রূপপুর থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনে ১০৯৮২ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন

704

ঢাকা, ১০ এপ্রিল, ২০১৮ (বাসস) : জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদর নির্বাহী কমিটি (একনেক) আজ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য অবকাঠামোর উন্নয়নে ১০ হাজার ৯৮২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
একনেক চেয়ারপার্সন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শেরেবাংলানগরে এনইসি’র চলতি অর্থবছরর ২২তম সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ ন হ মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের ব্রিফকালে বলেন, বৈঠকে ১৫,৬৮৩ দশমিক ২৪ কোটি টাকায় মোটি ১৬টি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।
মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫,৭০৭ দশমিক ৯৭ কোটি সরকারি তহবিল, ১,২৩৫ দশমিক শূন্য ৭ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব তহবিল এবং অবশিষ্ট অর্থ প্রকল্প সহায়তা খাত থেকে জোগান দেয়া হবে।
পরিকল্পনমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের পাওয়ার গ্রিড লিমিটেড (পিজিসিবি) ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ১০,৯৮১ দশমিক ৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশের আণবিক শক্তি কমিশন এবং রাশিয়ার রোসাটম’র মধ্যে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়। এ কেন্দ্রের দুই ইউনিটের মধ্যে ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিটের উৎপাদন ২০২২ সালের অক্টোবর এবং অপর ১২শ’ মেগাওয়াটের ইউনিটের উৎপাদন ২০২৩ সালের মধ্যে শুরু হবে।
এই প্রকল্পে সরকর ১,৫২৭ দশমিক ৬৪ কোটি, পিজিসিবি ১,২৩৫ দশমিক ৭৫ কোটি এবং ভারত থেকে ঋণ হিসেবে ৪,২১৯ দশমিক শূন্য ৪ কোটি টাকা দেয়া হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, এই বিদ্যুৎ সঞ্চালন অবকাঠামো প্রকল্প ৩ বিভাগের ১৩ জেলার ৩৭ উপজেলায় বাস্তবায়িত হবে।
প্রকল্পে ৬০৯ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইন, রূপপুর-বাঘাবাড়ী ডাবল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইন ও প্রায় ১২টি বে-এক্সটেনশন নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ শেষ হলে দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ উৎপাদন সাশ্রয়ী হবে। এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনো জটিলতা হবে না। কারণ, রাশিয়া এ দেশ থেকে পারমাণবিক বর্জ্য ফেরত নেবে।

বৈঠকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সিগন্যালিং সিস্টেমসহ রেল লাইন নির্মাণ ও সংস্কারে ৩৩৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় সাপেক্ষে একটি প্রকল্পও অনুমোদন করা হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
প্রকল্পটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্বিক পরিবহন ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করবে। এ প্রকল্পের আওতায় ঈশ্বরদী বাইপাস থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় ২৬. ৫২ কিলোমিটার রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। এতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিরাপদ ও দ্রুত মালবাহী রেল সেবা চালু হবে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের আয় বাড়বে।
বৈঠকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো- টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে চার শ ১০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে জনপ্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প, মাদারীপুরের শিবচরে ১৮২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন, ১১৫ কোটি ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নারায়ণগঞ্জ বন্দর ও চট্টগ্রাম কালুরঘাটে মহিলা শ্রমজীবী হোস্টেল এবং পাঁচ শয্যার হাসপাতাল সুবিধাসহ শ্রমকল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। ৮২ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের কেন্দ্রীয় সম্প্রচার ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এবং ডিজিটালাইজেশন ও অটোমেশন (প্রথম পর্যায়) শক্তিশালীকরণ প্রকল্প ও ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে- ৩৮৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া-গোবিন্দপুর এলাকা রক্ষা প্রকল্প, ৮৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ৯৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে খুলনা শহরে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্প, ৬৫৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে কুমিল্লা জোনের জেলা মহাসড়কসমূহ যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, ৩১০ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নেত্রকোণা (ঠাকুরাণা)-কলমাকান্দা জেলা মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ৯৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এলেঙ্গা-ভুঞাপুর-চরগাবসারা সড়কের ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও একটি কালভার্ট পুনঃনির্মাণ এবং আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ৭৮ কোটি টাকা ২ লাখ টাকা ব্যয়ে চাঁদপুর জেলার গৌরীপুর-কচুয়া-হাজীগঞ্জ সড়কের মান উন্নয়ন প্রকল্প, ২০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন ভবন নির্মাণ প্রকল্প এবং ৪৬৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা কেরাণীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্র্রীয় কারাগার নির্মাণ প্রকল্প(তৃতীয় সংশোধিত)।