২)। ছেলে নজরুল প্রতিবন্ধী ভাতা পেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছে। বিগত ৮ বছর যাবত ভাতা পাচ্ছে প্রতিবন্ধী নজরুল।
এবিষয়ে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর’র সহকারী পরিচালক মো. জাবির আহমেদ বলেন, সমাজ সেবা অধিদপ্তর জরিপের মাধ্যমে ডাটা এন্ট্রি করে সব ধরনের প্রতিবন্ধী নাগরিককে পরিচয়পত্র দেবে। যারা পরিচিত বা অভিহিত হবেন ‘সুবর্ণ নাগরিক’ হিসেবে।
এব্যপারে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আল-মামুন তালুকদার বলেন, বর্তমান সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি ছাড়াও অসহায় ও অসচ্ছল জনগণের মাঝে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার সেবা প্রদান করছেন। যা ভবিষ্যতে দেশের আপামর জনগণের মাঝে মাইল ফলক হয়ে থাকবে।
এব্যপারে বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক স্বপন কুমার মুখার্জী বলেন, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা ও অর্থ বরাদ্ধ প্রতিবছরই বাড়ছে। ভবিষ্যতেও বাড়বে। এ কর্মসূচির আওতায় যাদের আনা হয়েছে তারা এক সময় খুবই অবহেলিত ছিল। আজ এ সুবিধার আওতায় তারা সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলে বর্তমান সরকার শুধু তার নির্বাচনী ওয়াদাই পূরণ করছে না। একটি টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রের ভীতও মজবুত করছেন। এ কর্মসূচির মাধ্যমে অস্বচ্ছল পরিবারগুলো যে সাহায্য পাচ্ছে তাতে তাদের পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় ও সামাজিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাসস/এনডি/সংবাদদাতা/১০৪৩/নূসী